S. S. Ahluwalia

‘পরিযায়ী’ তকমা মোছার সুযোগ কি পাবেন সুরেন্দ্র

বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কেও জড়িয়েছেন সুরেন্দ্র। কখনও জাতীয় পতাকা তোলা নিয়ে বিতর্ক, কখনও তাঁর গাড়ির ধাক্কায় মহিলার জখম হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত , সুব্রত সীট

বর্ধমান ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৯
Share:

সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। — ফাইল চিত্র।

পাশের কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে টানাপড়েন চলছে বিজেপিতে। আসানসোলে সেই পরিস্থিতির মধ্যে প্রার্থী নিয়ে জোর চর্চা বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রেও। ভোটের মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে নাম ঘোষণা হওয়ার পরে লড়তে নেমে গত বার তুল্যমূল্য লড়াইয়ে বাজিমাত করেছিলেন বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তার পরে পাঁচ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে বার বারই উঠেছে ‘পরিযায়ী’ অভিযোগ, পড়েছে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার। গত কয়েক মাসে তাঁকে এলাকায় নানা কর্মসূচিতে দেখা গেলেও, এ বার এই কেন্দ্রে তাঁর শিকে ছিঁড়বে কি না, সংশয় দলের অন্দরে।

Advertisement

৩৪ বছরের সংসদীয় জীবনে সুরেন্দ্র রাজ্যসভা থেকে প্রথম লোকসভায় পা রেখেছিলেন ২০১৪ সালে। দার্জিলিঙে জয়ী হওয়ার পরেও অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে দেখা না মেলার সেই একই ধরনের অভিযোগ উঠত। গুরুঙ্গপন্থী মোর্চা নেতাদের আপত্তিতে সেখানে ২০১৯ সালে যে আর টিকিট মিলবে না, তা তিনি নিজেও বুঝে গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দল তাঁকে প্রার্থী করে বর্ধমান-দুর্গাপুরে। ২,৪৩৯ ভোটে জিতে যান তিনি। কিন্তু দার্জিলিং ও বর্ধমান-দুর্গাপুর, দুই কেন্দ্রের মধ্যে প্রকৃতিগত কোনও মিল না থাকলেও, বিজেপি সাংসদকে নিয়ে অনেক মিল ধরা পড়ে। দার্জিলিঙের মতো এখানে সাংসদের নামে ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার, নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। সিপিএমের তরফে ‘সাংসদের খোঁজে’ ২২ হাজার পোস্টকার্ড পাঠানো হয় তাঁর দিল্লির বাসভবনের ঠিকানায়। বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপির একাংশও তাঁকে ‘পরিযায়ী’ সাংসদ তকমা দিয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কেও জড়িয়েছেন সুরেন্দ্র। কখনও জাতীয় পতাকা তোলা নিয়ে বিতর্ক, কখনও তাঁর গাড়ির ধাক্কায় মহিলার জখম হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এলাকাবাসীর জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন বলে দাবি করেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা। তিনি জানান, দলমত নির্বিশেষে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের প্রতি মাসে সাহায্য করেন সাংসদ। করোনা-কালে, ওড়িশায় রেল দুর্ঘটনার পরে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গিয়ে তিনি সাহায্য করেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিজিতের কথায়, “করোনার জন্য দু’বছর তো কাজই করা যায়নি। তিনি (সুরেন্দ্র) নিয়মিত সংসদে হাজির থাকেন। একটি লোকসভার ৭টি বিধানসভা এলাকার ২,০৩৮টি বুথেই কি সংসদের পক্ষে পা রাখা সম্ভব? ওই সব পোস্টার আসলে তৃণমূলের লোকেরাই দিচ্ছেন।’’

Advertisement

যদিও বিজেপির একটি অংশের মতে, সাংসদ হিসেবে এলাকার মানুষের সঙ্গে আরও দৃঢ় যোগাযোগ তৈরি করা প্রয়োজন ছিল তাঁর। বিভিন্ন স্থানীয় আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর দরকার ছিল। কিন্তু কিছু কর্মসূচি ছাড়া গত পাঁচ বছরে কোনও আন্দোলনে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়নি। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দলকে। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, ‘‘বিজেপি সাংসদ যখনই দেখা দেন, তখনই বিতর্কের মুখে পড়েন। বিজেপির কর্মী-সমর্থকরাই ওঁকে নিয়ে অসন্তোষ জানান।’’

এই পরিস্থিতিতে, সুরেন্দ্র আবার এখানে টিকিট পাবেন কি না, চর্চা বিজেপি কর্মীদের মধ্যেই। জেলা বিজেপির একাংশ মনে করছেন, আর হয়তো এই কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করবে না দল। আবার একটি অংশের দাবি, সাংসদ দলের কোনও সূত্রে সঙ্কেত পেয়েই গত কয়েক মাসে এলাকায় গতিবিধি বাড়িয়েছেন। পুজোর পর থেকে জনসংযোগ শুরু করেছেন। মূলত দুর্গাপুরের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র, গলসি ও ভাতারে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।

সুরেন্দ্র বলছেন, ‘‘এক জন সাংসদের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তা আমি যথাযথ ভাবে পালন করি। যে কেউ সমস্যা নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং আমি সুরাহা করার চেষ্টা করি।’’ এই কেন্দ্রে আবার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, সে প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি আদতে উদ্বাস্তু। আমাদের আসল বাড়ি শিয়ালকোটে। সে ভাবেই, দল যদি প্রার্থী করে, যেখানে লড়তে বলবে, সেখানেই লড়ব।’’ প্রার্থিপদ নিয়ে অভিজিৎ তা বলেন, ‘‘এ সব দলের উপর তলার সিদ্ধান্ত। দল যাঁকেই প্রার্থী করুক, আমরা জেতার জায়গাতেই রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement