Employment

কাজের গুণমান

২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২, এই পর্বে ভারতে কর্মসংস্থানের ছবিটি কী রকম, অর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটক ও অন্যান্যের সাম্প্রতিক গবেষণায় তা ধরা পড়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পক্ষীরাজ যদি হবে, তাহলে ন্যাজ নেই কেন?” স্বভাবতই অর্থমন্ত্রী এই জটিল প্রশ্নটির ধারেকাছেও যাননি— ভারতীয় অর্থব্যবস্থা যদি সত্যিই বছরে গড়ে সাত শতাংশ হারে বাড়ে, তা হলে যথেষ্ট উন্নত মানের কর্মসংস্থান নেই কেন, সে প্রশ্নের উত্তর তাঁর সাতান্ন মিনিটের বাজেট বক্তৃতার কোথাও নেই। উন্নত মানের কর্মসংস্থান বলতে কী বোঝায়, গোড়ায় সেই কথাটি স্পষ্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। কর্মসংস্থান বা বেকারত্ব সম্বন্ধে দু’ধরনের পরিসংখ্যান সচরাচর চোখে পড়ে— একটি কর্মসংস্থানের বা বেকারত্বের হার; অন্যটি লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট। কর্মক্ষম বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে যত জন প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ খুঁজছেন, তাঁদের যত শতাংশ কাজ পাচ্ছেন, তা হল কর্মসংস্থানের হার (যত শতাংশ কাজ খোঁজা সত্ত্বেও পাচ্ছেন না, সেটি বেকারত্বের হার); কর্মক্ষম বয়সের জনগোষ্ঠীর যত শতাংশ কাজ খুঁজছেন, সেটি হল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট। অর্থাৎ, বেকারত্বের হার কমলেই বলা যাবে না যে, আগের চেয়ে বেশি লোক কাজ পাচ্ছেন— বড় জোর বলা যাবে, যত লোক প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ খুঁজছেন, তাঁদের মধ্যে বেশি অনুপাতে লোক কাজ পাচ্ছেন। আগের তুলনায় কম লোক কাজ খুুঁজছেন কি না, তা জানার জন্য লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেটের দিকে তাকাতে হবে। কিন্তু, যদি দেখা যায় যে, দু’টি মাপকাঠিতেই আগের তুলনায় বর্তমান সময় এগিয়ে রয়েছে, অর্থাৎ লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেটও বেড়েছে, কর্মসংস্থানের হারও বেড়েছে, তা হলেও কি বলা যাবে যে, সত্যিই মানুষ অন্তত কর্মসংস্থানের নিরিখে আগের চেয়ে ভাল আছেন? এখানেই কর্মসংস্থানের গুণগত মানের প্রশ্ন। আলোচ্য হারগুলির সমস্যা হল, পারিবারিক কৃষিকাজে বিনা বেতনের শ্রম আর কর্পোরেট সংস্থার উচ্চপদে চাকরির মধ্যে কোনও পার্থক্য এই হারে প্রতিফলিত হয় না। উভয়ই কর্মসংস্থান। কিন্তু, সংখ্যাতত্ত্ব বা অর্থশাস্ত্রের একটি অক্ষরও জানা নেই, এমন কোনও ব্যক্তিও বুঝবেন যে, এই দুইয়ের মধ্যে আদৌ কোনও তুলনাই হয় না।

Advertisement

২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২, এই পর্বে ভারতে কর্মসংস্থানের ছবিটি কী রকম, অর্থনীতিবিদ মৈত্রীশ ঘটক ও অন্যান্যের সাম্প্রতিক গবেষণায় তা ধরা পড়েছে। বিস্তারিত আলোচনায় আগ্রহীরা প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি পাঠ করতে পারেন, তবে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের ফলে যে ছবিটি উঠে আসছে, তার মূল কথাগুলি এই রকম— এক, বেকারত্বের বোঝা অনুপাতের চেয়ে বেশি হারে এসে পড়ছে তরুণতর জনগোষ্ঠীর উপরে; দুই, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটেছে স্বনিযুক্ত শ্রেণিতে, বেতনযুক্ত চাকরি এবং কাজপিছু আয়ের চাকরি, উভয় ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের হার কমেছে; স্বনিযুক্ত শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পারিবারিক ক্ষেত্রে অবৈতনিক শ্রমিকের অনুপাত। মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই বাড়া-কমার পিছনে শুধু চাকরি হারিয়ে পারিবারিক ক্ষেত্রে কাজ খুঁজে নেওয়ার মতো ঘটনা নেই— এই একই সময়কালে লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট বেড়েছে, অর্থাৎ নতুন যাঁরা কাজ খুঁজতে এসেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশের ঠাঁই হয়েছে এমন নিম্নমানের কাজে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, কোনও শ্রেণির স্বনিযুক্ত কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রকৃত আয় কার্যত বাড়েনি। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে স্পষ্ট যে, অর্থমন্ত্রী যা-ই বলুন না কেন, ভারতে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি অতি উদ্বেগজনক— তার গুণগত মান এতই নিচু যে, পরিসংখ্যানকে স্ফীত করা ব্যতীত তার আর বিশেষ ভূমিকা নেই। এই অবস্থা কেন, সেই কারণটি অনুমান করা চলে— বাজারে প্রকৃত কাজের অভাব; চাহিদাও নিম্নমুখী, ফলে নিজস্ব ব্যবসাও অনেকের ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়েছে— অতএব, একেবারে বসে থাকার বদলে যেমন তেমন কাজ খুঁজে নিতে হচ্ছে অনেককেই। নেতারা এই অবস্থাতেও গর্বিত হতে পারেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের কি তার শরিক হওয়ার উপায় আছে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement