গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শেষমেশ মধুরেণ সমাপয়েৎই হল। যেমন শনিবার সকালে লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ব্রাত্য বসুর মধ্যস্থতায় দক্ষিণ কলকাতায় ডেরেক ও’ব্রায়েনের দফতরে বৈঠকে বসলেন কুণাল ঘোষ। ঘন্টাখানেকের বৈঠকের শেষে ‘আনন্দগান’ কণ্ঠে নিয়ে বেরোলেন কুণাল। পাশে বন্ধু ব্রাত্য। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে কী হয়েছে, তা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের অঘোষিত দু’নম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন ডেরেক। তার পরেই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দলের প্রথম সারির নেতাদের মতে, মেঘ কেটে গিয়েছে। বৈঠক খুবই ‘ইতিবাচক’ হয়েছে।
বৈঠকের শেষে কেউই আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মুখ খোলেননি। কুণাল বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ এ কথা অবশ্য কুণাল গত দু’দিন ধরেও বলেছেন। শান্তিবৈঠকে বরফ গললেও তাঁকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বা দলীয় মুখপাত্রের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে কুণাল মুখ খোলেননি। মুখ খোলেননি এ নিয়েও যে, তাঁকে ‘তারকা প্রচারক’-এর মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না। তিনি শুধু জানান, দল তাঁকে যে ভাবে প্রচারে নামাবে, তিনি সে ভাবেই প্রচার করবেন। কুণালের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সেনাপতি। আমি তৃণমূল পরিবারের একজন সৈনিক। আমি দলে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ কী আলোচনা হল? কুণাল দলের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর পদ কি ফিরিয়ে দেওয়া হবে? জবাবে কুণাল বলেন, ‘‘সময় দিন। সব দেখতে পাবেন। আমি দলে আছি। দলও আমায় আস্থা ও স্নেহ রেখে থাকার অধিকার দিচ্ছে।’’
আর ব্রাত্য বলেন, ‘‘আমরা দু’জনেই তৃণমূলের লোক। আর এক জন তৃণমূলের লোকের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম। এতে আবাক হওয়ার কী আছে?’’ কুণালের দুঃখ কি মিটেছে? ব্রাত্যের জবাব, ‘‘ধরুন, আমার হাতে একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার উপর যদি একটা লিউকোপ্লাস্ট লাগানো থাকে, আপনি কি বলবেন, কবে সারবে? কবে সারবে? সময় দিতে হবে তো!’’ পাল্টা ব্রাত্যকে প্রশ্ন করা হয়, তার মানে ক্ষত ছিল এবং তাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে? তার আর স্পষ্ট জবাব দেননি ব্রাত্য। তবে ব্রাত্যকে পাশে নিয়ে কুণাল জানিয়েছেন, তিনি কোনও চিঠি পাননি। অর্থাৎ গত ১ মে কুণালকে দলীয় পদ থেকে সরানোর ডেরেকের যে চিঠি সংবাদমাধ্যমকে তৃণমূলের তরফে দেওয়া হয়েছিল, তা কুণাল পাননি বলেই তাঁর দাবি। অর্থাৎ, সময়ের প্রেক্ষিতে ওই সিদ্ধান্তের অস্তিত্বই কার্যত অস্বীকার করার পটভূমি তৈরি রাখা হচ্ছে।
অর্থাৎ, আগেকার ‘স্থিতাবস্থা’ই বজায় থাকছে। কুণাল যেমন ছিলেন, যেমন থাকেন, তেমনই থাকবেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের খবর, পদ-টদের তোয়াক্কা না-করে কুণাল নিজের মতো করে ‘পারফর্ম’ করে যাবেন। বৈঠকে তেমনই ঠিক হয়েছে। ডেরেক বৈঠকে কুণালকে এমনও বলেছেন যে, তিনি কুণালের ‘শত্রু’ নন। কিন্তু যে ভাবে কুণালকে ভোটের এই আবহে বিজেপির প্রার্থীর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল, তাতে দলের কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছিল। তাই দলকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। কিন্তু কুণালের ‘উপযোগিতা’ সম্পর্কে দলের সর্ব স্তরের নেতানেত্রীই ওয়াকিবহাল। পক্ষান্তরে, কুণাল জানিয়েছেন, তিনি চান ‘সম্মান’ নিয়ে দলের হয়ে প্রতিদিন ‘পারফর্ম’ করতে। তবে এখন দেখার, প্রেস বিবৃতিটি প্রত্যাহার করা হয় কি না। নাকি সেটিকে ‘সময়পোযোগী’ ভাবে বিস্মৃতিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্রের খবর, বৈঠকে ব্রাত্যও ডেরেককে জানান, কুণাল দলের হয়ে সব সময় ‘পারফর্ম’ করেন। তাঁকে ‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড’ দিলে সেটা ভাল হবে না। প্রসঙ্গত, এর আগে ব্রাত্য প্রকাশ্যেই কুণালের পাশে দাঁড়িয়ে সমঝোতার কথা অনুমান করেছিলেন। বস্তুত, তার পরে ব্রাত্যকেই কুণালকে বুঝিয়েসুজিয়ে বৈঠকে নিয়ে আসতে রাজি করানো হয়। তার আগে কুণাল ডেরেকের সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠকের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ব্রাত্যের উপস্থিতিতে ডেরেকের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি হয়ে যান কুণাল। সূত্রের খবর, বৈঠকে ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল নেতা বলেছেন, পদ হল আলঙ্কারিক। তাঁর কোনও পদ না-হলেও কিছু আসে-যায় না। কিন্তু তাঁকে নিজের মতো করে কাজ করতে দিতে হবে। ডেরেক জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন। দলের একটি সূত্রের মতে, সমস্যা কেটে গিয়েছে। তবে কিছু ‘ঔপচারিকতা’ সারতে আরও দু’একদিন সময় লাগতে পারে।
মে দিবসের সকালে উত্তর কলকাতার একটি ক্লাবের রক্তদান শিবিরে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন কুণাল। তাপসকে ‘ভাল জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন তিনি। তা ছাড়াও বলেছিলেন, উত্তর কলকাতায় যেন কোথাও কোনও ‘ছাপ্পা ভোট’ না হয়। বলেছিলেন, জনসাধারণ বেছে নিক, কে ভাল প্রার্থী। তার পরেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পর গত ৭২ ঘণ্টায় কুণাল বিবিধ মন্তব্য করেছেন। তৃণমূলের সহযোগী সংস্থা আইপ্যাকের শীর্ষকর্তাকে নিশানা করে কটাক্ষমূলক পোস্টও করেছেন। তবে সে সব এখন অতীত বলেই মনে করা হচ্ছে।