নিজস্ব চিত্র।
‘ঘর-বাড়ি’, এই শব্দের মধ্যে ‘বাড়ি’ বানানই যদি লিখে দেওয়া হয় ‘বারি’? তা হলেই বদলে যাবে শব্দের অর্থ। বাংলা শব্দ ভান্ডারে শুধু এই একটা বানানই নয়, রয়েছে আরও অনেক। বাংলা বানান কোন উপায় সহজ ভাবে ছোট পড়ুয়ারা মনে রাখতে পারে তারই উপায় বাতলাচ্ছেন ‘বানান ঠাকুমা’।
গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষিকা সুদেষ্ণা মৈত্র। ছোটদের কাছে কখনও ‘বানান ঠাকুমা’ কখনও আবার ‘গল্প দিদা’। বাংলা ভাষা কী ভাবে সহজে রপ্ত করা যায় তারই নানা কৌশল রয়েছে ‘বানান ঠাকুমা’-র ঝুলিতে।
শব্দ ছকে বাংলা পড়া।
সুদেষ্ণা মৈত্রের কথায়, ‘‘বাংলা বর্ণমালায় স, শ, ষ, র, ড়, ন, ণ, জ, য, ইত্যাদির সঙ্গে ই-কার ঈ-কারের লড়াই, উ-কার ঊ-কার এর তফাত বোঝা, মনে রাখা ছোটোদের কাছে বেশ ঝকমারি। তাই শুরুটা একটু অন্য ভাবে করলে ভাল। ছোটোদের কাছে ভাষার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। তার জন্য ছোটোদের বাংলা গান, কবিতা , ছড়া, গল্প শোনানো প্রয়োজন। ’’
নিজস্ব চিত্র।
বহু বছর স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন ছোটদের ‘গল্প দিদা’। কী ভাবে পড়ুয়াদের কাছে বাংলা ভাষা সহজ হয়ে উঠবে তাই নিয়েই কাজ করেন নিত্যদিন। তিনি বলেন, ‘‘ছোটরা যত আনন্দের সঙ্গে বর্ণমালাকে চিনবে, বর্ণের পাশে বর্ণ সাজিয়ে শব্দ বানাতে পারবে, তত ভাষার প্রতি অজান্তেই ভালবাসা গড়ে উঠবে তাদের। বর্ণ শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদে পড়ুয়াদের শব্দের খেলা শেখানো যেতে পারে। যেমন— দু’টি বর্ণ পাশাপাশি রেখে শব্দ বানানো। যেমন পথ,নথ,দম,কম, যব, টব, মত, শত, রথ। এর পর ওদের দিয়ে একটা মজার খেলা শুরু করা যেতে পারে। ওদের কাছে জানতে চাইতে হবে, শুনতে একই রকম লাগছে এই শব্দগুলি কী কী। তখনই ওরা চেষ্টা করে ঠিক বলতে পারবে পথ-রথ-নথ, দম-কম, টব-যব ইত্যাদি। শব্দ খেলার এই মিলটা ওদের কানে থেকে যাবে। যে মিল ওরা আরও বেশি করে পাবে ছড়ায়। ওদের উৎসাহ বাড়বে। নিজেরাই তখন দু’টি বর্ণের শব্দ না বানিয়ে তিনটি বর্ণের শব্দ গঠন করবে। নিজেদের সৃষ্টিতে নিজেরাই আনন্দ পাবে। এই ভাবে শব্দ তৈরি করতে করতে ছোটদের মনোজগতে শব্দের সংখ্যা বাড়বে। এটা ওদের জন্য খুব জরুরি।’’
প্রতি মাসে একটি করে কর্মশালার আয়োজন করে থাকেন সুদেষ্ণা মৈত্র। ক্ষুদে ক্ষুদে পড়ুয়ারা অংশ নেয় সেই কর্মশালায়। যেখানে গল্প বলা থেকে আরও অনেক বিষয়ে নিয়ে মেতে থাকে পড়ুয়ারা। তাঁর কথায়, ‘র’ , ‘ড়’ পার্থক্য ছোটবেলায় ধরিয়ে দিলে পরে উঁচু ক্লাসে ভুল কম হবে। ‘পরা’ আর ‘পড়া’-র অর্থের পার্থক্য বোঝাতে বলা যেতে পারে, যা গায়ে পরি তা ‘র’। আর বই পড়া, পথে পিছলে পড়া, সব ‘ড়’ হবে। ছোটদের পড়ানোর সময় বলে দিতে হবে ‘ড়’ ও ‘ঢ়’ দিয়ে বাংলায় কোন শব্দ আরম্ভ হয় না। ‘বানান ঠাকুমা’ মনে করেন, বাংলা বানানকে ছকে যদি ফেলা যায়, তা হলে ক্ষুদে পড়ুয়ারা মনে রাখতে পারবে সহজেই।