অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
নভেম্বরের শেষে, ২৯ তারিখ কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই দিন ধর্মতলায় সভা করে যাওয়ার পরে ডিসেম্বরের শেষে আবার ২৫ তারিখ এসেছিলেন দু’দিনের সফরে। সঙ্গী ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সাংগঠনিক বৈঠক ছিল সে বার। জানুয়ারির শেষ রবিবারও তাঁর আসার কথা ছিল। সাংগঠনিক বৈঠকের পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির কর্মী সমাবেশ ছিল। চূড়ান্ত প্রস্তুতির মধ্যেই জানা যায়, শাহ আসছেন না। তখন বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। সেই পর্ব মিটতে না-মিটতেই এসে যায় বাজেট অধিবেশন। এখন জানা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আসতে পারেন তিনি। তবে এখনও দিনক্ষণ পাকা হয়নি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লিতে হতে চলা দু’দিনের রাষ্ট্রীয় অধিবেশনের পরেই ঠিক হয়ে যাবে কবে আসবেন শাহ।
চলতি মাসে শাহের পাশাপাশি নড্ডাও আসতে পারেন। তবে এই সফরে তাঁরা কোনও সমাবেশ করবেন না। কারণ, পরীক্ষা পর্ব মেটার আগে মাইক লাগিয়ে সমাবেশ করা যাবে না। তবে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহের ফেব্রুয়ারি সফরে মূলত সাংগঠনিক বৈঠক হবে। সেই সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে বৈঠকও করতে পারেন। হবে কর্মিসভাও। তবে সবটাই হবে কোনও হলে বা প্রেক্ষাগৃহে।
জানুয়ারি মাসের শেষে শাহের সভা না-হওয়ায় রাজ্য বিজেপির অনেকেই হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, পরীক্ষার রুটিন বলছে, এপ্রিল মাসের আগে কোনও জনসভাই করা যাবে না। রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হচ্ছে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। এর পরেই ১৬ তারিখ শুরু হয়ে যাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। শেষ ২৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তাতেও পরীক্ষা পর্ব মিটছে না। গোটা মার্চ জুড়ে দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষা চলবে। শেষ ২ এপ্রিল। এর পরে জনসভা করা যাবে। তার আগেই লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিতে পারে নির্বাচন কমিশন। ফলে, একেবারে ভোট প্রচারেই নেমে পড়তে হবে শাহ, নড্ডাদের। আর সেই সময়ে অন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রচারে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
তবে বিজেপির অন্য পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের সব লোকসভা এলাকার জন্যই বৈঠক করার কথা শাহ বা নড্ডার। ৪২ আসনের জন্য রাজ্যে বিজেপির ১১টি ক্লাস্টার রয়েছে। সব ক’টি ক্লাস্টার চারটি করে লোকসভা আসন নিয়ে। আর একটিতে বিজেপির চোখে দু’টি কঠিন কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর। এই অঙ্কেই বিজেপির পরিকল্পনা, ১০টি ক্লাস্টারে শাহ অথবা নড্ডার কর্মসূচি থাকবে ভোটপ্রচারে নামার আগে। কোথাও কর্মিসভা, কোথাও নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক, কোথাও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে বৈঠক হবে।
এমনটাই পরিকল্পা ছিল শাহের বাতিল হয়ে যাওয়া জানুয়ারির সফরে। সে বার মেচেদায় চারটি লোকসভা কাঁথি, তমলুক, মেদিনীপুর, ঘাটাল নিয়ে একটি ক্লাস্টারের জন্য কর্মী সমবেশ হওয়ার কথা ছিল। বারাসতে ছিল জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক— চারটি লোকসভা আসন বারাসত, বসিরহাট, বনগাঁ এবং ব্যারাকপুরের নেতৃত্বকে নিয়ে। আর দুই কলকাতা, দমদম, যাদবপুর আসনের কর্মসূচি ছিল সায়েন্স সিটির প্রেক্ষাগৃহে। সেখানে এই চার আসন এলাকার বিশিষ্টজনেদের সঙ্গে শাহ কথা বলবেন বলে ঠিক ছিল।
ফেব্রুয়ারির সফরে শাহ সেই কর্মসূচিই আবার করবেন না। কারণ, মেচেদায় যে সভা হওয়ার কথা ছিল তা আর সম্ভব নয়। তবে রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, শাহের সফর চূড়ান্ত হওয়ার পরেই কী ভাবে এই ১২টি লোকসভা এলাকার কর্মসূচি সাজানো যায় তা ঠিক হবে। আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বসবে বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশন। সেখানে রাজ্য বিজেপির সব নেতা তো বটেই, সাংসদ, বিধায়ক এবং প্রাক্তনদেরও উপস্থিত থাকার কথা। নড্ডার বক্তৃতা দিয়ে শুরু এবং মোদীর কথায় শেষ হবে অধিবেশন। মাঝে থাকবেন শাহ। সেই কর্মসূচির পরেই ঠিক হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সফরসূচি।