—প্রতীকী ছবি।
হাতে ছিল মাত্র পনেরো দিন। তার মধ্যেই পাল্টানো হল মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর সময়। এত দিন মাধ্যমিক শুরু হত সকাল ১১টা ৪৫ থেকে। শেষ হত বিকেল তিনটেয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই সময়ই পরিবর্তিত হয়ে এই বছর তা শুরু হবে সকাল ৯টা ৪৫ থেকে, শেষ হবে দুপুর একটায়। শুধুমাত্র মাধ্যমিকই নয়, রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সময়ের এই পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সেই পরীক্ষাগুলিও মাধ্যমিকের মতোই সকাল ৯টা ৪৫ থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চলবে। শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের বৃত্তিমূলক ১৩টি বিষয়, মিউজ়িক, ভিজুয়াল আর্টস এবং শারীরশিক্ষার পরীক্ষা ৯টা ৪৫ থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে দুপুর ১২টায়।
কেন এই বদল? পর্ষদ এবং সংসদ কর্তাদের দাবি, পরীক্ষার্থীদের সুবিধার স্বার্থে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, সকালে পরীক্ষা শুরু হলে যানজট তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। তাই সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোয় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। আবার, পরীক্ষা দুপুরেই শেষ হওয়ায় তারা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিতে পারবে। পূর্বের সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা চললে শীতের বিকেলে পরীক্ষা-পরবর্তী কাজগুলি সম্পন্ন করতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অনেক দেরি হয়ে যেত। মফস্সল বা জঙ্গলমহলের পরীক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রেও অসুবিধায় পড়তে হত। যুক্তিটি অবহেলার নয়। তবে, এই সকল ভাবনাচিন্তা করতে গিয়ে জানুয়ারির প্রথমার্ধ পেরিয়ে গেল কেন, সেই প্রশ্নটিও তোলা প্রয়োজন। তা ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা আদৌ সন্তোষজনক নয়, সেখানে শীতের সকালে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবে কী করে? তাদের এক বৃহৎ অংশই যাতায়াতের জন্য গণপরিবহণের উপর নির্ভরশীল। ঠান্ডার দিনে সকালে যানজট কম থাকে পর্যাপ্ত বাস, অটো, রিকশা না থাকার কারণে। কুয়াশার কারণে লোকাল ট্রেনও প্রায়শই বিলম্বে চলে। এমতাবস্থায় সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনো উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। অন্য দিকে, এ-হেন পরীক্ষায় শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীরাই নন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরাও জড়িয়ে থাকেন। পরীক্ষা শুরুর বহু পূর্বে প্রয়োজনীয় কাজ সুসম্পন্ন করতে তাঁদের কেন্দ্রে পৌঁছে যেতে হয়। তাঁরাই বা শীতের ভোরে যাতায়াত করবেন কী উপায়ে?
বস্তুত, যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বিষয়ে বড় কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখা জরুরি। এ বিষয়ে হঠকারিতার কোনও জায়গা নেই, কারণ এই পরীক্ষাগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িয়ে থাকে। রাজ্যে সরকারি এবং সরকার-পোষিত বিদ্যালয়গুলির যতই হাঁড়ির হাল হোক, এখনও যে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসার পরীক্ষায় বসে, সেই সংখ্যা বিচারে অবশ্যই বাড়তি সতর্ক থাকা উচিত। মাধ্যমিক পরীক্ষার দিন এবং সূচি ঘোষণা যেখানে যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই করা হয়, সেখানে অন্য যে কোনও পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম মানতে হত। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অসুবিধাগুলি জেনে নিয়ে সেইমতো ব্যবস্থা করলে শেষ মুহূর্তের বিভ্রান্তি এড়ানো সহজ হত। এক দিকের সুবিধার কথা ভাবতে গিয়ে অন্য অসুবিধার মধ্যে ঠেলে দেওয়া কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় হতে পারে না।