অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
কালীগঞ্জের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার দাবি করেন যে, তদন্ত ছাড়াই মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষ্ণনগরের ভোটারেরা যাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন, তাঁর পদ খারিজ করা হয়েছে। এ ভাবে আসলে ভোটারদেরই ‘অবমাননা’। মহুয়া সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বলেই তাঁর পদ খারিজ করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। সে কারণেই, ১৩ মে মহুয়াকে ভোটদানের আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘গত বছরের থেকে দ্বিগুণ ভোটে জয়ী করুন মহুয়াকে। এই ঋণ উন্নয়নের মাধ্যমে শোধ করব। সন্দেশখালির মাধ্যমে যাঁরা বাংলাকে ছোট করেছেন দেশের সামনে, তাঁদের জবাব দেবেন। মহিলাদের সম্ভ্রম ২০০০ টাকায় দিল্লির হাতে বিক্রি করেছেন, তাঁদের বিসর্জন হবে তো! আপনারা প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন, তাঁর পদ খারিজ করেছে, যে তাঁর পদ খারিজ করেছে, তাঁর বিসর্জন হবে তো!’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বাংলা-বিরোধী সরকারকে জবাব দিন। যখন ভোটবাক্স খুলবে, সর্ষেফুল দেখবেন বিজেপির নেতারা। এত দিন ধরে ভোট করাচ্ছে। মানুষের কষ্ট বোঝেন না। এই গরমে কষ্ট দিচ্ছে। এদের জবাব দেব, কথা দিয়ে গেলাম। সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে বিপুল ভোটে জয়ী করার দায়িত্ব আপনাদের কাঁধে তুলে দিয়ে গেলাম।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘রানাঘাট, কল্যাণী, চাকদহে হেরেছি। কিন্তু দেখান তো, কারও লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বন্ধ করেছি? আমরা রাস্তায় নেমে এলাকা অশান্ত করার রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনি। রক্তদান করেছি, নিইনি। এটা রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণের বাংলা। এই বাংলা ভেদাভেদের রাজনীতিককে ঢুকতে দেয়নি। এরা বাংলার মানুষের দুঃখ, কষ্ট জানে না।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি ভোট কিনতে আপনাকে টাকা দিলে নিয়ে নেবেন। এটা আপনাদের টাকা। ৫০০ দিলে ২০০০ টাকা চাইবেন। এটা বাংলার মানুষের টাকা। নিয়ে নেবেন। ১০০ দিনের টাকা চেয়েছিলেন, সাড়া দেননি প্রধানমন্ত্রী। রাস্তা, আবাস, বিদ্যুৎ, বার্ধক্য ভাতার টাকা দেয়নি। যে লক্ষ্মীর ভান্ডার পান, তাতে বিজেপির অবদান নেই। যে ভাষা ওরা বোঝে, তাতেই জবাব দিন।’’
অভিষেক কৃষ্ণনগরের সভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে খোঁচা দেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। ১০ বছর আগে যা দাম ছিল, এখন যা দাম, দুইয়ের মধ্যে তুলনা টানেন। বলেন, ‘‘এদের বিতাড়ন না করলে মানুষকে শোষণ করবে। মানুষের ভোট যখন পাচ্ছে না, যখন বুঝছে, তখন টাকা দিয়ে ভোট কিনছে।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখেছেন সকলে? এখানে বলছে, বসিরহাট থেকে বিজেপির প্রার্থী রেখা পাত্রকে ২০০০ টাকা দিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে। যিনি বলছেন, তিনি বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। বাংলাকে যাঁরা কলুষিত করেছেন ক’টা ভোটের জন্য, ১৩ মে তাঁদের জবাব দিতে হবে।’’
অভিষেক জানান, ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ২৮১ জন শ্রমিকের টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে দিয়েছেন জানুয়ারিতে। এঁরা সকলে নদিয়ার। নদিয়ায় ১২ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৩৩ জন প্রতি মাসে লক্ষ্মীর ভান্ডার পান। নদিয়ায় ১৮ লক্ষের বেশি বোন কন্যাশ্রী পেয়েছেন। ৫২ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৫২ জনকে তৃণমূলের সরকার কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে। সংখ্যালঘুদের ২৭ লক্ষ ২ হাজার ৭২৮ জন সংখ্যালঘুকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন।
অভিষেক বলেন, ‘‘একটা রাজনৈতিক দল ভোট চাইতে যাবে! আমি কী খাব, রুই না কি কাতলা, বেগুন না কি কপি খাব, ঠিক করবে মোদী সরকার। এই দলকে উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত কি না! যাঁরা আপনার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকেছেন, আপনার নির্বাচিত প্রার্থীর পদ কেড়েছেন, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না!’’
অভিষেক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যাঁরা মাছ খান, হিন্দু-বিরোধী। দেশ-বিরোধী। কারা মাছ খান, হাত তুলুন। আমি এখন দু’বার খাই মাছ। বাংলার সংস্কৃতি জানে না। আপনাদের হাত তোলার ছবি প্রকাশিত হোক। সকলে দেখুন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে অধিকার কেড়ে নেবে।’’ এর পর সন্দেশখালির বিজেপি নেতা গঙ্গাধরের ভিডিয়ো মঞ্চে দেখান অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার নাম যাঁরা কলুষিত করেছেন, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত কি না!’’
অভিষেক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে তাঁকে ভোট দেওয়া। আমি বলব, মহুয়া মৈত্রকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে হারানো। মনে রাখবেন, যাঁরা ভোট কেটে তৃণমূলকে হারাতে চান, সেই সিপিএম, কংগ্রেসকে একটা ভোট নয়। কানে শুনে নয়, দেখে ভোট দিন।’’
অভিষেক জানান, ১৩ মে, ২০১১ সালে রাজ্যে প্রথম বার তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল। ওই দিন আবার তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার ডাক দিলেন কৃষ্ণনগরবাসীকে।
অভিষেক বলেন, ‘‘আমাদের সৈনিকেরা প্রশ্ন তুলেছেন বলে সাংসদ পদ খারিজ করতে হবে। কৃষ্ণনগরের মায়েদের অনুরোধ করব, ১৩ তারিখ আপনি মোদীর পুতুলকে নির্বাচিত করতে চান, না কি নিজের প্রাণ বিপন্ন করে লড়াই করা মহুয়া মৈত্রকে নির্বাচিত করতে চান?’’
অভিষেক বলেন, ‘‘কোনও তদন্ত হয়েছে? প্রমাণ এসেছে? বলছে পাসওয়ার্ড শেয়ার করেছে। বিজেপি নেতা, বিজেপি সাংসদদের সইয়ের পরে সংসদে ঢুকে সুরক্ষাবলয়ে ঢুকেছে। যাঁদের জন্য সুরক্ষা বিপাকে পড়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে? বিজেপির নেতা বলেছেন মোল্লা। বাঙালিদের বলছে রোহিঙ্গা। মুসলমানদের বলছে পাকিস্তানি। ভারতে যাঁরা হিংসার বীজ বপন করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি প্রধানমন্ত্রী।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছেন এখানে? তাঁর প্রতিনিধি, প্রার্থীকে দেখেছেন? মহুয়া মৈত্র সারা বছর থাকেন মানুষের কাছে। আপনারা যাঁকে ভোট দিয়েছেন, গায়ের জোরে তাঁর পদ খারিজ করেছে। আপনারা যাঁকে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছেন, বিজেপি তাঁর হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছে।’’
অভিষেকের প্রতিশ্রুতি, ‘‘ভয় পাবেন না। বিজেপি চায়, প্রমাণিত। আমরা করতে দেব না। যাঁর গলা শোনালাম, তিনি বিজেপির কোচবিহার জেলার নেত্রী দীপা চক্রবর্তী। বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমি বলছি, যত দিন আমাদের সরকার রয়েছে, মাসের শুরুতে একই ভাবে লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি বলেছে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবে। আমি বলছি না। বিজেপির নেতা বলেছে।’’ এই প্রসঙ্গে একটি অডিয়ো ক্লিপ মঞ্চে শোনান অভিষেক। সেখানে এক নেত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, তিন মাসে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ হবে।
অভিষেক বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ভিডিয়ো দেখেছেন? মহিলাদের ২ হাজার টাকা দিয়ে বিজেপি বলেছে। তাঁদের সম্ভ্রম, ইজ্জত ২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে দিল্লির কাছে বিজেপি নেতারা। মিথ্যে অভিযোগ করিয়েছে। ২০০০ টাকা নাও, মিথ্যে অভিযোগ করো। আমি বলছি না, মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর বলেছেন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘অমৃতাকে তিনটি প্রশ্ন করবেন। বিজেপি নেতারা বলছেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবে। সেই ভিডিয়ো দেখাব। তাঁরা যাঁকে রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছেন, সেই পদ কলঙ্কিত করেছেন বর্তমান রাজ্যপাল। মেয়ের বয়সি মেয়েকে শ্লীলতাহানি করেছেন। রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এই নিয়ে অবস্থান কী? তৃতীয় প্রশ্ন, সন্দেশখালি নিয়ে অনেক বলেছিল, গলা ফাটিয়েছিল, কাল সন্দেশখালি দেখেছেন তো? কাল দেখেছেন তো, প্রমাণিত হয়েছে, বাংলার মানুষকে কলঙ্কিত করতে গিয়ে, কলুষিত করতে গিয়ে বাংলার মানুষকে ছোট করেছে।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি এখানে যাঁকে প্রার্থী করেছে, কেউ তাঁকে চেনেন না। নিজের পরিচয় দেন রাজমাতা হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী ইডি রাজ, সিবিআই রাজে বিশ্বাসী। তাঁরা জিতলে গরিবের উপর অত্যাচার বাড়বে। আমাদের প্রার্থী জিতলে আমরা দিল্লির বুকে আন্দোলন করে গরিবের অধিকার আনার জন্য সরব হই। আমাদের মহিলা সাংসদ দোলা সেন, মহুয়ার চুলের মুঠি ধরেছিল, টাকা চাইতে গিয়েছিলেন বলে।’’