Tripura

অনশন অবসানে

ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি সংগঠনটিকে আত্মসাৎ করে আবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভোট-দক্ষতা প্রমাণ করলেন। একটি সংশয় থেকেই যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৭
Share:

— ফাইল চিত্র।

ফুটপাতই শুধু মধ্যরাতে বদল হয় না, রাজনীতিও ভোল বদলায় রাতারাতি। ত্রিপুরায় সম্প্রতি যা হল, তা দেখে এই কথাই মনে হয়। লোকসভা নির্বাচন দুয়ারে হাজির হতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, এবং তিপ্রা মথা দলের প্রাক্তন প্রধান প্রদ্যোতকিশোর দেববর্মার মিলিত উপস্থিতিতে দিল্লিতে স্বাক্ষরিত হল এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তি। কেন্দ্র, রাজ্য ও জনজাতি সংগঠনের এই চুক্তির গুরুত্ব বিরাট। কেননা, এর মাধ্যমে ত্রিপুরার অনেক দশকের জনজাতি সমস্যার স্বীকৃতি ঘটতে চলেছে— অথবা ঘটতে চলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অবশ্যই কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ, এই ঘটনাকে ত্রিপুরার রাজনীতিতে ঐতিহাসিক বলে ঘোষণা করছেন। উল্লেখ্য, এর আগেই আমরণ অনশনে বসেছিলেন তিপ্রা মথা দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোতকিশোর, রাজবংশোদ্ভূত যে নেতা কয়েক বছর আগেই রাজনীতিতে পাকাপাকি দীক্ষা নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির শেষে অনশনরত প্রদ্যোতের কাছে ফোনকল আসে, তাঁকে অনশনে বিরত হতে অনুরোধ করা হয়, এবং আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই আলোচনারই ফল, এই চুক্তি।

Advertisement

‘আলোচনা’ কী এবং কত দূর হয়েছে এই চুক্তির আগে, তা অবশ্য রীতিমতো অস্পষ্ট। একটি ‘সম্মানজনক সিদ্ধান্ত’-এ পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে, এই বক্তব্য সত্ত্বেও সংশয়ের বিশেষ অবকাশ আছে যে, ‘আলোচনা’ যথেষ্ট পরিমাণ হয়নি। জনজাতি বিকাশ ও উন্নয়ন বিষয়ক দাবিগুলি এত সহজ নয় যে এত সংক্ষেপে, এবং এত বিতর্কহীন ভাবে, তার আলোচনা সেরে নেওয়া যাবে। লক্ষণীয়, চুক্তির মধ্যে সেগুলির তেমন কোনও প্রতিফলনও হয়নি। অথচ রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব, অর্থনীতির উন্নয়ন বা জমি অধিকার, ভাষা ও সত্তাপরিচয়ের প্রশ্ন, প্রতিটি বিষয়ই বেশ জটিল ও বহুস্তরীয়। যা বক্তব্য শোনা গিয়েছে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পর, তার ভিত্তিতে ধরে নেওয়া যায় যে এই সব আলোচনা হবে ভবিষ্যতে। একটি যৌথ কমিটি তৈরি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ সবের মীমাংসা হবে। এবং তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে— যার অর্থ ইতিমধ্যে আর কোনও আন্দোলন প্রতিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি চলবে না। বলা অপেক্ষা রাখে না— এ এক রকম সাদা কাগজে সই করে যা কিছু দাবি এবং আন্দোলন সব শিকেয় তোলার আয়োজন। অন্য ভাষায় বলতে গেলে, আত্মবিক্রয়। কোনও সংগঠন তা করতে রাজি হতেই পারে। কেবল প্রশ্ন ওঠে, যখন এই দাবির ভিত্তিতেই সংগঠনটি বিশেষ ভাবে তৈরি হয়, এবং দাবি না মিটতেই পূর্ণ সহযোগিতার চুক্তি তৈরি হয়— এবং যখন সেই বোঝাপড়ার সময়টি হয় ঠিক নির্বাচনের আগে— সন্দেহ চলতেই পারে যে, চুক্তি নয়, প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে গেল, তার নাম, এক দিকে আত্মবিক্রয়, অন্য দিকে আত্মসাৎ।

সুতরাং, ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি সংগঠনটিকে আত্মসাৎ করে আবারও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভোট-দক্ষতা প্রমাণ করলেন। একটি সংশয় থেকেই যায়। সুদীর্ঘ কাল ধরে ত্রিপুরার জনজাতিদের যে বঞ্চনাবোধ ও সত্তাসঙ্কট, তার থেকে কোনও নতুন রাজনীতির দিশা যদি না মেলে, তাতে তাঁরা সন্তোষ বোধ করবেন কি না। অতীতে দেখা গিয়েছে, গোটা ত্রিপুরায় সেই দল এগিয়ে থেকেছে যার পিছনে জনজাতি সমর্থন আছে। সেই সমর্থনের খোঁজেই এই তড়িঘড়ি চুক্তি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement