নিজস্ব চিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
মোট দু’হাজার স্ক্রু, সময় দেড় মাস— তৈরি হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেইল ম্যাপ। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অধিকারের কথা ভেবে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া তৈরি করলেন এই ম্যাপ। এর আগে ২০২০ সালে তৈরি করা হয়েছিল ব্রেইল গ্রাফিটি। সূত্র, ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরে বিশেষ প্রজেক্ট থাকে ‘ডিজ়েবিলিটি ইন ইন্ডিয়ান লিটারেচার’ বিষয়ের উপর। যার পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ইশান চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে এক জন দৃষ্টিহীন, বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যাক্তি। এই বিষয়ে পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি চেষ্টা করি প্রতিবন্ধীর অধিকারের কথা তুলে ধরার। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে বিভাগীয় দুই পড়ুয়া এই ম্যাপ তৈরি করে।’’
নিজস্ব চিত্র।
ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর স্তরের দুই পড়ুয়া রামেশ্বর চক্রবর্তী এবং অস্ত্যর্থা দাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত জায়গা তুলে ধরেছে এই ব্রেইল ম্যাপে। কোথায় কোন বিভাগ, কোথায় খেলার মাঠ, কোথায় সবুজায়ন রয়েছে—সব কিছুই এ বার মানচিত্র ছুঁয়ে দেখে বুঝতে পারবেন দৃষ্টিহীনেরা।
কিন্তু হঠাৎ করে ব্রেইল ম্যাপই কেন? দুই পড়ুয়ার কথায়, ‘‘ক্যাম্পাসে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়ে আমাদের মনে হয়েছে যে এই বিশাল সবুজ ক্যাম্পাস অনুধাবন করার অধিকার সকলের থাকা উচিৎ। আমাদের এই প্রচেষ্টা আমাদের সেই সাথীদের জন্য যাঁরা সচরাচর জায়গা নিয়ে বা সময় নিয়ে কোথাও দাঁড়িয়ে আমাদের সকলের প্রিয় এই ক্যাম্পাস ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পান না। যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আমরা মনে করি আমাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র খাতায় কলমে সীমিত না থাকা। সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কিছু করা। সেই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই ম্যাপটি বানিয়েছি, দেড় মাসের পরিশ্রমে।’’
নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে ইউজি আর্ট বিভাগের এক তলায় গেলেই দেখা যাবে এই ব্রেইল ম্যাপ। ইশান বলেন, ‘‘আমি ক্লাস নেওয়ার সময় ব্রেইল গ্রাফিটির বিভিন্ন বিষয় নিয়েই আলোচনা করতাম। তার পরই এই দুই ছাত্র ছাত্রী জানান তাঁরা ব্রেইল ম্যাপ বানাবেন। প্রথম দিকে কিছুটা কিন্তু কিন্তু বোধ করলেও পরে ওঁদের কাজ দেখে অনেকটাই সাহস পেয়েছি। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অধিকারের লড়াইয়ের পথে এটি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’’ অধ্যাপকের কথায়, এটা যে শুধু ভারতবর্ষে প্রথম তা নয়, গোটা পৃথিবীতেই এই প্রথম হাতে তৈরি ব্রেইল ম্যাপ বানানো হল।