বর্জ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প ও সামগ্রির প্রদর্শনী। নিজস্ব চিত্র।
বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) এবং তার অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগী হলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সাধন ঘোষ।
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, এয়ার অ্যান্ড ওয়াটার সংস্থার তরফ থেকে এ বছরের শেষে স্কুল স্তরে এক লক্ষ পড়ুয়াকে বর্জ্য পদার্থ পুনর্ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম ‘ক্যাচ দেম ইয়ং- জিরো ওয়েস্ট অ্যান্ড সার্কুলার ইকনমিক ইন ক্যাম্পাস’। ইতিমধ্যেই সারা রাজ্যে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫০টি স্কুল। ইতিমধ্যে ৭০ হাজার পড়ুয়া এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রথম এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় বাংলার স্কুলগুলোর জন্য। সেই সময় আটটি স্কুল অংশগ্রহণ করেছিল। বর্তমানে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতা বিভিন্ন স্কুল এতে অংশগ্রহণ করছে। পাশাপাশি সেন্ট জেভিয়ার্স ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এই মিশনের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
সাধন বলেন, “অভিনব প্রক্রিয়ায় আমরা স্কুল পড়ুয়াদের বর্জ্য পদার্থের ‘রিসাইক্লিং’ করা শেখাব। যেখানে তাদের তিনটি আলাদা আলাদা রঙের ‘বিন’ দেওয়া হবে। নীল বা সাদা বিন ব্যবহার করা হবে অপচনশীল অজৈব বর্জ্য পদার্থের জন্য। যেমন কাগজ, পেন্সিল এবং রবারজাত দ্রব্য। সবুজ বিনে থাকবে, পচনশীল, জৈব বর্জ্য পদার্থ। বিশেষ করে রান্নাঘরের খাদ্য দ্রব্যজাত, মাছের কাঁটা, ডিমের খোসা, সবজি ফলের খোসা ইত্যাদি। আরেকটি থাকবে হচ্ছে লাল বিন। প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য পদার্থের জন্য। সেখানে থাকবে, ব্যাটারি ইলেকট্রনিক্স গেজেট কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ।
সাধন বলেন, “বহু স্কুলে কিচেন গার্ডেন রয়েছে। তারা নিজেদের বাগানে সব্জি চাষ করে থাকেন। সেখানে ভেজা বর্জ্য পদার্থ সার হিসাবে ব্যবহার করা হবে প্রক্রিয়াকরণের করে। শহর ও শহরতলির ক্ষেত্রে যে সমস্ত স্কুলে এ সব করার জায়গা নেই তারা, এই পচনশীল বর্জ্য পদার্থ পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের কাছে তুলে দেবে।”
এ ছাড়াও শুকনো বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য সংস্থার তরফ থেকে পুনর্ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। ১৫ দিনে এক বার তারা এগুলি সংগ্রহ করবে এবং নিজস্ব প্ল্যান্টে নিয়ে যাবে। একই ভাবে ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য সংগ্রহ করবেন তাঁরা।
শুধু তাই নয়, এই বর্জ্য ‘রিসাইক্লিং’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন হাতের কাজের জিনিসও তৈরি করা যাবে। সম্প্রতি, সন্তোষপুর অরবিন্দ বালিকা বিদ্যালয় শুকনো বর্জ্য পদার্থ 'রিসাইক্লিং' করে নানান হস্তশিল্প সামগ্রিক তৈরি করা হয়েছিল এবং তার নিলাম করা হয়। ওখানে আরও ১২ টি স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। যা বিশেষ ভাবে সাড়া ফেলেছে।
সাধন বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী বর্জ্যের সংরক্ষণ ও তার ব্যবহারের ফলে পরিবেশ যে রকম এক দিকে ভাল থাকবে তেমনই এখান থেকে অর্থ উপার্জনের একটা উপায়ও তৈরি হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ২০ লক্ষ সাধারণ নাগরিককে এই বিষয়ে সচেতন করা হবে।”