Astronomy observation facility in purulia

পঞ্চকোট পাহাড়চূড়ায় মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় নতুন পদক্ষেপ

সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের উদ্যোগে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে।

Advertisement

স্বর্ণালী তালুকদার

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪০
Share:

পঞ্চকোট পাহাড়ের মাথায় বসেছে সায়েন্টিফিক অবজ়ারভেটরি টেলিস্কোপ, তত্ত্ববধানে রয়েছেন এসএনবিএনসিবিএসের ডিরেক্টর, বিজ্ঞানী-সহ অন্যান্যরা। ছবি: সংগৃহীত।

মহাকাশ পর্যবেক্ষণের মানচিত্রে জায়গা করে নিল পুরুলিয়ার পঞ্চকোট পাহাড়। সেখানে কাজ শুরু করল পূর্ব ভারতের প্রথম মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামেই। ৮ জানুয়ারি এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে।

Advertisement

মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনের পর কেন্দ্রের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডিএসটি)-র অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজ়ার বিশ্বজিৎ সহায় বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, পড়াশোনা, গবেষণার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে অ্যাস্ট্রো ট্যুরিজমের পরিচয় করানো এবং তা কার্যকর করে তোলার জন্যও এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি কাজ করবে। আর্থিক অনুদানের ক্ষেত্রে এই কাজ করতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দ্রুতই কাজ শুরু হতে চলেছে।

এই বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং আইআইটি বম্বের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বিএন জগতাপ বলেন, “পড়াশোনার সঙ্গে পেশাগত প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের কৌশল শেখার সুযোগ তাঁদের অনেক বেশি সমৃদ্ধ করবে।”

Advertisement

প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, পূর্ব ভারতে অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স এবং অ্যাস্ট্রোনমি চর্চার জন্য একটি উন্নত পরিকাঠামোর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রয়োজন ছিল। তবে, এই কেন্দ্র চালু করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হলেও অবশেষে তা বাস্তবায়িত হল। গবেষকদের পাশাপাশি, পড়ুয়ারাও যাতে এই কেন্দ্র থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয় শিখে কাজ করতে পারেন, তার উপরেও সমান ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত বিজ্ঞানী এবং আধিকারিকরা। ছবি: সংগৃহীত।

জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র পদার্থবিদ্যার পুথিগত জ্ঞানই নয়, প্রয়োজন হাতেকলমে পর্যবেক্ষণের শিক্ষাও। তাই এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তো বটেই, গবেষণার কাজ এবং স্থানীয়দের জন্যও বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। কারণ, এই কেন্দ্রের কাজে স্থানীয় মানুষদের নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পবিত্রকুমার চক্রবর্তীর মতে, অ্যাস্ট্রোনমি এবং অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স বিষয় দু’টি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, কার্যকারী ভাবে এই বিষয় চর্চার ক্ষেত্রে পুরুলিয়ার পঞ্চকোট পাহাড়কে বেছে নেওয়ায় পড়ুয়াদের কাছে অ্যাস্ট্রোনমির মতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা তো বটেই, পেশাপ্রবেশের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি হল।

পুরুলিয়া জেলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য মহাকাশ পর্যবেক্ষণ চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে চলেছে। রঘুনাথ এসডিও বিবেক পঙ্কজের মতে, ব্যক্তিগত স্তরেও টেলিস্কোপের মাধ্যমে বৃহত্তর মহাকাশের ছবি দেখার সুযোগ যে কোনও বিজ্ঞান অনুরাগী তো বটেই, পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ার পঞ্চকোট পাহাড়ের পরিবেশ মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য যথাযথ কি না, তার জন্য পরিবেশ, অরণ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক এবং ইন্ডিয়ান মেটেরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তরফে অনুমোদন প্রাপ্তির কাজ শুরু হয়। অনুমোদন পাওয়ার পর জমি অধিগ্রহণ এবং আবহাওয়া, তাপমাত্রা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সার্ভে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়।

২০২২ থেকে প্রাথমিক ভাবে ওয়েদার স্টেশন, মোবাইল অবজ়ারভেটরি যন্ত্র বসানো এবং তা চালু করার কাজ শুরু হয়। ২০২৪-এ ১৪ ইঞ্চির সায়েন্টিফিক অবজ়ারভেটরি টেলিস্কোপও বসানো হয়েছে। রাজ্যের বন দফতর, প্রশাসনিক আধিকারিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে বিশেষ সহযোগিতায় সমস্ত বিষয়টি তত্ত্ববধানের দায়িত্বে ছিলেন এসএনবিএনসিবিএসের তিন বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক— সৌমেন মণ্ডল, রামকৃষ্ণ দাস এবং তাপস বাগ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ভাষণে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজে সহযোগিতার জন্য সমস্ত আধিকারিক, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানান সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের রেজিস্ট্রার সোহিনী মজুমদার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement