(বাঁ দিকে) হর্ষবর্ধন স্রিংলা। রাজু বিস্তা (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে উত্তরবঙ্গ নিঃসন্দেহে বিজেপির ‘গড়’। সেই উত্তরেই কমপক্ষে তিনটি আসনে চলছে দলের অন্দরের লড়াই। উত্তরের বাকি আসনগুলির মধ্যে দার্জিলিং আসন আবার জোটের কল্যাণে অনেক আগে থেকেই বিজেপির দখলে। ২০০৯ সাল থেকেই এই আসনে জয় পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। ২০০৯ সালে এখান থেকে জিতেই কেন্দ্রের মন্ত্রী হন যশোবন্ত সিংহ। এর পরে ২০১৪ সালে দার্জিলিং থেকে জিতে মন্ত্রী হন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। ২০১৯ সালে এই আসন থেকে জেতেন রাজু বিস্তা। মন্ত্রী না হলেও কেন্দ্রীয় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান রাজু। এখন সেই রাজুই ২০২৪ সালে আবার প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। বিজেপির অনেকেই দাবি করেছেন, ওই আসনে মোদীর ‘পছন্দের’ আমলা হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। শ্রিংলা নাকি সে বিষয়ে অনেকটা এগিয়েও গিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও শ্রিংলাকে ওই বিষয়ে ইতিমধ্যেই ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়েছেন। যে বার্তা পেয়ে এই প্রাক্তন আমলা ‘ঘর’ গোছাতে শুরুও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা মতের গোল বেধেছে বিজেপির অন্দরে।
উত্তরের সব আসনের প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা করেনি বিজেপি। প্রথম দফায় রাজ্যের যে ক’টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাদ রয়েছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ আসন। তিনটিতেই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল। বিজেপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন আসনেই প্রার্থী বদল হতে পারে। কিন্তু কবে পরবর্তী প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। দ্বিতীয় দফায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকের পরেই তা হওয়ার কথা। কিন্তু ওই বৈঠকের দিনক্ষণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
তবে বৈঠকের আগেই তিনটি আসন নিয়ে বিজেপি ‘অস্বস্তিতে’। কোচবিহারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের নাম ঘোষণার পরে সেখানে আলাদা রাজ্যের দাবি নতুন করে উঠেছে। পৃথক রাজ্যের দাবিদারেরা ‘নো ইউটি (ইউনিয়ন টেরিটরি), নো ভোট’ প্রচার শুরু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এতটাই উদ্বিগ্ন যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ স্বয়ং দলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা রাজবংশী নেতা অনন্ত মহারাজকে ফোন করে পৃথক রাজ্যের দাবিতে প্রচার বন্ধ করতে সরাসরি নির্দেশ দেন। যদিও অনন্তের দাবি, তিনি ওই প্রচার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তাঁর লোকেরা এর সঙ্গে যুক্ত নয় বলেও দাবি করেছেন তিনি। শনিবার শিলিগুড়ির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাতেও যোগ দিতে এসেছেন অনন্ত।
বিজেপির দ্বিতীয় সমস্যা শুরু হয়েছে আলিপুরদুয়ার আসনে। সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লাকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে দলের বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে। এর পরেই বার্লা শিবির বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার দাবি তুলতে শুরু করে। যদিও রাজ্য বিজেপি বার্লাকে বোঝাতে তৎপর হয়েছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শনিবার বলেন, ‘‘আমরা জন বার্লার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টা মিটমাট হয়ে গিয়েছে।’’ শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাতেও ছিলেন বার্লা।
তবে যে লোকসভা আসন এলাকায় মোদীর সভা, সেখানে প্রকাশ্যে না হলেও অন্তরালের লড়াই চলছে শ্রিংলা ও রাজু শিবিরের মধ্যে। ইতিমধ্যেই আমলা হিসাবে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হওয়া থেকে জি-২০ সম্মেলন সামলানোয় তাঁর ‘সাফল্যের গাথা’ প্রচার শুরু করে দিয়েছে শ্রিংলা শিবির। তিনি যে দার্জিলিঙের ভূমিপুত্র, সেই দাবিও তোলা হচ্ছে। অন্য দিকে, রাজু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনিই ফের প্রার্থী হবেন পাহাড়ে। বলেছেন, ‘‘প্রতি বার প্রার্থীবদলের পরম্পরা এ বার থাকবে না দার্জিলিঙে। আমাকেই আবার প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।’’
রাজ্য নেতারা অবশ্য এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, এটা সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিষয়। শ্রিংলার নাম নিয়ে যে হেতু দলের ভিতরে কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি, তাই রাজ্য নেতাদের অনেকে এটা ধরে রেখেছেন যে, রাজুকেই দার্জিলিঙে প্রার্থী করা হবে। তাঁদের বক্তব্য, পাহাড়ের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন রাজু। আবার অন্য একটি শিবির বলছে, আমলা হিসাবে সফল শ্রিংলা প্রার্থী হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জিতলে তিনি তৃতীয় মোদী সরকারের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাবেন বলেও তাঁদের আগাম দাবি।