Patanjali

রাজনৈতিক ব্যাধি

পতঞ্জলির বিরুদ্ধে অভিযোগ এই প্রথম ওঠেনি, কিন্তু কোনও অভিযোগেই যে সংস্থাটি কান করেনি, তার প্রমাণ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান সিদ্ধান্তেই রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

আদালত নতুন নির্দেশ দেওয়ার আগে অবধি কোনও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারবে না আয়ুর্বেদিক ঔষধি নির্মাতা সংস্থা পতঞ্জলি। সংস্থাটির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর এবং ভ্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রদানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এর আগে একাধিক বার তাকে সাবধান করে দিয়েছিল। তারা সে কথায় কর্ণপাত করেনি। প্রশ্ন হল, ভারতের মতো দেশে এমন অনাচার তো ঘটেই থাকে— পতঞ্জলির ঘটনাটিকে কি তবে সেই সামগ্রিক অনিয়মের অংশ হিসাবে দেখা বিধেয়, না কি এই সংস্থাটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে? সংস্থার মুখ যোগগুরু রামদেব ভারতের বর্তমান শাসকদের অতি ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। অনুমান করা চলে যে, ঘনিষ্ঠতার যে মাত্রাটিকে সাঙাততন্ত্রের জরুরি শর্ত হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তাকে স্পর্শ করলে এক ধরনের অপ্রতিরোধ্যতার বোধও তৈরি হয়। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ধরে নেন যে, কোনও অন্যায়, কোনও বেচালই আর তাঁকে আইনের শাসনের আওতায় আনতে পারবে না। পতঞ্জলির বিরুদ্ধে অভিযোগ এই প্রথম ওঠেনি, কিন্তু কোনও অভিযোগেই যে সংস্থাটি কান করেনি, তার প্রমাণ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান সিদ্ধান্তেই রয়েছে। এবং, শুধু পতঞ্জলিই নয়, সাম্প্রতিক অতীতে যে সংস্থাটির বিরুদ্ধে এক বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল, ঘটনাক্রমে তার কর্ণধারও দেশের সাঙাততন্ত্রের অন্যতম পরিচিত মুখ। উদাহরণের তালিকা দীর্ঘতর করার প্রয়োজন নেই— বরং ভাবা জরুরি যে, ভারতের শাসনতন্ত্র ঠিক কোন পথে চলেছে।

Advertisement

আয়ুর্বেদিক ওষুধের ক্ষেত্রটিতে নজরদারি করার কথা কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের। ২০১৭ সালে মন্ত্রক ও অ্যাডভার্টাইজ়িং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়, যাতে বলা হয়েছিল যে, কোনও বিকল্প চিকিৎসাপণ্যের ব্যবসায়ী যদি ১৯৫৪ সালের ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিজ় (অবজেক্‌শনেব্‌ল অ্যাডভার্টাইজ়মেন্ট) অ্যাক্ট-এর মাপকাঠিতে আপত্তিজনক বিজ্ঞাপন করে, তবে মন্ত্রক তা অ্যাডভার্টাইজ়িং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিলের গোচরে আনবে। পতঞ্জলির যে বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা এই আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১৯ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনে এই অপরাধে শাস্তির বিধান আরও গুরুতর। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, এত দিন মন্ত্রক এই সংস্থার বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন? বিশেষত, এই বিজ্ঞাপন থেকে যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে, তা চরিত্রে সামান্য নয়— অবশ্য, স্বাস্থ্যের কোনও প্রশ্নই সামান্য নয়— অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ ছাড়াই পতঞ্জলি যে কথাগুলি বলেছে, তা কারও প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এই অন্যায় ঘটতে দেখেও নিষ্ক্রিয় থাকা যে দিকে ইঙ্গিত করে, তা ভয়ঙ্কর।

এই বিজ্ঞাপনী প্রচারটি বেআইনি, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, কোন পরিস্থিতিতে এমন প্রচার ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠতে পারে, সে কথা ভাবলে জ্ঞানচর্চার প্রতি বর্তমান শাসকদের মনোভাবের প্রসঙ্গ আসবেই। গত দশ বছরে একেবারে কাঠামোগত ভাবে একটি পরিবর্তন সাধিত হয়েছে— গবেষণার প্রথাসিদ্ধ জ্ঞানসমৃদ্ধ বিজ্ঞান ও মূলত প্রচলিত ধারণাভিত্তিক ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমর্থনবিহীন পদ্ধতিতে সমতুল করে তোলা হয়েছে। ভারতীয় বৈদিক চিকিৎসাশাস্ত্র যথাযথ কি না, তা কোনও জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রশ্ন হতে পারে না— তার বিচার করার জন্য নির্দিষ্ট বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আছে। কেন্দ্রীয় শাসকদের রাজনীতি এই কথাটিকেই গুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। অ্যালোপ্যাথির মতো চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্বন্ধে অতিকায় নেতিবাচক দাবি করতে হলে যে তার সপক্ষে যথেষ্ট গবেষণালব্ধ প্রমাণ থাকা প্রয়োজন, এই কথাটি দেশবাসী জানেনও না, মানেনও না। সেই কারণেই এমন বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। ক্ষুদ্র রাজনীতির হাতে সর্বস্ব সমর্পণ করলে দেশ শেষ অবধি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এই ঘটনাটি তার মোক্ষম উদাহরণ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement