দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন-এর শতবর্ষে শত বৃক্ষরোপণ। ছবি: সংগৃহীত।
১০০ বছর! তৈরি হয়েছেন শত শত পড়ুয়া। কেউ নিজের নাম লিখিয়েছেন খ্যাতির খাতায়, কেউ বা রয়েছেন সাধারণ পেশায়। একইসঙ্গে বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যমের রমরমা। বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা স্কুলছুট। এ সবের মাঝেই চলতি বছরে শতবর্ষে পদার্পণ করল উত্তর কলকাতার অন্যতম প্রাচীন স্কুল দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন।
২ জানুয়ারি ১০০তম বর্ষে পা রাখছে স্কুল। রয়েছে বছরব্যাপী নানা পরিকল্পনা। তারই মাঝে ১০০তম বর্ষের প্রথম দিনেই সবুজের আবাহনে মাতল স্কুল। ১০০টি বৃক্ষরোপণের মধ্যে শুরু হল প্রথম কর্মসূচি। এ ছাড়াও উদযাপনের প্রথম দিনে স্কুলের অনুষ্ঠানে সামিল হন স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক বাড়ির সম্পাদক স্বামী জ্ঞানলোকানন্দ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সম্পাদক প্রিয়দর্শিনী মল্লিক, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকার, মানিকতলা বিধানসভার বিধায়ক সুপ্তি পান্ডে, পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় সংসদের সম্পাদক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় কাউন্সিলর মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়, উল্টোডাঙা থানার অফিসার ইন চার্জ স্বরূপকান্তি পাহাড়ি-সহ আরও অনেকে।
প্রদীপ জ্বালিয়ে শততম বর্ষের সূচনা দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন স্কুলে। ছবি: সংগৃহীত।
১৯২৬-র ২ জানুয়ারি। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ। এরই মাঝে শ্যামবাজারে এক গাড়িবারান্দায় তৈরি হল দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন। ১০০ বছর আগে স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন কুলদাপ্রসাদ লাহিড়ী। বর্তমানে সেই ভারই সামলাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা।
প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘বর্তমানে এত বেশি মুঠোফোনে বন্দি হয়ে পড়ছেন সকলে যে, সামাজিকীকরণ হারাতে বসেছে। সবুজ গাছ মানেই প্রাণের স্পর্শ, প্রাণবন্ততার ছোঁয়া। স্কুলের ১০০ বছরের প্রথম দিনে সামাজিকীকরণের বার্তা দিতেই ১০০টি বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’ তিনি জানান, পার্ক ইনস্টিটিশন সব সময়ই একটু অন্য রকম ভাবে ভাবার চেষ্টা করে এসেছে। কাজেও ভিন্নতা থাকে। এখানে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের পাশাপাশি খেলাধুলার উপরেও জোর দেওয়া হয়। স্কুলের মধ্যেই বাস্কেট বল, টেবল টেনিস, ভলি বল-সহ আরও নানা রকম খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১০০তম বর্ষে বছর নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে স্কুলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
এক সময়ে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দশের তালিকায় নাম থাকত দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়াদের। স্কুলের প্রাক্তনীদের মধ্যে রয়েছে বহু বিশিষ্ট নাম। তালিকায় আছেন বাংলার ক্রিকেটার অরুপ ভট্টাচার্য, শৈবাল রায়চৌধুরী, সাংস্কৃতিক জগতে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় থেকে বর্তমান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। স্কুলের উন্নতির স্বার্থে গত ৩৪ বছর পাশে রয়েছে দ্য পার্ক ইনস্টিটউশনের অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন। তার অন্যতম সদস্য অরুণকুমার রায় বলেন, ‘‘স্কুল ছেড়ে গেলেও তার স্মৃতি আজীবন থেকে যায় সকলের মনে। আমাদের সংগঠন সব সময়ে চেষ্টা করে স্কুলের পাশে দাঁড়াতে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের পাশেও দাঁড়ায় আমাদের সংগঠন।’’
১৯২৬-এ শুরুর দিনগুলোয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষা সংসদের হাতে যায় দ্য পার্ক ইনস্টিটউশন। প্রথমে ছেলে-মেয়েদের পঠনপাঠন চলত একসঙ্গেই। পরবর্তীতে মেয়েদের স্কুলকে আলাদা করে দেওয়া হয়। উত্তর কলকাতায় নামজাদা স্কুলের তালিকায় অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান। তার একটাই কারণ, স্কুলের একদা ভাল ফলাফল এবং পরিবেশ। ১০০তম বর্ষের উদযাপনে এসে কাউন্সিলর মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাতেও উঠে এল সবুজায়নের বিষয়টি। স্কুলের আশপাশ সবুজে ঘেরা। সামনে দেশবন্ধু পার্কও রয়েছে পড়ুয়াদের খেলার জন্য। তিনি আরও বলেন, ‘‘১০০ বছর উপলক্ষে সারা বছর ধরে স্কুলের নানা কর্মসূচি রয়েছে। এই স্কুল যে শুধুমাত্র পড়াশোনার উপর জোর দেয়, এমনটা নয়। দাবা খেলা, সায়েন্স ফিকশন পড়ানো-সহ যাবতীয় কার্যকলাপে এখানকার পড়ুয়ারা অংশ নিয়ে থাকে।’’
অফিসার ইন চার্জ স্বরূপকান্তি পাহাড়ির কথায় উঠে এল শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে শাসন হারিয়ে যাচ্ছে। আগে শিক্ষকরা শাসন করলে বাবা-মা কখনও কিছু বলতেন না। এখনকার ছবি অনেকটাই উল্টো। তবে আমার মনে হয় কিছুটা শাসন পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নতির স্বার্থে প্রয়োজন।’’
অতিমারি পরবর্তী সময়ে বেড়ে গিয়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও ফর্ম ফিলাপ করিয়েছেন। পরিস্থিতির মোকাবিলায় শতবর্ষে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম চালু করার স্বপ্ন বুনছে দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন। ইংরেজি মাধ্যম শুরু করলে যাতে ছবিটা কিছুটা পাল্টায়, তারই আশায় কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এই স্কুল।