Editorial news

সঙ্কটটাকে আর বাড়তে দিলে চলে না

খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার, সঙ্কটের গভীরতম অন্তঃস্থলে গিয়ে শিকড়টাকে খুঁজে বার করা দরকার। শিশু মন বা অপরিণত মন কেন এত অবসন্ন হয়ে পড়ছে যে, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যাচ্ছে, মৃত্যুকে নিষ্কৃতির উপায় মনে হচ্ছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০১:০০
Share:

প্রতীকী ছবি: তিয়াসা দাস

মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধান। আবার একই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলাম আমরা। কৃত্তিকা পালকে আর জীবনে ফেরানো যায়নি। বুধবার যে ছাত্রী দ্বিতীয় কৃত্তিকা হতে গিয়েছিল, খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাকে। কিন্তু ফিরিয়ে আনা গেল, না কি গেল না, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল— কেন বারবার এই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদের?

Advertisement

খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার, সঙ্কটের গভীরতম অন্তঃস্থলে গিয়ে শিকড়টাকে খুঁজে বার করা দরকার। শিশু মন বা অপরিণত মন কেন এত অবসন্ন হয়ে পড়ছে যে, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে যাচ্ছে, মৃত্যুকে নিষ্কৃতির উপায় মনে হচ্ছে। তার প্রকৃত অনুসন্ধান আজ সাঙ্ঘাতিক ভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। কেউ হতাশ, কেউ অভিমানী, কেউ বিষাদগ্রস্ত, কেউ প্রতিযোগিতার অসহনীয় ভারে ন্যুব্জ। তার থেকেই জন্ম নিচ্ছে এমন কোনও চিন্তা, যা বিপর্যয়ের পথে ঠেলে দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, কেন একের পর এক ঘরে এই একই আখ্যান জন্ম নিচ্ছে? অপরিণত বয়সেই বারবার জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা কেন আসছে?

কিছুটা হয়তো আমরা অনেকেই বুঝতে পারি। সামাজিক কাঠামোয় বদল এসে গিয়েছে। পারিবারিক কাঠামোগুলোও ভেঙেচুরে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। যে মেয়েটা দ্বিতীয় কৃত্তিকা হয়ে উঠেতে যাচ্ছিল, স্কুলের নিরাপত্তার কর্মীদের তৎপরতায় যাকে শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হল, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে কণ্ঠস্বরে একরাশ অভিমান তার। বাবা-মা নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, তাকে দেওয়ার মতো সময় কারও হাতে নেই, তাই শেষ করে দিতে চেয়েছিল নিজেকে— মেয়েটা এমনই জানিয়েছে। অর্থাৎ সেই পারিবারিক কাঠামো বদলে যাওয়ার ছাপ। আগেকার একান্নবর্তী পরিবার বা বড় পরিবারে বাবা-মা সময় দিতে না পারলেও ছোটদের দেখভাল করা বা সঙ্গ দেওয়ার মতো আরও অনেকে থাকতেন। আজকের আণবিক পরিবারগুলোয় সে অবকাশ কম। কিন্তু চাইলেই যে আগেকার পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া যাবে, এমন নয়। চাইলেই যে যুগের প্রবাহকে অস্বীকার করে নিজেদেরকে এই প্রতিযোগিতার জীবন থেকে অেক দূরে সরিয়ে রাখা যাবে, এমনও নয়। অতএব যুগের বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই সমাধান খুঁজতে হবে আমাদের। সেই সন্ধানটা অবিলম্বে, এই মুহূর্ত থেকে শুরু হওয়া জরুরি।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: ‘সবাই ব্যস্ত, কেউ ভালবাসে না’, ফের কলকাতায় নামী স্কুলের শৌচাগারে আত্মহত্যার

অনেকগুলো দিক থেকে ঘিরে ফেলতে হবে সঙ্কটটাকে। প্রত্যেক অভিভাবককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে সন্তানের মানসিক স্থিতির কথা। প্রত্যেককে যে করেই হোক সময় বার করতেই হবে সন্তানের জন্য বা পরিজনদের জন্য। যাঁর পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই হোক। প্রয়োজনে নিয়মিত অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় অন্তর সবাই মিলে মনোবিদের মুখোমুখি হতে হবে। স্কুলে-কলেজে প্রতিযোগিতাকে স্বাস্থ্যকর রাখার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলে স্কুলে সব পড়ুয়ার নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই সমস্ত বন্দোবস্ত অত্যন্ত সংগঠিতভাবে হওয়া দরকার। রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক উদ্যোগ তার জন্য অবশ্যই জরুরি। আবার আমাদের নিজেদের দিক থেকে অর্থাৎ সমাজের প্রতিটি ক্ষুদ্রতম একক থেকেও উদ্যোগটা উঠে আসা জরুরি। আবার বলছি, অবিলম্বে জরুরি, এই মুহূর্ত থেকে জরুরি। না হলে সঙ্কট দ্রুত গভীরতর হবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement