Mahatma Gandhi

সম্পাদক সমীপেষু: কেন চাই গাঁধীকে

প্রয়োজন কারণ, সাভারকর, গোলওয়ালকরের আদর্শ বিশ্বের দরবারে প্রচার করার ও তাঁদের গৌরবান্বিত করার মতো সৎ-সাহস হয়তো বিজেপিরও নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩১
Share:

‘তিনিও যখন মিথ্যার শিকার’ (২-১০) শীর্ষক নিবন্ধে সেমন্তী ঘোষ বিজেপির উদ্দেশে প্রশ্ন করেছেন ‘‘এঁদের দরকারটা কী গাঁধীতে ফিরে আসার? নাথুরাম গডসে-র পুজো করছেন যাঁরা, সাভারকর, গোলওয়ালকর, দীনদয়াল উপাধ্যায়দের আইকনীকরণ করছেন যাঁরা, গাঁধীকে তাঁদের কেন প্রয়োজন?’’

Advertisement

প্রয়োজন কারণ, সাভারকর, গোলওয়ালকরের আদর্শ বিশ্বের দরবারে প্রচার করার ও তাঁদের গৌরবান্বিত করার মতো সৎ-সাহস হয়তো বিজেপিরও নেই। তাই রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গাঁধীজির জয়ধ্বনি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত নির্লজ্জ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে চলে বিজেপি, যা মহাত্মা গাঁধীর আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।

অর্থাৎ, সাভারকর, গোলওয়ালকরের আদর্শ বিশ্বজনীন নয়। গাঁধীজির আদর্শই সর্বজনীন, বিশ্বজনীন। তাই গাঁধীজির নিকট অসহায়ের মতো বারে বারে ফিরে আসে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিও। এবং গাঁধীজির চশমা, চরকাকে সামনে রেখে করে চলে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক কাজকর্ম। তা নিয়ে শোরগোল বাধলে, নিন্দা তীব্র হলে, বাঁচতে আশ্রয় নেয় গাঁধীজির ছায়ায়। এইখানেই গাঁধীজির আদর্শের জয়, এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর আদর্শের পরাজয়।

Advertisement

অনিমেষ দেবনাথ, নাদনঘাট, পূর্ব বর্ধমান

পথের সন্ধান

‘মহাত্মা ও নেতাজি’ (১০-১০) পত্রের প্রেক্ষিতে এই পত্র। গাঁধীজির ৭৫তম জন্মবার্ষিকীতে সিঙ্গাপুরের ফারার পার্কে ভারতীয়দের এক বিরাট জনসভাতে নেতাজি বলেছিলেন, ‘‘কুড়ি বছরেরও বেশি মহাত্মা গাঁধী ভারতবাসীদের নিয়ে দেশের মুক্তি সাধনা করেছেন।... ১৯২০ সালে মহাত্মা যদি এ পথের সন্ধান না দিতেন, তা হলে ভারতবর্ষের দুর্দশার সীমা থাকত না, এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। তাই বলছি ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি যা করেছেন, তার তুলনা মেলে না।’’ তিনি বলেন, ১৯২০ সাল থেকে মহাত্মা গাঁধীর কাছে ভারতীয়রা দু’টি জিনিস শিখেছে। একটি আত্মমর্যাদা ও আত্মপ্রত্যয়, এবং দ্বিতীয়টি সঙ্ঘবদ্ধতা।

গাঁধীজির প্রতি অসীম ভক্তি, ভালবাসা এবং পিতৃসম শ্রদ্ধাবোধ থেকেই নেতাজি তাঁকে ‘জাতির জনক’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সৌপ্তিক অধিকারী , সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

সুসম্পর্ক নয়

‘মহাত্মা ও নেতাজি’ (১০-১০) পত্রে পত্রলেখক এক জায়গায় লিখেছেন, আমেরিকান সাংবাদিক লুই ফিশারের নেতাজি সম্পর্কে ধারণার উত্তরে গাঁধীজি বলেন, “বোস ওয়াজ় আ পেট্রিয়ট অ্যামং পেট্রিয়টস।” আর এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ১৯৪৪ সালে নেতাজি গাঁধীজিকে ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ সম্বোধন করেন। আরও লিখেছেন, আবার যদি গাঁধীজি ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করেন, তা হলে তিনি সব ভুলে গাঁধীজির এক জন সৈনিক হিসেবে প্রাণ দিতে রাজি।

এই দু’-একটি বক্তব্য ও প্রতিবক্তব্যের উপর নির্ভর করে একটি অতি বড় সত্যকে চাপা দেওয়ার যে চেষ্টা পত্রলেখক করেছেন, তা সমর্থনযোগ্য নয়। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ থাকলেও পরের দিকে গাঁধীজি-নেহরুর সঙ্গে নেতাজির সম্পর্ক ভাল ছিল না। মনে রাখা উচিত, সেই সময়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য স্বার্থত্যাগই ছিল আন্দোলনকারীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। পথ ভিন্ন হলেও দেশকে কী ভাবে স্বাধীন করা যায়, সেটাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। যাঁরা নেতৃত্বে থেকে এই পথে ব্রতী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বহু ক্ষেত্রে তীব্র মতবিরোধ ছিল। কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ ছিল অত্যন্ত উচ্চমানের, যা গত শতাব্দীর সত্তর-আশির দশক পর্যন্ত বজায় ছিল। এই প্রজন্মের কাছে সেই সৌজন্য আজ কল্পনারও অতীত।

কিছু তথ্য মনে করিয়ে দিতে চাই। ১৯২৭ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে গাঁধীজি এবং নেহরুর মতামত গ্রহণ করেই পূর্ণ-স্বরাজ তত্ত্ব পাশ করিয়ে নেন নেতাজি। ১৯২৮ সালে সেই তত্ত্বই প্রত্যাখ্যাত হয়। এই পরাজয়ের পর গাঁধীজি নেহরুকে কংগ্রেসের সভাপতি করে দেন। নেতাজি প্রকশ্যে কোনও প্রতিবাদ করেননি। গাঁধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন যখন তীব্র আকার নেয় ১৯২২ সালে, ঠিক সেই সময় গাঁধীজি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৩১ সালে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গাঁধীজি একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। স্থির হয়েছিল, তিনি অত্যন্ত কঠোর ভাবে ভারতের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখবেন। সবাইকে অবাক করে তিনি ভারতের সংখ্যালঘুদের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বক্তব্য রেখে সেখান থেকে ফিরে আসেন। সুভাষ এ জন্য গাঁধীজির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

এ কথা সত্য যে, নেতাজি শেষের দিকে একনায়কতন্ত্রের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়েন। তবে তাঁর মতে, তা হতে হবে জাতপাত মুক্ত, হিন্দুত্ববাদ মুক্ত, মহিলা এবং পিছিয়ে-পড়া মানুষদের জন্য অবারিত দ্বার। তৎকালীন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল ভারতে, হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব, জাতপাত প্রভৃতির জন্য অস্থির ভারতে সেটাই হয়তো দেশকে পরিচালনার সঠিক উপায় ভেবে থাকবেন তিনি। গাঁধীজি এই চরম নীতির বিরোধী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সুভাষের চিন্তা যেন সংযত হয়। এ-ও এক মতবিরোধ।

নেতাজি গণতন্ত্রের ওপর অগাধ আস্থা রেখেই ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে লড়েছিলেন। গাঁধীজি চেয়েছিলেন, সুভাষ মনোনয়ন প্রত্যাহার করুন। সুভাষ রাজি হননি। এই মতবিরোধ চূড়ান্ত আকার নেয় যখন গাঁধীজি পট্টভি সীতারামাইয়াকে সুভাষের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেন। তিনি চেয়েছিলেন সীতারামাইয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কিন্তু নেতাজি

সহজেই জয়লাভ করেন। সেই হার গাঁধীজিকে এতটাই ব্যথিত করেছিল যে, তিনি বলেছিলেন, এই হার তাঁর পরাজয়। তার পরেই নেতাজি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গাঁধীজিকে সম্মান প্রদর্শন করে পদত্যাগ করেন। নেতাজি যদি এতই আপন হতেন, গাঁধীজি কি পারতেন নেতাজির বহিষ্কার মেনে নিতে?

জাপানের সাহায্যে ভারতকে মুক্ত করার যে প্রস্তাব নেতাজি দিয়েছিলেন, তাতেও গাঁধী-নেহরু তীব্র সমালোচনা করেন। দলে থেকেই নেতাজি স্বাধীনতা আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন। গাঁধীজির জন্যেই তা সম্ভব হয়নি।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

পুলিশের কাজ

পাগড়ি বিতর্কে বলতে চাই, পুলিশের কাজ যথাযথ হলে ধর্ম বা পাগড়ির বিষয় আসতই না। অভিযুক্ত বলবিন্দর সিংহ কি বন্দুক উঁচিয়ে ট্রিগারে আঙুল রেখেছিলেন? তিনি কি এয়ার-ফায়ারিং করেছিলেন? না। তিনি তো বিক্ষোভকারী নন, নিরাপত্তারক্ষী। তাঁর বন্দুক অবৈধ হলে প্রথমে আটক করে, পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত। ১৯৯২ সালে টাডা অধ্যাদেশে এ কে-৪৭ রাখার জন্য পুলিশ কি সঞ্জয় দত্তকে নিগ্রহ করেছিল? সেটা আরও গুরুতর ব্যাপার ছিল, তবুও পুলিশ আইনমাফিক কাজ করেছিল। আর এখানে সবাই দেখেছে একাধিক পুলিশকর্মী প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠিপেটা করছেন, বলবিন্দর সিংহ মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও মারছেন! পুলিশ, না পুলিশের পোশাকে দলীয় দুষ্কৃতী, সেই সন্দেহ থেকে যায়।

আইনে কি আছে নবান্ন যাত্রা করা যাবে না? না, নেই। তবুও পুলিশ ব্যারিকেড করে, লাঠিচার্জ করে। তা হলে কে বা কারা আইনভঙ্গ করছে? আদালতের নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবরে ছট পুজো করা যাবে না জেনেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের নামে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর দর্শক হয়ে দেখে। তা হলে পুলিশের কাজটা কী? মহামারি আইনের নামে দুঃস্থ মানুষকে মাস্ক না-পরার অজুহাতে লাঠিপেটা করা?

সুমন্ত দে, চেলিয়ামা, পুরুলিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement