গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁর জোড়া খুনের ঘটনায় লেগেছে রাজনৈতিক হাওয়া। রাজ্যের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে যেমন সুর চড়াচ্ছে বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি (এসপি), তেমনই ‘মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি’র অভিযোগ তুলছে পদ্মশিবিরও। লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে বদায়ুঁ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বদায়ুঁ লোকসভা কেন্দ্রে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছে বিজেপি। অন্য দিকে, ওই কেন্দ্র আবার নিজেদের দখলে আনতে তৎপর এসপিও।
অখিলেশ যাদবের দল এসপি বদায়ুঁ লোকসভা কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া। এ বার তারা প্রার্থী করেছে শিবপাল সিংহ যাদবকে। বিজেপির তরফে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, এই কেন্দ্রে। তবে শোনা যাচ্ছে, বিজেপি বদায়ুঁতে আবারও সঙ্ঘমিত্রা মৌর্যকে প্রার্থী করতে পারে। সেই আবহেই ঘটে যায় বদায়ুঁর জোড়া খুনের মতো ঘটনা। এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে তোলপাড় রাজ্য।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বদায়ুঁতে প্রতিবেশী বিনোদ ঠাকুরের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের দুই ছেলেকে খুন করার অভিযোগ ওঠে সাজিদ মহম্মদ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার সময় বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিলেন সাজিদের ভাই জাভেদ। পুলিশ সূত্রে খবর, দু’জনেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে পুলিশ যখন সেখানে পৌঁছয় তখন দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই শুরু হয়। পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয় সাজিদের। গুলি লাগে জাভেদেরও। কিন্তু তিনি পালিয়ে যান। প্রায় ২৪ ঘণ্টা লুকিয়ে থাকার পর বুধবার রাতে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাজিদের ভাই।
এই ঘটনার পর থেকেই পাল্টে যায় বদায়ুঁর রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ঘটনাকে সপা সুপ্রিমো রাজ্যের ‘আইনশৃঙ্খলা ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ যদি সঠিক ভাবে কাজ করত তবে জীবন বাঁচানো যেত। তারা (বিজেপি সরকার) তাদের ব্যর্থতা এবং ত্রুটি আড়াল করতে এমন এনকাউন্টার করা হয়েছে।’’ বদায়ুঁর এসপি প্রার্থী শিবপাল বলেন, ‘‘ঘটনাটা খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে।’’
অন্য দিকে, বুধবারই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সঙ্ঘমিত্রা। ‘নিরপেক্ষ তদন্ত হবে’, এমন আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে পরিবারের পাশে বিজেপি রয়েছে, বলে জানিয়েছে সঙ্ঘমিত্রা। এমনকি, এই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ করেছেন এসপির বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘এসপি এই ইস্যুতে রাজনীতি করছে। কারণ ২০১৯ সালে এসপির দুর্গ ভেঙে দিয়েছে বদায়ুঁর মানুষ।’’
স্থানীয় এসপি নেতৃত্বের দাবি, ‘‘কেউ লোকালয়ের মধ্যে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে, তবে বুঝে নিতে হবে তাঁর কোনও আইনের ভয় নেই।’’ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বদায়ুঁ এসপির দখলে ছিল। তার মধ্যে সেলিম ইকবাল শেরভানি টানা চার বার এই কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে সেই আসন থেকেই জয়ী হন অখিলেশের ভাই ধর্মেন্দ্র যাদব। তবে ২০১৯ সালে এসপির থেকে এই আসন কেড়ে নেয় বিজেপি। ধর্মেন্দ্রকে হারিয়ে এই কেন্দ্রে জয় পান বিজেপির সঙ্ঘমিত্রা। আগামী ৭মে এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ রয়েছে।