Israel Palestine Conflict

‘মূল্যহীন’ প্রাণ

আন্তর্জাতিক স্তরে তো বটেই, নিজের দেশেও, বিশেষত বন্দিদের পরিবারের তরফে প্রবল চাপের মুখে ছিলেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৮
Share:

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজ়া। ছবি: রয়টার্স।

সাত সপ্তাহের নিরন্তর সামরিক হামলার মাঝে অবশেষে কি ক্ষণিকের বিরতি পেলেন বিধ্বস্ত প্যালেস্টাইনিরা? আন্তর্জাতিক স্তরে বহু প্রচেষ্টার পরে স্থির হল— দুই তরফে বন্দি বিনিময়কালে যুদ্ধবিরতি থাকবে চার দিন। ইজ়রায়েল ঘোষণা করল, উক্ত সময়ে গাজ়ায় আটক অন্তত পঞ্চাশ জন বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে হামাসকে। বিনিময়ে তাদের কারাগারে এ-যাবৎ বন্দি দেড়শো জন প্যালেস্টাইনি মহিলা এবং শিশুকে ফেরত দেবে তারা। অক্টোবরের গোড়ায় ইজ়রায়েলে সন্ত্রাসবাদী হামলাকালে ইজ়রায়েলি এবং বিদেশি মিলিয়ে দুই শতাধিকের বেশি ব্যক্তিকে অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। চুক্তিমতো দু’তরফেই ইতিমধ্যে বন্দি আদানপ্রদান হয়েছে। অন্য দিকে, যুদ্ধবিরতির ফলে গাজ়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে মানবিক ত্রাণকার্য কিছুটা হলেও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক স্তরে তো বটেই, নিজের দেশেও, বিশেষত বন্দিদের পরিবারের তরফে প্রবল চাপের মুখে ছিলেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার মধ্যে এতটুকু বিরতিও যে সম্ভব হল, তার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে কাতার। সে দেশের রাজধানী দোহায় একটি রাজনৈতিক দূতাবাস রয়েছে হামাসের। উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মতো সাম্প্রতিক কালে ইজ়রায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলেও, তাদের সঙ্গে জনসংযোগের পথটি খোলা রাখে কাতার সরকার। ইজ়রায়েলের প্রতি আন্তরিক সমর্থন সত্ত্বেও আমেরিকাও খানিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আলোচনা-পর্বে এক দিকে কাতারের শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং অন্য দিকে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু-র সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তা ছাড়া ছিল মিশর, যারা বহু দশক ধরেই ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে এসেছে। ৭ অক্টোবরে হামাস আক্রমণের পরেই দুই তরফের মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি চালু হলেও, প্রাথমিক স্তরে তার গতি ছিল মন্থর। দু’তরফে তথ্যের আদানপ্রদান হচ্ছিল মূলত দোহা বা কায়রোর মাধ্যমে, যা ছিল সময়সাপেক্ষ।

এর মধ্যেও ঘোষিত হয়েছে হামাস-কে সম্পূর্ণ নির্মূল করে দেওয়ার লক্ষ্যেই এখনও ইজ়রায়েল স্থির। তাই যুদ্ধবিরতি কত দিন স্বীকার করবে ইজ়রায়েল, এটাই প্রশ্ন। প্যালেস্টাইনিরা বিলক্ষণ জানেন তাঁদের ক্ষণিকের স্বস্তির ইতি কেবল সময়ের অপেক্ষা, তাঁদের ভবিষ্যৎ এখন আক্ষরিক অর্থেই ‘ভাবনাতীত’। হামাসের জঙ্গি হামলার ইজ়রায়েলি সামরিক প্রত্যুত্তরে গাজ়া আজ সম্পূর্ণত ধ্বংসস্তূপ। এ-যাবৎ পনেরো হাজারেরও বেশি নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন সতেরো লক্ষ মানুষ। খাদ্য, জল, জ্বালানি, ওষুধ— বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদটুকুও নেই অনেকের কাছে। আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যুদ্ধবিরতি আরও দু’দিন বাড়ানো হলেও তাতে কতটুকুই বা পাল্টাবে। গাজ়াবাসীদের দুরবস্থার জেরে নানা মহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, এমন মানবিক সঙ্কটের মোকাবিলা হবে কী করে। সন্দেহ নেই, ইজ়রায়েলের বজ্র আঁটুনির জেরে সেখানে যে কোনও ত্রাণ/সহায়তা-কার্য হবে বিষম দুরূহ। এক পক্ষের উদ্দেশ্যই যেখানে অন্য পক্ষকে চিরতরে গুঁড়িয়ে দেওয়া, সেখানে ত্রাণ বা সহায়তা কথাগুলির অর্থই বা কত দূর? এই সব প্রশ্নের উত্তর এখন খুঁজে বেড়াচ্ছে প্যালেস্টাইনের রক্তস্নাত মাটি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement