—প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের শাসকদল তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছিল। তবে সেই ঘোষণায় সাড়া না দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, এলাকার বাসিন্দাদের মত জানার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই মতো লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘গণভোট’-এর পথে গিয়েছিলেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল পুরপ্রতিনিধি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার রাতে ওই ওয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানে সেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয়। তাতে দেখা যায়, মোট ৫৩২০ জন বাসিন্দা ভোট দিয়েছেন। বৈধ ভোট পড়েছে ২৮৯৭টি। এর মধ্যে দেবাশিসকে নির্দল হিসাবে দেখতে চেয়ে ভোট দিয়েছেন ১৬৮৭ জন বাসিন্দা। ১০৩০ জন বাসিন্দা চান, দেবাশিস থাকুন শাসকদলেই। অন্য দিকে, পুরপ্রতিনিধিকে বিজেপি এবং সিপিএম ও কংগ্রেসের জোটে দেখতে চেয়ে ভোট পড়েছে যথাক্রমে ৪২ ও ২২টি। দেবাশিসের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উচিত, এমন মনে করছেন ২৩ জন বাসিন্দা। বাতিল হয়েছে ৯৩টি ভোট। যা দেখে দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, এক নেতার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থানের প্রশ্নে এমন গণভোট সচরাচর দেখা যায় না। এ বারের লোকসভা ভোটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন ফল বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ। প্রসঙ্গত, পুরভোটের আগে দেবাশিসকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। এর পরেই তিনি নির্দল হিসাবে লড়ে ৯৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন।
গণভোটের এই ফলের পরে দেবাশিস অবশ্য অভিযোগ করেন, ভোটের মুখে তাঁর গুরুত্ব বেড়ে গেলেও দলে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে তাঁকে অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সইতে হয়েছে। দলে ফেরার এত তাড়া কিসের, এই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। ওই পুরপ্রতিনিধির আক্ষেপ, ১৯৯৮ সাল থেকে দলে থাকা তাঁর মতো কর্মীরা আজ কার্যত ব্রাত্য। যে ভাবে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত অপমানজনক। শুধু তা-ই নয়, ওই অভিযোগ আজও প্রমাণ হয়নি। দেবাশিসের দাবি, সেই অভিযোগ মেনেও নেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাঁকে নির্দল হিসাবেই দেখতে চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দেবাশিস বলেন, ‘‘আমি এই মুহূর্তে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছি না। তবে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী যদি এই ওয়ার্ডে আমার উপরে ভরসা রাখেন, নিশ্চিত ভাবে তাঁকে সর্বাধিক ভোটে জেতানোর জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করব।’’ যদিও গোটা দমদম বিধানসভার তৃণমূল কর্মীদের একাংশের কথায়, ব্যক্তির ভূমিকা থাকলেও কেউ দলের ঊর্ধ্বে নন। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে পুরপ্রতিনিধির ফিরে আসা উচিত ছিল।
দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নিশ্চিত ভাবে আমি ভোটে সাহায্য চাইব।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘দলের তরফে দেবাশিসের প্রতি যেমন ব্যবহারই করা হোক না কেন, উনি এক জন একনিষ্ঠ কর্মী। দল এবং প্রার্থীর ওঁর উপরে নির্ভর করা উচিত।’’