Lightning Strike

অশনি-সঙ্কেত

বর্তমানে রাজ্যে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম খবর পাওয়া এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা করে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হলেও বজ্রপাতের ক্ষেত্রে অনুরূপ পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ০৯:৩২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টির দেখা পেয়েছে একটানা অগ্নিবাণে দগ্ধ, ক্লান্ত দক্ষিণবঙ্গ। কিন্তু অস্বস্তি বাড়িয়েছে বৈশাখী বৃষ্টির দোসর বজ্রপাতের পরিসংখ্যান। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে শুধুমাত্র কলকাতাতেই পড়েছে ৪৫টি বাজ। গ্রীষ্মের বিকেলে ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, বজ্রপাত বঙ্গদেশের চেনা ছবি। কিন্তু গত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তার কারণ। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এ রাজ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। এবং ফাঁকা জায়গায় বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি— এই ধারণাকে উড়িয়ে দিয়ে কলকাতার মতো শহরেও প্রতি বছর বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

বর্তমানে রাজ্যে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম খবর পাওয়া এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা করে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হলেও বজ্রপাতের ক্ষেত্রে অনুরূপ পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীন গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট অবজ়ার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিল-এর তরফ থেকে অভিযোগ উঠেছিল, বাজ পড়া নিয়ে সতর্কতা জারির বিষয়ে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাজ পড়ে প্রাণহানি ঠেকাতে ২০১৯ সালে দেশ জুড়ে এক সঙ্গে ‘লাইটনিং রেসিলিয়েন্ট ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন’ শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও এই রাজ্যে বাজ পড়ে প্রাণহানি ঠেকানো যায়নি। বছরকয়েক আগে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ‘লাইটনিং সেন্সর’ ব্যবস্থা তৈরি হলেও তা বিশেষ কাজে আসেনি। কখনও মাত্র দশ মিনিট, কখনও আধ ঘণ্টা আগে বজ্রপাতের খবর মিললে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা যায় কি? উঁচু বাড়ি, খোলা মাঠ বা গাছের তলা ছাড়াও বিবিধ উপায়ে বজ্রপাত আঘাত হানতে পারে। যেমন— বাজ পড়ার সময় জলের কল-সহ ধাতব জিনিসের ব্যবহার বিপজ্জনক। সেই বিষয়গুলি রাজ্যের সর্বত্র সাধারণের মধ্যে বিশদে প্রচারিত হয়নি।

একই সঙ্গে কেন ঘিঞ্জি শহরাঞ্চলেও বাজ প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠছে, এর সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে কি না— সেই বিষয়গুলিও সাধারণের কাছে আরও স্পষ্ট হওয়া জরুরি। উষ্ণায়নের কুপ্রভাব হিসাবে যে সকল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা, বজ্রপাতও তার অন্তর্ভুক্ত কি না, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা হিসাবে যে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, এই রাজ্যেও তার প্রয়োগ করা যায় কি না, সে নিয়ে বিশদ চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন রাজ্য সরকারের। তবে, নিঃসন্দেহে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রাণহানি ঠেকানোর পক্ষে অত্যাবশ্যক। বারংবার সতর্ক করা সত্ত্বেও বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে খেলা, উঁচু ছাদে মোবাইলে কথা বলা আটকানো যায়নি। শহরে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়েছে এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতা। অন্য দিকে, প্রকৃত জ্ঞানের অভাবও বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা সময়ে শুরু করতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বজ্রপাতে আহতদের স্পর্শ করলে নিজেরাও বিদ্যুৎপৃষ্ট হতে পারেন ভেবে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন না। এই ভ্রান্ত ধারণাও দূর করা আবশ্যক। কালবৈশাখীর সময় পেরিয়ে যায়নি, বর্ষা শুরুর বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির দিনও সমাগতপ্রায়। বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন সরকার থেকে সাধারণ মানুষ— উভয় পক্ষেরই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement