মিশরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন। প্রতীকী চিত্র।
সূচনাতেই আশার আলো। এ বছর মিশরে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন সিওপি ২৭-এর প্রথম দিনেই ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’-এর প্রসঙ্গটি মূল আলোচ্যসূচিতে জায়গা করে নিল, এই প্রথম বার। ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’, অর্থাৎ যে তত্ত্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সামনে বিপজ্জনক অঞ্চল এবং সম্প্রদায়গুলিকে উন্নত দেশগুলির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য করার ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা বলে। এই বিষয়ে আলোচনায় সহমত হয়েছে ১৯০টিরও অধিক দেশ। আশার কথা বইকি। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের দাবিটি নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) গঠনের সময় থেকেই উন্নয়নশীল দেশ এবং পরিবেশ নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলি এই দাবি জানিয়ে এসেছে উন্নত দেশগুলির কাছে, ঐতিহাসিক ভাবে যারা সর্বাধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী হিসাবে চিহ্নিত। ভারতও সেই দাবিকে জোর গলায় সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু এ-যাবৎ কাল উন্নত দেশগুলির প্রবল বাধায় সেই আলোচনার পালে বিশেষ বাতাস লাগেনি। সেই দিক থেকে সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের প্রথম দিন উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকল, নিঃসন্দেহে।
এবং পদক্ষেপটি করা হল এমন এক বছরে, যখন নানা অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েছে পৃথিবী। ইউরোপে এমন খরা গত ৫০০ বছরের ইতিহাসে প্রত্যক্ষ করা যায়নি, ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে পড়েছে পাকিস্তান, বিশ্বের নানা প্রান্তে চলেছে প্রবল তাপপ্রবাহ। এই ভবিষ্যদ্বাণীই শোনা গিয়েছিল বিশেষজ্ঞদের মুখে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, অতিপ্রবল ঝড় এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে। এ দেশের সুন্দরবন অঞ্চলেও সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলেই অনুমান। সুতরাং, কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস করে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বেঁধে ফেলা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব প্রদান করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলির রক্ষার্থে বিনিয়োগের কাজটিতেও। মূল আলোচ্যসূচিতে ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গটির অন্তর্ভুক্তকরণ এই বিষয় নিয়ে আগামী দিনে নিয়মিত আলোচনার জন্য চাপ প্রদানে সহায়ক হবে। ফলে, প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ঘটবে বলে আশা করা চলে।
কিন্তু আশা পূরণে কত সময় লাগবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। উন্নত দেশগুলি ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সায় দিলেও ‘ক্ষতিপূরণ ও দায়স্বীকার’-এর বিষয়টিতে সম্মত হয়নি। অর্থাৎ, কার্বন নিঃসরণ এবং তজ্জনিত জলবায়ু সঙ্কটের ঐতিহাসিক দায় স্বীকারে তারা এখনও অসম্মত। ফলে, দায়িত্ব পালনে তারা শেষ পর্যন্ত কত দূর সদিচ্ছা দেখাবে, সেই বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। ইতিপূর্বে ব্রিটেন এবং অন্য উন্নত দেশগুলি ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কমবেশি সম্মত হলেও, আমেরিকা এর বিরোধিতা করে এসেছে। সুতরাং, মিশরের সম্মেলন প্রথম বড় বাধাটি অতিক্রম করতে পারলেও আগামী দিনে জল কোন পথে প্রবাহিত হবে, সেই দিকে নজর থাকবে গোটা বিশ্বের।