প্রণত টুডু। —ফাইল ছবি।
এ যেন উলটপুরাণ। সরকারি চাকরি ছাড়ার পরেও ‘নো ডিউজ়’ শংসাপত্র পাননি বলে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে পারেননি প্রাক্তন আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধর। তাঁর জায়গায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন দেবতনু ভট্টাচার্য। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঝাড়গ্রামেও সন্তর্পণে বকুল মুর্মুকে দিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছিল বিজেপি। পেশায় চিকিৎসক প্রণত টুডুর মনোনয়নও যদি দেবাশিসের মতো গৃহীত না হয়, সেটা ভেবেই এই পন্থা। কিন্তু ঘটনাচক্রে বকুলের মনোনয়ন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন। কারণ, ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে প্রণতের মনোনয়ন গ্রহণ করেছে কমিশন। তাই ঝাড়গ্রাম লোকসভার পদ্মপ্রার্থী প্রণতকে যেমন দেবাশিসের মতো সমস্যায় পড়তে হল না, তেমনই ঝাড়গ্রামের বকুলেরও বীরভূমের দেবতনু হওয়া হল না। কমিশনের এই নির্দেশিকার পর অবশ্য স্বস্তির হাওয়া পদ্মবনে। কারণ, তাদের প্রথম পছন্দ চিকিৎসক প্রণতই।
চাকরি ছাড়ার পরও রাজ্য সরকারের তরফে ‘নো ডিউজ়’ সার্টিফিকেট পাননি বলে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে এই লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রতীকে ভোটে লড়তে পারেননি প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস। তা নিয়ে প্রথমে তিনি কলকাতা হাই কোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সুরাহা মেলেনি। বরং, শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় এ নিয়ে তারা কোনও পদক্ষেপ করবে না। দেবাশিস মনে করলে আবার কমিশনে যেতে পারেন। অন্য দিকে, কমিশন থেকে বলা হয়, ওই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার প্রশ্নই নেই। ফলে দেওয়াল লিখন, প্রচার শুরুর পরেও ভোট ময়দান থেকে পিছু হঠতে হয়েছে প্রাক্তন ওই পুলিশ সুপারকে। ওই ঘটনার পর ‘নো ডিউজ়’ সার্টিফিকেট নিয়ে নয়া নিয়ম চালু করে কমিশন। তাতে প্রত্যেক রাজ্য সরকারের প্রতি কমিশন নির্দেশ দেয়, কোনও প্রার্থী চাকরি ছেড়ে নির্বাচনে লড়তে চাইলে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘নো ডিউজ়’ শংসাপত্র তাঁকে দিতেই হবে।
উল্লেখ্য, জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসন থেকে এ বার সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সোরেনকে (পাঠকমহলে যিনি খেরওয়াল সোরেন নামে পরিচিত) প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রথমে ওই আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছিল কুনার হেমব্রমকে। তিনি গত বার জিতেও ছিলেন। কিন্তু এ বার অবশ্য লোকসভা ভোটের আগেই দলত্যাগ করেন তিনি। প্রথমে প্রার্থীর নাম ফাঁকা রেখেই বিজেপির দেওয়াল লিখন চলছিল ঝাড়গ্রামে। শেষমেশ প্রণতকে প্রার্থী করে বিজেপি। তার আগেই হাসপাতালের সুপারের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন রেডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রণত। কর্মসূত্রে ঝাড়গ্রাম শহরে থাকেন তিনি। গত ১২ বছর তিনি ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগে ছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি না করলেও গত কয়েক মাস বিজেপির জেলা কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন প্রণত। বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ওই বিজেপি প্রার্থী।