Pollution

উৎসবের দূষণ

এ রাজ্যে উৎসব, পুজো এবং পরিবেশ দূষণ অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত। রাজ্যবাসীর কাছে পুজোর ক’টা দিন যেন দেবীর মোহময়ী রূপের মতো। উৎসব ফুরোলেই কাঠামোর অ-সুন্দর রূপটির মতো দূষণের ছবি সামনে চলে আসে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:১৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

শহরের আলোহাওয়া থেকে উৎসব এখনও সম্পূর্ণ মুছে যায়নি— দুর্গাপুজো পার হয়েছে পনেরো দিন আগে, কিন্তু দীপাবলি আসন্ন। তাই কি উৎসব-উদ্‌যাপনের অপরিহার্য চিহ্নগুলি, যেমন রাস্তার উপরে বা পাশে বাঁশের কাঠামো, হোর্ডিং, ব্যানার, রাস্তায় বাঁশ পোঁতার খোঁড়া গর্ত ইত্যাদি রয়ে গিয়েছে শহর বা শহরতলির ইতিউতি? পুরসভা কর্তৃপক্ষের নান্দনিকতা বোধের কথা নাহয় ছেড়েই দেওয়া গেল, কিন্তু সাধারণ মানুষের বিপদাশঙ্কা? দুর্গাপুজো উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের রাস্তায় বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং লাগানোর জন্য বাঁশ পুঁততে গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। অভিযোগ, পুজো মিটে যাওয়ার পরে কিছু জায়গায় ব্যানার ও হোর্ডিং খোলা হলেও বোজানো হয়নি গর্ত। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। মহানগরীতে হোর্ডিং-এর সমস্যা নতুন নয়। পুজোপার্বণ বা ভোটের সময় তো বটেই, সাধারণ সময়েও শহর জুড়ে রাস্তার ধার থেকে শুরু করে বহুতল, সরকারি আবাসন, গাছ ছেয়ে থাকে নানা আকারের হোর্ডিং-এ। কাজ মিটে গেলেও সেগুলি অনড়। আসন্ন কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরেও যে একই ছবি থেকে যাবে শহরময়, এমন আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যে কোনও শহরেরই নাগরিক জীবনের কিছু নিয়মকানুন থাকে। বহু ক্ষেত্রেই তা লঙ্ঘিত হওয়া এ মহানগরীর পরিচিত চিত্র।

Advertisement

দৃশ্যদূষণের পাশাপাশি জলদূষণের বিষয়টিও উপেক্ষার নয়। পুজো-অন্তে প্রতিমা জলে ফেলাই নিয়ম। এখন গঙ্গায় বা শহরের জলাশয়গুলিতে বিসর্জন হলেও এমন ব্যবস্থা থাকে, যাতে মূর্তি জলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে নেওয়া হয়। প্লাস্টিক ফুল মালা ফেলার ক্ষেত্রেও রাখা হয় আলাদা জায়গা। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের সূত্রে গঙ্গায় এবং শহরের জলাশয়গুলির ক্ষেত্রে নজরদারি থাকলেও শহরতলি বা মফস্‌সলে নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিসর্জনের রীতি সমানে চলে। ফলে সেই সব অঞ্চলে নদী বা জলাশয়ের দূষণ সীমাহীন। তা ছাড়া মূর্তির রঙের ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশে জলে। তাতে বিপন্ন হয় মাছ-সহ জলজ প্রাণী। এবং জল দূষিত হলে সেই দূষণের হাত থেকে মানুষও রেহাই পায় না। গত কয়েক বছর যাবৎ গঙ্গায় বিসর্জনের দূষণ সামান্য কমলেও, এ নদীর অনেক ঘাটের আবর্জনাময় চরিত্রটি বহাল তবিয়তে থেকে গিয়েছে, নিকাশি নালার তরল বর্জ্য নদীতে পড়ার পাশাপাশি মানুষের ঘাট ও ঘাট সংলগ্ন এলাকায় আবর্জনা ফেলার কারণে।

এ রাজ্যে উৎসব, পুজো এবং পরিবেশ দূষণ অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত। রাজ্যবাসীর কাছে পুজোর ক’টা দিন যেন দেবীর মোহময়ী রূপের মতো। উৎসব ফুরোলেই কাঠামোর অ-সুন্দর রূপটির মতো দূষণের ছবি সামনে চলে আসে। এই ‘ট্র্যাডিশন’ ধারাবাহিক ভাবে চলে আসছে প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে। উপযুক্ত পরিকল্পনার সাহায্যে শহর বা রাজ্যময় হোর্ডিং-এর সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ করা বা তা লাগানোর পরে ঠিক সময়ে খুলে নেওয়া কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন হয় শুধু প্রশাসনিক সদিচ্ছার। বিধি লঙ্ঘনকারী পুজো কমিটি বা বিজ্ঞাপন সংস্থার বিরুদ্ধে পরের বছর পুজোর অনুমতি না দেওয়া বা সংস্থার হোর্ডিং না লাগাতে দেওয়ার মতো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করাই যায়। এ বিষয়ে প্রশাসন কড়া হলে সকলে তা মানতে বাধ্য হবে। নগরকে সুন্দর ও দূষণমুক্ত রাখার দায় যখন প্রশাসনের, তখন সেই কাজে গাফিলতি কেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement