গঙ্গাধর কয়াল। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
ভোট করাতে কী কী প্রয়োজন? কত টাকার মদ, অস্ত্র দরকার, তা স্টিং ভিডিয়োতে নিজের মুখেই বলতে শোনা গিয়েছে সন্দেশখালিতে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। স্টিং ভিডিয়োতে গঙ্গাধর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিয়ে জানিয়েছেন যে, প্রতি বুথের জন্য পাঁচ হাজার টাকার মদের প্রয়োজন। তিনটি অঞ্চলে ৫০টি বুথ রয়েছে। বিজেপি নেতার হিসাবে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার মদের প্রয়োজন। কোন বুথে মদের বেশি প্রয়োজন, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ৫০টি পিস্তলের দাবিও করেছেন গঙ্গাধর।
শনিবার রাতে প্রকাশ্যে আসে ‘সন্দেশখালির স্টিং অপারেশন’-এর দ্বিতীয় পর্ব। সেখানেও প্রথম ভিডিয়োর মতো গঙ্গাধরকেই কথা বলতে শোনা যায়। যদিও তিনি দাবি করেছেন, প্রথম ভিডিয়োটি ‘বিকৃত’। সিবিআইয়ের দ্বারস্থও হয়েছেন। তার পরেই প্রকাশ্যে এসেছে দ্বিতীয় ভিডিয়ো, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, সন্দেশখালিতে যে মহিলারা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। এর পর তিনি জানান, ভোট করাতে গেলে ঠিক কী কী প্রয়োজন।
প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেছেন, ভোট পর্যন্ত গঙ্গাধরের কত পরিমাণ মদ লাগবে? জবাবে গঙ্গাধর বলেন, ‘‘আদিবাসী এলাকায় বেশি লাগে। তফসিলি এলাকায় একটু কম। তিনটে অঞ্চলে প্রায় ৫০টি বুথ রয়েছে। সন্দেশখালিতে ১০টি বুথ রয়েছে। সেখানে বেশি মদ লাগবে। এখানে তফসিলি উপজাতি বেশি। মুসলিমরা সংখ্যায় ৩০০ জনের মতো।’’ এর পরেই প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন, ভোট পর্যন্ত গঙ্গাধরের মণ্ডলে কত খরচ লাগবে? গঙ্গাধর প্রথমে জানান, তাঁর এই বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই। তখন প্রশ্নকর্তা জানান, এখন থেকে ‘বাজেট’ না করলে শেষ মুহূর্তে সামলে ওঠা যাবে না। তখন গঙ্গাধর বলেন, ‘‘তা-ও বুথ প্রতি ৫ হাজার করে ধরুন।’’ অর্থাৎ, ৫০টি বুথে খরচ পড়বে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। গঙ্গাধরের হিসাবে, এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মহিলা এবং ৭০ শতাংশ পুরুষ মদ্যপান করবেন। প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেন, এর মধ্যে কি আন্দোলনকারী মহিলারাও রয়েছেন? জবাবে গঙ্গাধর বলেন, ‘‘আন্দোলনকারী মহিলারা তো সকলে মদ্যপান করে না।’’ যিনি প্রশ্ন করছেন, তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যারা খাচ্ছে, তারাও আন্দোলনকারীদের মধ্যে থাকবেন তো? খরচও ওর মধ্যেই ধরা হচ্ছে তো?’’ জবাবে গঙ্গাধর বলেন, ‘‘হ্যাঁ, তারা থাকবেই। তবে আলাদা আলাদা। পুলিশের সামনে তারা আসবে না। পুরুষেরা পিছন থেকে সাহায্য করবে।’’ তিনি ভোটে জয়ের বিষয়ে নিশ্চয়তাও দিয়েছেন প্রশ্নকর্তাকে। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ হাজার টাকাটা অনেক কম বলেছি আপনাকে। সবাইকে বলেছি, অন্তত প্রথম লোকসভাটা জেতাও। পরে বিধানসভার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা। আপনারা রয়েছেন যখন, তখন আমার একটু সুবিধা হয়ে যাবে।’’
ভিডিয়োর কথোপকথনে গঙ্গাধরকে অস্ত্রের হিসাব দিতেও শোনা গিয়েছে। গঙ্গাধর জানিয়েছেন, কোরাকাটি এবং মণিপুরের জন্য অস্ত্র লাগবে। তবে সন্দেশখালির জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, বোমার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পিস্তলের। কতগুলি প্রয়োজন, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোরাকাটির জন্য ৩০টা আর মণিপুরের জন্য ২০টা। ৫০টা হলে ঠিক আছে।’’ পাশাপাশি, এ-ও জানিয়েছেন, ওই দুই এলাকার বাসিন্দারা পিস্তল চালাতেও পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোরাকাটি আর মণিপুরের ওরা অভ্যস্ত। কিন্তু সন্দেশখালিতে বিজেপির কেউ সে ভাবে অভ্যস্ত নয়।’’ কার্তুজের হিসেবও দিয়েছেন গঙ্গাধর। পিস্তল পিছু ১২টি করে গুলি কার্তুজ দাবি করেছেন তিনি। ৩০টির জন্য সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন কত, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ধরুন ১২টা করে দেবেন। সব মিলিয়ে ৩৬০। না হলে ২৪০। ডবল না থাকলে মুশকিল।’’ প্রশ্নকর্তা হুঁশিয়ারি দেন, কাজের শেষে অস্ত্র কোথাও মেলা চলবে না। তা হলে ‘চাপ’ রয়েছে। তখন গঙ্গাধর বলেন, ‘‘আমাকে আবার ওদের আলাদা ভাবে ডাকতে হবে।’’ গুলি যদি চালানো হয়, অস্ত্র নষ্ট করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন গঙ্গাধর।
শনিবার রাতে স্টিং ভিডিয়োর দ্বিতীয় পর্বটি যখন প্রকাশ্যে আসে, ঘটনাচক্রে সেই সময়ে কলকাতায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার রাজ্যে তাঁর চারটি জনসভা রয়েছে। প্রথম সভা ছিল বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের হয়ে ব্যারাকপুরে। সেখানে স্টিং ভিডিয়ো নিয়ে সরাসরি কোনও কথা বলেননি মোদী। শুধু বলেছেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে তৃণমূল।’’