—প্রতীকী চিত্র।
আট বছর আগে নেমম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পদ্ম চিহ্নে জিতে এসেছিলেন ও রাজাগোপাল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ এবং সিপিএমের নেতত্বাধীন এলডিএফের মধ্যে বরাবর আড়াআাড়ি ভাগ হয়ে থাকা কেরলে সেটাই ছিল বিজেপির প্রথম খাতা খোলা। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন তার পরে ডাক দিয়েছিলেন, বিজেপির অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হবে! বিধানসভা ভোটে ২০২১ সালে নেমম পুনরুদ্ধার করেও নিয়েছে সিপিএম। কিন্তু এ বার লোকসভায় কেরল থেকে আসন জিতে দক্ষিণী রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন ফেলল বিজেপি!
কেরলের ত্রিশূর আসন থেকে ৭৪ হাজার ৬৮৬ ভোটে মঙ্গলবার বিজয়ী ঘোষিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী ও অভিনেতা সুরেশ গোপী। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা আগে গোপীকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন। এ বার লোকসভার ময়দানে নেমে তিনি বাজিমাত করে দিলেন! নেমম বিধানসভা আসন যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সেই তিরুঅনন্তপুরমেও কংগ্রেস প্রার্থী শশী তারুরকে কঠিন লড়াইয়ে ফেলেছিলেন বিজেপির প্রার্থী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। একাধিক বার পিছিয়ে-এগিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৬ হাজার ভোটে জিতেছেন তারুর। এনডিএ-র শরিক বিজেডিএস-কে বাদ দিয়ে শুধু বিজেপি পেয়েছে ১৬.৬৮% ভোট।
প্রায় পাঁচ বছর আগের সাফল্য ধরে রেখেই ইউডিএফ যে এ বার কেরলে ১৮টি আসন জিতেছে, তাকে ছাপিয়েও বড় হয়ে উঠছে বিজেপির উত্থান ঘিরে চর্চা! গত বারের মতোই রাজ্যে ২০টির মধ্যে মাত্র একটি আসন পেয়েছে শাসক দল সিপিএম। তারা ২০২১৯ সালে জিতেছিল আলপ্পুঝায়, এ বার তাদের জয় এসেছে আলাতুর কেন্দ্র থেকে। কেরলে যাদের শক্ত ঘাঁটি, সেই বামেদের একটি আসন এবং উদীয়মান শক্তি হিসেবে বিজেপিও এক— এই ফলাফলই রাজ্যের রাজনৈতিক বিন্যাসে নতুন মাত্রা যোগ করছে। কেরলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের দাবি, ‘‘এখানে কুস্তি করলেও সিপিএম এবং কংগ্রেসের দোস্তি আছে দিল্লিতে। তাদের এই খেলা কেরলের মানুষ ধরে ফেলেছেন। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে চলার শুরু হল।’’
প্রত্যাশিত ভাবেই ওয়েনাড় থেকে ফের জিতেছেন রাহুল গান্ধী। এ বার তাঁর জয়ের ব্যবধান তিন লক্ষ ৬৪ হাজার ৪২২। তাঁর বিপরীতে দাঁড়িয়ে সিপিআই নেত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী অ্যানি রাজা পেয়েছেন দু’লক্ষ ৮৩ হাজার ভোট। কংগ্রেস হাই কমান্ডে রাহুলের ডান হাত, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালও জিতে এসেছেন আলপ্পুঝা কেন্দ্র থেকে। তাঁর জয়ের ব্যবধান ৬৩ হাজার ৫১৩। আর চতুর্থ বারের জন্য লোকসভায় যাওয়া নিশ্চিত করে তারুর বলেছেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে টি-২০ বিশ্বকাপ হচ্ছে। তবে সুপার ওভারটা এখানে হল! বিজেপির চন্দ্রশেখর এবং সিপিআইয়ের পান্নিয়ান রবীন্দ্রন খুবই ভাল লড়াই করেছেন। দিনের শেষে এই জয় শুধু আমার নয়, গণতন্ত্র এবং সম্প্রীতির জয়।’’ তাঁর মতে, মানুষ হয়তো মনে রেখেছেন কেন্দ্রে বিকল্প সরকার হলে কংগ্রেসের প্রার্থীর মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই তাঁকে জিতিয়েছেন।
কেরলে আসন বাড়াতে এ বার পলিটব্যুরোর সদস্য এ বিজয়রাঘবন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে কে শৈলজা, টমাস আইজ়্যাকদের প্রার্থী করেছিল সিপিএম। তাতেও হাল ফেরেনি। এলডিএফের আহ্বায়ক ই পি জয়রাজনের বক্তব্য, তাঁরা অবশ্যই ফলের পর্যালোচনা করবেন। প্রসঙ্গত, আইজ়্যাকের কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এ কে অ্যান্টনির ছেলে এবং বিজেপি প্রার্থী অনিল অ্যান্টনির সঙ্গে কংগ্রেসের অ্যান্টো অ্যান্টনির লড়াই ছিল। বিদায়ী সাংসদ অ্যান্টোই ফের জিতেছেন, অনিল শেষ করেছেন তৃতীয় স্থানে।