—প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটে জোর টক্কর দেখেছে নন্দীগ্রাম— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে। ওই ভোটে তৃণমূল নেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র হারের পরে গত চার বছরে এলাকায় দলের কোন্দল বেড়েছে। দলনেত্রীও আর আসেননি এলাকায়। এমন আবহে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে পেছনে ফেলেছে বিজেপি। এবার লোকসভা ভোটেও তমলুক কেন্দ্রের মধ্যে থাকা এই বিধানসভা এলাকায় পদ্ম ফোটাতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। রেল প্রকল্প, নন্দীগ্রামে সেতু নির্মাণের মতো যে সব প্রতিশ্রুতি রাজ্য সরকার পূরণ করতে পারেনি, তাই হয়েছে বিজেপির ভোট প্রচারের অস্ত্র। পাশাপাশি, যুযুধান দুই দলের তরফেই রয়েছে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি।
নন্দীগ্রাম থেকে দেশপ্রাণ পর্যন্ত দীর্ঘদিনের বন্ধ থাকা রেল প্রকল্পের কাজ চালু করাকে হাতিয়ার করে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। সম্প্রতি নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ঘোল পুকুর থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ চলছে। বিজেপির তরফে এলাকায় ভোটের প্রচারে তুলে ধরা হচ্ছে, আগামী দিনে কেন্দামারি পর্যন্ত রেল প্রকল্প চালু করা হবে। একই সঙ্গে উঠে এসেছে নন্দীগ্রাম থেকে হলদিয়া পর্যন্ত নদীপথে সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ। গত বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেতু নির্মাণের। যদিও তার কিছুই হয়নি। একই রকম ভাবে নন্দীগ্রামে জেলিঙহ্যামের পরিত্যক্ত জমিতেও গড়ে ওঠেনি কারখানা।
উন্নয়ন আর বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে। তবে, লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় এলাকায় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর ধর্মীয় মেরুকরণ হবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। প্রশাসনিক সূত্র অনুযায়ী, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে হিন্দু ভোট রয়েছে এক লক্ষ ১৩ হাজার। আর পাশের ব্লকে হিন্দু ভোট রয়েছে ৮৫ হাজার। আর দু’টি ব্লকে ৬৮ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। এবার সংখ্যালঘুদের সমর্থন খানিকটা হলেও বিজেপির অনুকূলে যেতে পারে বলে অনুমান সে দলের নেতৃত্বর। কারণ, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামের দুটি ব্লকের বহু সংখ্যালঘু পরিবার পদ্ম শিবিরে যোগ দেয়।
নন্দীগ্রাম যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, তা তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যকেও বলতে শোনা গিয়েছে। তিনি জানান, নন্দীগ্রাম আর বাকচার ভোটের উপরেই নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ। এদিকে, নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কোন্দল রয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান দলের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে সভা করছেন ঠিকই। তবে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সংশয় রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। অন্যদিকে, চুটিয়ে প্রচার করছেন বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রচারে ভাল সাড়া পাচ্ছেন সিপিএমের প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তবে যদি সিপিএম প্রার্থী ভোট কাটে, তাহলে আখেরে গেরুয়া শিবিরের তো ক্ষতি! প্রশ্নের জবাবে বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, ‘‘তৃণমূল অক্সিজেন যোগাচ্ছে সিপিএমকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নন্দীগ্রামবাসী তাতে বঞ্চিত। এর জবাব ওঁরা ইভিএমে দেবেন।’’