Lightning

বজ্রাঘাত

গত কয়েক বৎসর এপ্রিল-মে মাস জুড়িয়া পশ্চিমবঙ্গে বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৬
Share:

জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে বজ্রপাত, ও তজ্জনিত প্রাণহানির ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়িতেছে। পরিসংখ্যান বলিতেছে, ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২০-২১ সালে বজ্রপাতের হার বৃদ্ধি পাইয়াছে ৯৯.৭৬ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে যেমন ইয়াস-পরবর্তী সময় হইতেই বাজ পড়িয়া মৃত এবং আহত হইবার বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়াছে। ইহার মধ্যে শুধুমাত্র এক দিনেই পাঁচ জেলায় বজ্রাঘাতে ২৬ জনের মৃত্যু হইয়াছিল। শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলেই নহে, খাস কলিকাতাতেও বৃদ্ধি পাইতেছে বজ্রপাতের সংখ্যা।

Advertisement

এই পরিবর্তন রাতারাতি হয় নাই। দেখা গিয়াছে, গত কয়েক বৎসর এপ্রিল-মে মাস জুড়িয়া পশ্চিমবঙ্গে বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত, ইহার অন্যতম কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়াইয়া আছে দূষণ। দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাইবার সঙ্গে সঙ্গে গড় তাপমাত্রাও বাড়িতেছে, এবং পরিণামে বজ্রগর্ভ মেঘের আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হইতেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মেঘ, বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের উপর কী ভাবে এবং ঠিক কতটা প্রভাব বিস্তার করিতেছে, তাহা লইয়া গবেষণা চলিতেছে। কিন্তু তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একদা জানাইয়াছিলেন, প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাইতে পারে। সুতরাং, উষ্ণায়নের প্রভাবে সারা পৃথিবীতেই বজ্রপাত বৃদ্ধি পাইতেছে বিপজ্জনক হারে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা গিয়াছে, ফাঁকা মাঠে চাষের কাজ করিতে গিয়া বজ্রাহত হইবার ঘটনাই অধিক। আবহবিদদের মতানুসারে, চাষের কাজে বর্তমানে যে উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়, তাহাতে বিদ্যুৎ আকর্ষিত হয়। এবং সেই সঙ্গে খোলা স্থানে উঁচু জায়গা না থাকিবার কারণে তাহা মানুষ অথবা পশুর উপর নামিয়া আসে।

সুতরাং, বজ্রপাত লইয়া সতর্ক হওয়া আবশ্যক। ইহা সহজ কাজ নহে। বিজ্ঞানের উন্নতির দৌলতে এখন প্রবল ঝড়ের পূর্বাভাস এক সপ্তাহ পূূর্বে মিলে— সময় থাকিতে সতর্ক হওয়া যায়। বজ্রপাত সেই সুযোগ দেয় না। তবু উন্নততর প্রযুক্তিকে কাজে লাগাইয়া যতটুকু সময় পাওয়া যায়, তাহার সদ্ব্যবহার জরুরি। দুর্ভাগ্য, সতর্কবার্তা জারির বিষয়টিতে যতটা গুরুত্ব দিবার প্রয়োজন ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এত দিন তাহা দেয় নাই। এই রাজ্যে কিছু বৎসর পূর্বে এক আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে বজ্রপাতের পূর্বাভাসের জন্য ‘লাইটনিং সেন্সর’ বসানো হইয়াছিল। কিন্তু, পরিকাঠামোগত নানাবিধ ত্রুটির কারণে সেই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। প্রকল্পটিও বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়। অবিলম্বে এই প্রকল্প চালু করা, অথবা বিকল্প পথ অনুসন্ধানের প্রয়োজন। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টিতে কী করা প্রয়োজন, কী নহে, সেই সুস্পষ্ট বার্তা সরকারি উদ্যোগে যাহাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছাইতে পারে, তাহা নিশ্চিত করা জরুরি। এবং যাহা বজ্রপাতের অন্যতম প্রধান কারণ, সেই দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ করিতে হইবে। সচেতনতা আবশ্যক নাগরিকেরও। বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চারের পূর্বাভাস পাওয়ামাত্র সরকার-নির্দেশিত বিধিগুলি মানিয়া চলিতে হইবে। প্রশ্ন যেখানে জীবন-মৃত্যুর, সেখানে তিলমাত্র অসাবধানতার স্থান নাই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement