India-Nepal Relationship

প্রতিবেশীর গুরুত্ব

২০২০ সালে আবার দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বিবাদ জোরদার হয়, যখন বিতর্কিত কালাপানি অঞ্চলের কাছে লিপুলেখ পাসের সংলগ্ন ৮০ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা নির্মাণ করে ভারত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২৭
Share:

সাম্প্রতিক কালে প্রতিবেশী নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে নানা কারণে। প্রতীকী ছবি।

নভেম্বরের শেষার্ধে নেপালের সাধারণ নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি সে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বাধীন নেপালি কংগ্রেস একক বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও, শেষ পর্যন্ত কোন জোট সরকার সে দেশের তখ্‌তে বসবে, সেই নিয়ে উদ্বেগ ও অস্থিরতা অব্যাহত। উদ্বেগ অবশ্য একা নেপালের নয়, দিল্লির অলিন্দেও। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটই বলে দেয়, কেন নেপাল সরকারের চরিত্র দিল্লির কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি-র নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় দু’দেশের মধ্যে যে ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল, বর্তমান চিন-ভারত ধারাবাহিক সীমান্ত বিবাদের প্রেক্ষিতে তার পুনরাবৃত্তি ভারত সরকারের কাছে উদ্বেগজনক তো বটেই।

Advertisement

সাম্প্রতিক কালে এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে নানা কারণে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালে নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় সংবিধানের অন্তিম খসড়ায় ভারতের সীমান্তে উত্তর তরাই অঞ্চলে বসবাসকারী মদেশিয় এবং থারু নামক দুই প্রাচীন গোষ্ঠীর মানুষদের প্রান্তিকীকরণের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত না হওয়াকে ভাল চোখে দেখেনি দিল্লি। এমনিতেই নিজেদের অধিকার নিয়ে সে দেশে বহু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন মদেশিয়রা। ওই ঘটনার পরে দিল্লির প্রচ্ছন্ন মদতে সীমান্তে তাঁদের অবরোধ বেশ কয়েক মাস ব্যাপক প্রভাব ফেলে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জোগানের উপরে, যা তৎকালীন ওলি সরকারকে চিনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করে, এবং তীব্রতর করে ভারত-বিদ্বেষী মানসিকতা। ২০২০ সালে আবার দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত বিবাদ জোরদার হয়, যখন বিতর্কিত কালাপানি অঞ্চলের কাছে লিপুলেখ পাসের সংলগ্ন ৮০ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা নির্মাণ করে ভারত। ওই রাস্তা নির্মাণের জন্য তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করে তৎকালীন নেপাল সরকার। ভারতের দিক থেকে কৌশলগত গুরুত্বের কারণে এই নির্মাণ খুবই জরুরি ছিল: দিল্লি এবং তিব্বত মালভূমির মধ্যে দ্রুততম সংযোগের অন্যতম এটি। এমনিতেই ভূ-কৌশলগত দিক থেকে বড় প্রতিবেশীর আধিপত্যের ফলে ছোট ভূবেষ্টিত রাষ্ট্র নেপালের সর্বদা আশঙ্কা, তার অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে দিল্লি হস্তক্ষেপ করবে। ২০১৭ সালের নির্বাচনে এই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে ভারতীয় সরকার প্রভাব বিস্তার করেছিল, এমনই আন্তর্জাতিক অভিমত। বুঝতে অসুবিধা হয় না, বর্তমান বিজেপি সরকারের কাছে হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র নেপাল কেন গুরুত্বপূর্ণ।

সন্দেহ নেই, সাম্প্রতিক কালে নেপালের মাওবাদী লেিননবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএনইউএমএল) ও মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির উপরে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের পক্ষে কত বড় অশনিসঙ্কেত। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে পরোক্ষ কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধানই কাম্য। নিজেদের স্বার্থেই ভারতকে এ বিষয়ে সতর্ক নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত ভাবে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বৎসরান্তে কাঠমান্ডুর নতুন সরকার যাঁরাই তৈরি করুন, দিল্লি তার কূটনৈতিক কৌশলে স্থিত থাকবে, এটাই আশা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement