— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভোটের সকাল থেকেই বিরোধীদের অভিযোগের আঙুল ছিল তাঁদের দিকে। শাসকদলের ওই দুই নেতার এক জনকে ‘ছোট ভাইপো ও পুলিশমন্ত্রী’ এবং অন্য জনকে ‘গুন্ডা’ আখ্যা দিয়ে ‘সাবধান’ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু হাওড়া সদরের যুব সভাপতি কৈলাস মিশ্র ও উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরী সোমবার ‘ভোট করালেন’ নিজেদের ‘স্টাইলেই!’
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে হাওড়া কেন্দ্রে শুধু বালি ও উত্তর হাওড়া বিধানসভায় জোড়া ফুলের ফল আশানুরূপ হয়নি। বালিতে মাত্র ২৯৫ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। আর উত্তর হাওড়ায় ২৯৬১ ভোটে পিছিয়ে ছিল। ফলে, এ বারের নির্বাচনে ওই দুই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কত ভোট আসবে, সেই ‘আত্মসম্মান’ বজায় রাখার লড়াইয়ে নিজেদের ‘অস্তিত্ব’ বাঁচিয়ে রাখতেই গৌতম ও কৈলাস ‘মরিয়া’ ছিলেন বলে মত রাজনৈতিক শিবিরের।
অন্য দিকে, নিজেদের ভোট যাতে কোনও ভাবেই নষ্ট না হয়, সে দিকে নজর রাখতে অসুস্থ শরীরেও কপালে বড় লাল টিপ, সাদার উপরে ফুল ছাপ শাড়িতে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা বালির বাসিন্দা কণিকা গঙ্গোপাধ্যায় এলাকায় চক্কর দিয়েছেন। বললেন, ‘‘বিরোধীরা টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছেন। তা-ও এ বার আমাদের ভোট বাড়বে।’’ ভোটের সকালে লিলুয়ার এক বুথে যখন বিজেপির রথীন চক্রবর্তীর সঙ্গে তৃণমূলের বচসা চলছে, তখন কয়েক মিটার দূরে আবাসনের নীচের অফিসে বসে ছিলেন কৈলাস। অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সম্মতি মিলতেই ঢুকে দেখা গেল, একাই ‘ওয়ার রুম’-এর সোফায় বসে টেবিলে রাখা চারটি মোবাইল নিয়ে ‘ভোট-নিয়ন্ত্রণ’ করছেন ওই যুবক। ঘন ঘন ফোনে কখনও চোয়াল শক্ত করতে, কখনও হাসিমুখে ‘হাওয়া’ বুঝে নিয়ে কর্মীদের নির্দেশ দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মাঝেমধ্যে বলেছেন, ‘‘এ সব বরদাস্ত করব না। দেখে নিচ্ছি।’’ আবার আবাসনের নীচে থাকা দলবলকে ‘চাঙ্গা’ করতে বাইরে এসে বলেছেন, ‘‘সব কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে তো?’’
‘বিশেষ’ কোনও কাজ? ‘‘এজেন্টদের খাবার পৌঁছনো, ভোটারেরা যাতে সকলে বুথে যেতে পারেন— এই রকম কত কাজ রয়েছে...। সব দিকে নজর রাখতে হচ্ছে’’— দাবি কৈলাসের। পরক্ষণে এটাও বললেন, ‘‘দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন। তাঁকেও জানিয়েছি, সব ঠিকঠাক হচ্ছে, ফল ভাল হবে।’’ দুপুর ৩টের পরে আধ ঘণ্টার জন্য বেরোলেও ফিরে দাবি করেছেন, ‘‘দু’-তিনটি ক্যাম্প দেখে চলে এলাম। তার পরেও কি আমাকে দোষ দেবেন বিরোধীরা?’’ তবে উত্তরের সঙ্গে তাঁর মুচকি হাসিই যেন বুঝিয়ে দিল অনেক কিছু!
ভোটের সকাল থেকে অবশ্য ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন গৌতম। ফোন করলেই বলেছেন, ‘‘পরে দেখা হবে।’’ দেখা হল সেই বিকেলে। কপালে সিঁদুরের লাল টিপ। পকেটে প্রসাদী ফুল রাখা বিধায়ক সালকিয়া অরবিন্দ রোডে দাঁড়িয়ে দলীয় এজেন্টদের দ্রুত বুথে ঢোকার নির্দেশ দিচ্ছেন। বললেন, ‘‘সকালে মন্দিরে পুজো দিয়ে অফিসেই ছিলাম। বিকেলে একটু বেরোলাম।’’ তা হলে বিরোধীদের ‘গৌতম-বাহিনী’র দাপিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ? বিধায়কের উত্তর, ‘‘শুভেন্দু বলেছিলেন, এখানে ২০ হাজার ভোটে ওঁরা জিতবেন। তারই উত্তর দিতে সাধারণ মানুষ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।’’
এক সময়ে ‘দাপুটে’ নেত্রী বলে পরিচিত কণিকা এখন কার্যত ‘ঘরবন্দি’। যদিও ভোটের দুপুরে ভোট দিয়ে এসে বাড়ির সামনের বারান্দার বেঞ্চে বসেই বালির চৈতলপাড়ার আটটি বুথের গতিবিধিতে নজর রেখেছেন। তারই ফাঁকে ফোনে খবর নিয়েছেন বাকি এলাকার। বেলুড়ে এরিয়া কমিটির অফিসে বসে ভোট-নজরদারি চালিয়েছেন তাঁর সতীর্থ নেতা শঙ্কর মৈত্র-সহ অন্যেরা। সকলেরই বক্তব্য ছিল, ‘‘কিছু সমস্যা হলেও আমাদের নিশ্চিত ভোটারেরা এ বারে বেরিয়েছেন।’’