Wastage of Water

জলের মতো কঠিন

জলের মিটার বসানোর পাইলট প্রকল্প কলকাতায় চালু হয়েছে অনেক আগেই, যখন মেয়র পদে আসীন ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৬:৫১
Share:

প্রতি দিন পুরসভার সরবরাহ করা পরিস্রুত জলের ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ নষ্ট হয়। —ফাইল চিত্র।

মেয়র ফিরহাদ হাকিম যথার্থই বলেছেন, জল অপচয় রোধ করা না গেলে শহর কলকাতায় জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। গত এক দশকে পুরসভা পানযোগ্য জলের উৎপাদন বাড়িয়েছে দৈনিক ২ কোটি ৮৫ লক্ষ গ্যালন থেকে ৫ কোটি ১০ লক্ষ গ্যালন, কিন্তু তাতেও চাহিদা মেটাতে পারছে না, স্বীকার করেছেন মেয়র। এর কারণ, প্রতি দিন পুরসভার সরবরাহ করা পরিস্রুত জলের ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ নষ্ট হয়। প্রশ্ন হল, অপচয় হচ্ছে জেনেও তা কেন রোধ করতে পারছে না পুরসভা? কলকাতাতেই প্রতি গ্রীষ্মে যাদবপুর, কসবা, বেহালা-সহ বেশ কিছু ওয়র্ডে তীব্র জলকষ্টের শিকার হন বহু মানুষ। তা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ পরিস্রুত জল নষ্ট হচ্ছে, তার দায় কার? পুরকর্তাদের মতে, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ জলের মিটার বসানো নেই গৃহস্থ বাড়ি বা বৃহৎ আবাসনে। দিনে মাথাপিছু দেড়শো লিটার জল এক ব্যক্তির প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কোথায় নিয়মিত তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে, অথবা মাটির নীচে পাইপের ছিদ্র থেকে জল নষ্ট হচ্ছে কোথায়, তা বলে দিতে পারে জলের মিটার।

Advertisement

জলের মিটার বসানোর পাইলট প্রকল্প কলকাতায় চালু হয়েছে অনেক আগেই, যখন মেয়র পদে আসীন ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। বছর ছয়েক আগে এক নম্বর বরো এক থেকে পাঁচ নম্বর ওয়র্ডের সমস্ত বাড়িতে মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। কাশীপুর, টালা, সিঁথি, বেলগাছিয়া, নর্দার্ন অ্যাভিনিউ এলাকায় সেই কাজ শেষ হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা, পূর্ব কলকাতা ও জোকায় কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল এ বছরের গোড়ায়। কাজের এমন শ্লথ গতির জন্য দায়ী কে? যে সব জায়গায় মিটার বসেছে, সেখান থেকেই বা অপচয় সংক্রান্ত কী তথ্য মিলেছে, প্রতিরোধের জন্য কী পরিকল্পনা করা হয়েছে? মেয়র সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। নগরবাসী কেবলই দেখছে, গৃহস্থের ট্যাঙ্ক উপচে, রাস্তার মুখহীন কলে, ভূগর্ভে পাইপের ছিদ্র দিয়ে বিপুল জল নষ্ট হচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, জলের অপূর্ণ চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভের জল তুলছে বহু আবাসন। এই জলের পরিমাণ কত, সে তথ্য জানার উপায়ও নেই পুরসভার। কিন্তু কলকাতায় ভূগর্ভের জলের স্তর যে ক্রমশ নেমে যাচ্ছে, সে তথ্য মিলেছে। ফলে পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের ভয়ও বাড়ছে।

বিষয়টি যে পুরসভার কাছে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি, তার কারণ সম্ভবত রাজনৈতিক। জলের মিটার বসালেই গুঞ্জন শুরু হয়, এ বার জলকর বসবে। হয়তো সেই জন্যেই মিটার বসানোয় রাজনৈতিক অনীহা রয়েছে। দিল্লিতে কিন্তু আপ সরকার জলের মিটার বসাতে পেরেছে একুশ লক্ষেরও বেশি গৃহস্থ বাড়িতে, তার মধ্যে রয়েছে অবৈধ বস্তিও। বিনামূল্যে সরবরাহ করা জলের ঊর্ধ্বসীমা করেছে প্রতি মিটারে দৈনিক ৬৬৭ লিটার। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলের অপচয় এড়াতে সকাল-বিকেল অল্প সময় জল সরবরাহের নীতিতে হিতে বিপরীত হয়— অনেক ব্যবসায়ী সেই সময়ে জল ভরে রেখে, পরে তা বিক্রি করেন বস্তিবাসীদের। জলের মিটার বসিয়ে অপচয়ের হিসাব, এবং বিনামূল্যে পাওয়া জলের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া, এই দুটোই জল বাঁচানোর কার্যকর উপায় হতে পারে। কঠিন বলেই কর্তব্যে অবহেলা করা চলে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement