DYFI Brigade Rally

সম্ভাবনা

রাজ্যের নির্বাচনী মানচিত্রে আপাতত প্রান্তিক একটি দল এবং তার যুব সংগঠনের সভা-সাফল্য নিয়ে আলোচনার বিশেষ কোনও প্রয়োজন থাকত না, যদি না পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির পক্ষে তার বৃহত্তর তাৎপর্য থাকত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৫
Share:

ব্রিগেডে ডিওয়াইএফআইয়ের সভায় বক্তব্য রাখছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

জনসমুদ্র স্বভাবত চিত্তাকর্ষক। বিশেষত, রাজনীতির পরিসরে সেই আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য। জনসভায় যথেষ্ট ভিড় না হলে দলীয় নায়কনায়িকারা হতাশ এবং ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, যথেষ্ট ভিড় না হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অনেক সময় ‘অনিবার্য কারণ’-এ নির্বাচনী জনসভায় বা সমবেত শাস্ত্রপাঠের আসরে উপস্থিত হন না। সুতরাং, ‘ঐতিহাসিক’ ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর সভায় রবিবারের জনসমুদ্র দেখে সেই সংগঠনের তথা তার মাথার উপরে বিরাজমান সিপিআইএম দলের পরিচালক ও কর্মীরা উচ্ছ্বসিত হয়ে থাকলে তাঁদের দোষ দেওয়া চলে না। ভিড় এবং ভোট যে এক নয়, সেই সুকঠিন সত্য তাঁরা আগেই ঠেকে শিখেছেন— ব্রিগেডে বামপন্থী ও শরিক দলগুলির সভায় জনসমুদ্রে জোয়ার এলেও ভোটের অঙ্কে ভাটার টান অব্যাহত থেকেছে। সম্ভবত এই বোধের প্রেরণাতেই রবিবারের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরা জোর গলায় ঘোষণা করেছেন: কেবল ভোটের অনুপাত বা বিধায়ক-সাংসদের সংখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচার হয় না। কথাটি ভুল নয়, তুচ্ছও নয়। তবু একটি সংশয় থেকেই যায়: নাগালে নেই বলেই আঙুরফল টক বলে সাব্যস্ত হল না তো?

Advertisement

তার পরেও একাধিক কারণে রবিবারের জনসমুদ্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রথমত, এই সভায় যাঁরা এসেছিলেন, ধরে নেওয়া যায় যে তাঁরা আপন ইচ্ছায় বা তাগিদেই এসেছিলেন, ক্ষমতা, বদান্যতা বা হুমকির সাহায্যে তাঁদের জড়ো করা হয়নি। এই মূল্যবান স্বতঃস্ফূর্তি সুলভ নয়, বামফ্রন্ট জমানাতেও দীর্ঘকাল যাবৎ সুলভ ছিল না। দ্বিতীয়ত, সভার আয়োজক এবং বক্তা তথা অগ্রণীরা ছিলেন প্রধানত তরুণ রাজনীতিক। দলের প্রবীণ নেতাদের, স্বাভাবিক ব্যতিক্রম সাপেক্ষে, দেখা গিয়েছে শ্রোতা তথা অভিভাবকের আসনে। এই দৃশ্যও সুপরিচিত নয়। ‘সবুজের অভিযান’ কবিতার রচয়িতা দেখে অখুশি হতেন না যে, সমাগত বিপুল জনতা নবীনদের কথা শুনছেন, তাঁদের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। সেই উচ্ছ্বাসে ব্যক্তি-মোহ অনুপস্থিত ছিল না, কিন্তু আজকের রাজনীতিতে, আবেগের ভূমিকা কেন বাধ্যতে? তৃতীয়ত, এই সভার পিছনে ছিল রাজ্য জুড়ে ডিওয়াইএফআই-এর পঞ্চাশ দিনব্যাপী ‘ইনসাফ যাত্রা’, যার মধ্য দিয়ে আয়োজকরা জনসংযোগের ধারাবাহিক অনুশীলন করেছেন। সুতরাং, মনে করার কারণ আছে যে এই মহাসমাবেশ আকস্মিক নয়, একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পরিণাম। জনসমুদ্র অনেক পরিশ্রমী স্রোতের ধারায় পুষ্ট হয়েছে।

রাজ্যের নির্বাচনী মানচিত্রে আপাতত প্রান্তিক একটি দল এবং তার যুব সংগঠনের সভা-সাফল্য নিয়ে আলোচনার বিশেষ কোনও প্রয়োজন থাকত না, যদি না পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির পক্ষে তার বৃহত্তর তাৎপর্য থাকত। তাৎপর্য দ্বিমাত্রিক। মাত্রা দু’টি স্বতন্ত্র, কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। প্রথমত, শাসক এবং প্রধান বিরোধী দলের নিত্যকর্মপদ্ধতির তাড়নায় যে কদর্য এবং পঙ্কিল আবর্ত এই রাজ্যের দলীয় রাজনীতির পরিসরটিকে গ্রাস করেছে, তার প্রতিস্পর্ধী হিসাবে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এখন অত্যন্ত জরুরি। বস্তুত, বিরোধী রাজনীতিতে বহু স্বর এবং বহু মতের বিকাশ পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের অপরিহার্য রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই প্রতিস্পর্ধার সার্থকতা কেবল বিরোধী দলের সংখ্যা বা বৈচিত্রের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে তাদের ঘোষিত নীতি এবং আদর্শগত অবস্থানের উপর। ইনসাফ যাত্রার সূত্র ধরে রবিবারের সমাবেশ থেকে রুটি রুজি কর্মসংস্থান শিক্ষা স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাজ্য রাজনীতির ‘মূল অ্যাজেন্ডা’ পুনরুদ্ধারের যে আহ্বান শোনা গিয়েছে, যে কোনও সুচেতন এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক তার পক্ষে প্রবল সমর্থন জানাবেন। কোন দল এই আহ্বান জানাচ্ছে, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল, পশ্চিমবঙ্গকে যদি তার অন্ধকূপ থেকে উদ্ধার পেতে হয়, তবে ওই আহ্বানকেই রাজনীতির অভিমুখে পরিণত করা অত্যাবশ্যক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement