Truck

ঝুঁকির যাত্রা

অস্ট্রেলিয়াতে নিয়ম রহিয়াছে, একটানা বারো ঘণ্টা চালাইবার পরে অন্তত ছ’ঘণ্টা বিশ্রাম লইতে হইবে ট্রাকচালককে। কানাডায় একবারে তেরো ঘণ্টা চালাইবার পর আট ঘণ্টা বিশ্রাম বাধ্যতামূলক। ভারতে এমন কোনও বিধি নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০ ২২:৫৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়াতে নিয়ম রহিয়াছে, একটানা বারো ঘণ্টা চালাইবার পরে অন্তত ছ’ঘণ্টা বিশ্রাম লইতে হইবে ট্রাকচালককে। কানাডায় একবারে তেরো ঘণ্টা চালাইবার পর আট ঘণ্টা বিশ্রাম বাধ্যতামূলক। ভারতে এমন কোনও বিধি নাই। তদুপরি এ দেশে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রটি বহুলাংশে অসংগঠিত। চালক ও কর্মীদের অধিকাংশই মৌখিক চুক্তিতে কাজ করিয়া থাকেন। ফলে বিধি কার্যকর হইলেও ট্রাকচালকেরা তাহা দাবি করিতে পারিতেন কি না, তাহাও বিচার্য। বিশ্রাম না লইয়া দীর্ঘ সময় ট্রাক চালাইয়া তাঁহারা নিজের ও অপরের বিপদ ডাকিয়া আনিতেছেন। বৎসর দুই পূর্বের এক সমীক্ষায় এমন চালকেরও সন্ধান মিলিয়াছে, যিনি এক টানা তিন দিন ট্রাক চালাইয়াছেন। ক্লান্তি ভুলিতে, সজাগ থাকিতে, তাঁহারা নানা উপায় অবলম্বন করেন। তাহার অন্যতম, মাদক সেবন। সম্প্রতি একটি জাতীয় স্তরের সমীক্ষায় জানা গিয়াছে, কলিকাতার ট্রাকচালকেরা দেশের মধ্যে সর্বাধিক মাদক সেবনে অভ্যস্ত। এই শহরের চালকদের মধ্যে চার জনের তিন জনই গাঁজা, ভাং, চরস, এবং মেথিড্রিন জাতীয় দ্রব্য নেশার জন্য ব্যবহার করিয়া থাকেন। সংবাদটি ভয়াবহ। এই মাদক-নির্ভরতায় ট্রাকচালক, ট্রাকের অন্যান্য আরোহী যেমন ঝুঁকির সম্মুখীন, ততটাই প্রাণসংশয় অন্য গাড়িচালক এবং পথচারীদের। ২০১৮ সালে ভারতে পথ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, এমন ট্রাকচালক ও ট্রাকযাত্রীর সংখ্যা ১৫,১৫০। ট্রাক দুর্ঘটনার ফলে প্রতি বৎসর প্রাণ হারাইতেছেন তেইশ হাজার মানুষ।

Advertisement

সমীক্ষার এই তথ্যগুলি এক কঠিন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাহা এই যে, পণ্য পরিবহণের কাজটি অর্থনীতির জন্য জরুরি হইলেও তাহার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আজও এ দেশে হয় নাই। অসংগঠিত ক্ষেত্র হইয়া থাকিবার জন্য ট্রাকচালকেরা নিরাপত্তাহীন, নিঃসঙ্গ অবস্থায় দীর্ঘ সময় পরিশ্রম করিলেও তাঁহাদের রোজগারের উন্নতি হয় নাই। সমীক্ষায় অনেকেই জানাইয়াছেন, পূর্বের তুলনায় তাঁহাদের রোজগার কমিয়াছে। যে হেতু তাঁহাদের নিয়োগের কোনও নিশ্চয়তা নাই, কাজ করিলে তবেই টাকা মেলে, ফলে নানা রকম ঝুঁকি বুঝিলেও তাহা অগ্রাহ্য করিয়া কাজ করিতে আগ্রহী থাকেন চালকেরা। যেমন, ভারতের নানা শহরে চক্ষু পরীক্ষার ক্যাম্প করিয়া দেখা গিয়াছে যে অধিকাংশ ট্রাকচালকের চোখের সমস্যা রহিয়াছে। কিন্তু বিনা পয়সায় চশমা পাইলেও কাজ হারাইবার ভয়ে তাঁহারা চশমা পরিতে চান না। ইহা দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও কত গুণ বাড়াইয়া দেয়, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

নিদ্রাহীন, ক্লান্ত শরীরে দীর্ঘ সময় কাজ করিবার বাধ্যবাধকতা প্রতি দিন কত লক্ষ পরিবহণ কর্মীকে বিপন্ন করিতেছে, কে বলিতে পারে। ইহার অন্যতম কারণ, পথ নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনার প্রতিরোধ সম্পর্কে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের উদাসীনতা এবং পরিবহণ দফতরের কর্মীদের দুর্নীতি। অতিরিক্ত পণ্য চাপাইবার ফলে ভারসাম্য হারাইয়া পতন ট্রাক দুর্ঘটনার এক প্রধান কারণ। অপর একটি কারণ কমিশন প্রথা। ঠিক সময়ে পৌঁছাইলে বকশিশ, নচেৎ জরিমানা, এই নিয়মের ফলে প্রাণ হাতে করিয়া ট্রাক ছুটাইয়া চলেন চালকেরা। সামান্য পারিশ্রমিক, দীর্ঘ শ্রম, ত্রুটিপূর্ণ নজরদারি, এই সকল কারণ ট্রাকপরিবহণকে কর্মীদের জন্য বিপজ্জনক করিয়া তুলিয়াছে। সরকার কবে সতর্ক হইবে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement