মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং (বাঁ দিকে), বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (মাঝে), প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা প্রধান অনীত থাপা (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
দার্জিলিং পাহাড়ে এখনও পর্যন্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি বিজেপি। নতুন প্রার্থী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা না পুরনো প্রার্থী রাজু বিস্তা— এ বার টিকিট পাবেন কে, তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে চাপানউতরও রয়েছে। অন্য দিকে, প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে ইতিমধ্যে লড়াইয়ে নেমেও পড়েছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়িতে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করলেন, তৃণমূলের অবস্থা করুণ। তাই যত দেরিতে প্রচারে নামুক না কেন, দার্জিলিং পাহাড়ে বিজেপির জয় নিশ্চিত!
২০১৯ সালে দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ যেমন ছিল, তার সঙ্গে এ বারের বিস্তর ফারাক। ইদানীং পাহাড়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে উঠে এসেছেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা। তিনি জিটিএ প্রধানও। সাম্প্রতিক কালে পাহাড়ে রাজনীতির লড়াইয়ে ক্রমশ পিছিয়েছেন একদা পাহাড়ের ‘দণ্ডমুন্ডের কর্তা’ বিমল গুরুং। পাহাড়ের রাজনীতিকে সামনে থেকে দেখা পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, সেই শূন্যস্থান ভরাট করেছেন অনীত। তাঁদের দাবি, বিমল যে এখন স্রেফ অতীতের ছায়া, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিধানসভা ভোটেই। তার পরবর্তী কালে জিটিএ ভোট বা পুরভোটেও দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন বিমলেরা। অন্য দিকে, এই দু’টি ভোটেই ভাল ফল করেছে অনীতের প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। পাহাড়ে তৃণমূলেরও খাতা খুলেছে অনীতের সৌজন্যে। যদিও ‘বদলে যাওয়া’ সমীকরণে বিশ্বাস নেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির। তাই, বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সুকান্তের ঘোষণা, অনীত থাপা কোনও ফ্যাক্টর নন। বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে। কাজেই তৃণমূলের পাহাড় জয়ের কোনও সম্ভাবনা নেই। সুকান্ত বলেন, ‘‘পাহাড়ে তৃণমূলের জেতার বিন্দুমাত্র কোনও সম্ভাবনা নেই। অনীতের থেকেও অনেক পুরনো নেতা বিমল গুরুং। কাজেই আমার মনে হয়, অনীত কোনও ফ্যাক্টর নন। পাহাড়ের মানুষের আবেগ বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের জয় নিশ্চিত।’’
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা ভোটের আগে ‘পলাতক’ বিমলকে ঘরে ফিরিয়েছিল তৃণমূল সরকার। তার তীব্র প্রতিবাদ করেছিল বিজেপি। সেই সময় বিমল তৃণমূলকে সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিমলের সমর্থন পেয়েও পাহাড় বা তরাই অঞ্চলে বিশেষ কিছু করতে পারেনি তৃণমূল। তার পর তৃণমূলের সঙ্গে আবার বিচ্ছেদ হয় বিমলের। আবার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলান বিমল। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, এ বার পাহাড়ে বিমলে বাজিমাত হবে কি?
শুধু পাহাড়ে হেলায় জয় পাওয়ার দাবিই নয়, সুকান্ত শিলিগুড়ি থেকে কটাক্ষ করেন তৃণমূলকেও। এ ক্ষেত্রে সুকান্তের হাতিয়ার, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃণমূলের ‘জনগর্জন সভা’য় র্যাম্পে প্রার্থীদের হাঁটিয়ে জনতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর্ব। সুকান্ত বলেন, ‘‘র্যাম্পে হেঁটে বিজেপির প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হয় না। দলের অভ্যন্তরে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসে। সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থাকেন। সেখানেই প্রার্থীদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাকি প্রার্থীদের নামও প্রকাশ হবে ৷ তৃণমূলকে স্বাভাবিক ভাবে আগেভাগেই প্রচারে নামতে হবে। কারণ, ওদের অবস্থা করুণ। আমরা পরে প্রচারে নেমেও ওদের থেকে এগিয়ে থাকব।’’ এ কথা বলতে গিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘প্রার্থী হওয়ার দাবিদার অনেকেই থাকতে পারেন, কিন্তু দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পাহাড়ে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যেই যে মতপার্থক্য আছে, এই কথার মধ্যে দিয়ে সম্ভবত তাকেই বার্তা দিতে চাইলেন রাজ্য সভাপতি।
অন্য দিকে, গঙ্গারামপুরে অভিষেকের ছোড়া চ্যালেঞ্জকে কেন্দ্র করে সুকান্ত বলেন, ‘‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে বহু প্রাচীনকাল থেকে একসঙ্গে বসে তর্কবিতর্ক করার ইতিহাস আছে। সেখানে পণ্ডিতের সাথে পণ্ডিতের বা শাস্ত্রীর সঙ্গে শাস্ত্রীর লড়াই হয়। কিন্তু চোর আর শিক্ষকের লড়াই একসঙ্গে হতে পারে না। তাঁরা কখনও এক ফ্রেমে আসতে পারেন না।’’