প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
রাজনীতির মঞ্চে নেতাদের বক্তব্য শালীনতার সীমা ছাড়ানো নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ভোটপ্রচার শুরু হতেই দল নির্বিশেষে একের পর এক নেতা কুমন্তব্যের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। এ বার রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাত তুলে বেফাঁস মন্তব্যের জেরে বিপাকে পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি পীযূষ পণ্ডা।
প্রধানমন্ত্রীকে ‘তেলি ঘরের ছেলে’ বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রধানমন্ত্রীর পুজো করার বিরোধিতা করে নিজের পৈতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পীযূষ। ব্রাহ্মণ না হওয়া সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে রামমন্দিরে পুজো করেন, তুলেছেন সেই প্রশ্নও।
গত ৩০ মার্চ বিকেলে কাঁথি শহরে তৃণমূলের লোকসভা প্রার্থী উত্তম বারিকের জনসভায় পীযূষ বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রকাশ্যে এই মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। সভায় জেলা তৃণমূলের প্রায় সকল নেতাই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘অহঙ্কারী নরেন্দ্র মোদী তেলি ঘরের ছেলে। তিনি রামমন্দির উদ্বোধন করেছেন, পুজো করেছেন! কোনও ব্রাহ্মণকে ডাকেননি। আমি ব্রাহ্মণ ঘরের ছেলে, পৈতে রেখে তা হলে লাভ কী? আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আমার পৈতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’
পীযূষের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য ও জাতপাত তুলে অশালীন ভাষায় আক্রমণের অভিযোগ তুলে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নির্বাচনী কমিটির তরফে নির্বাচন কমিশন ও অনগ্রসর শ্রেণি জাতীয় কমিশনে(এনসিবিসি) অভিযোগ জানানো হয়। গত ২ এপ্রিল দিল্লি থেকে অনগ্রসর শ্রেণি জাতীয় কমিশনের তরফে রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে নোটিস পাঠিয়ে তিন দিনের মধ্যে পীযূষ পন্ডার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার জবাব তলব করা হয়েছে।
কমিশনের চিঠি আসার পরে বুধবার সারাদিন পটাশপুরে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন পীযূষ। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বুধবার ভোটের প্রচারে বের হননি। কমিশনের চিঠি নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্তারাও মুখে কুলুপ এঁটেছে। পীযূষ কান্তি পণ্ডাকে ফোন করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যকে ফোন ও হোয়াটস অ্যাপে টেক্সট করা হলে তিনিও জবাব দেননি। জেলাশাসক হলেন জেলার নির্বাচন আধিকারিক। নির্বাচন কমিশনে বিজেপি অভিযোগ জানানোর পর কমিশন এখনও কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল জেলাশাসক জয়শী দাসগুপ্তের কাছে। তিনিও ফোন ধরেননি এবং হোয়াটস অ্যাপের জবাব দেননি।
কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক অরূপ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূলের হাতে এই রাজ্যে ভাষা দূষণের জোয়ার বইছে। তাদের নেত্রী যে ভাষায় কথা বলেন সেই পথে হাঁটছে তাদের নেতারা। সরকারে থেকে তারা ভাবছে, যা খুশি করা যাবে। এই বক্তব্য নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়েছে দেখেই আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছি। কমিশন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে আশা করি।’’