Gender Equity

সম্পাদক সমীপেষু: কেন এই বিদ্বেষ?

নারীদের প্রতি ঘটা অপরাধগুলির তদন্ত করে পুলিশ আদালতে পেশ করুক, এবং আদালত আইনি সুরক্ষা ও বিচারের বন্দোবস্ত করুক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩০
Share:

সম্পাদকীয় ‘বিদ্বেষরেখা’ (৪-৮) যথার্থ প্রশ্নটি তুলে ধরেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে প্রযুক্তি পর্যন্ত অনেক কিছুতেই আমরা উন্নয়নশীল। কিন্তু আমাদের দেশে অর্ধেক আকাশের অংশীদার যাঁরা, সেই নারীদের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব আজও সমান ভাবে বিদ্যমান। দেশের সব রাজ্যেই মেয়েরা কমবেশি বিদ্বেষ, হিংসা, বৈষম্য ও ঘৃণার শিকার হয়ে চলেছেন। পরিবার থেকে সমাজ, কারও হাত থেকেই নিষ্কৃতি নেই নারীর। তাঁর ন্যায়-অন্যায় বিচার করা হয় পুরুষতন্ত্রের চোখ দিয়ে। অশিক্ষা, কুসংস্কার, দারিদ্র প্রভৃতিকে আমাদের দেশে নারীলাঞ্ছনার কারণ হিসেবে খাড়া করে আমরা নিজেদের দায় অস্বীকার করি। মেয়েদের পোশাক থেকে শুরু করে আচরণ, আচার, বিচার সব কিছুই পুরুষশাসিত সমাজ দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে বলে এখনও যে সমাজ বা রাষ্ট্র বিশ্বাস করে, সেখানে নারী স্বাধীনতা বা মুক্তির পথ অবরুদ্ধ হয়ে থাকবেই। আর সেখানেই আইনের কাজ। নারীদের সুরক্ষায় আমাদের দেশের আইনও অপারগ। যে দেশে এখনও ধর্ষিতা হয়ে, পণের বলি হয়ে মেয়েদের মৃত্যু ঘটে, আর অপরাধীরা সমাজে অবাধে ঘুরে বেড়ায়, সেই দেশে আইন যে নিরপেক্ষ নয়, তা বলা বাহুল্য। স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুন করে গৃহবধূকে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলিয়ে দেওয়ার পর যখন রাজনীতি ও প্রশাসনের লোকজন বসে মিটমাট করে দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, তখন আইন ছাড়া আর কে রক্ষা করতে পারবে দেশের মেয়েদের?

Advertisement

আইনকে কঠোর হতে হবে এবং তার যথাযথ প্রয়োগ হতে হবে নারী সুরক্ষায়। নারীদের প্রতি ঘটা অপরাধগুলির তদন্ত করে পুলিশ আদালতে পেশ করুক, এবং আদালত আইনি সুরক্ষা ও বিচারের বন্দোবস্ত করুক। মাঝখানে খাপ পঞ্চায়েত বা মোড়লদের বিচারসভা বসানোর প্রয়োজন কোথায়?

অভিজিৎ কাপাস, রাজনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর

Advertisement

ধর্ষক স্বামী

‘বৈবাহিক ধর্ষণ বিচ্ছেদের যুক্তিযুক্ত কারণ’ (৭-৮) অনেক নির্যাতিত মেয়ের মুখে স্বস্তির হাসি ফোটাবে। ধর্ষণ যে শুধু বাড়ির বাইরেই হয় তা নয়, দাম্পত্য জীবনে বহু মেয়েই স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত হন। বিবাহিত জীবনে বহু ক্ষেত্রেই স্ত্রীর সম্মতির পরোয়া করেন না স্বামী। তাঁরা মনে করেন, যখন খুশি তখনই তিনি স্ত্রীকে যৌনমিলনে বাধ্য করতে পারেন। ভারতীয় আইনে এটা দণ্ডনীয় অপরাধ নয়, আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন স্বামীরা। স্ত্রীকে তাঁরা নিজের সম্পত্তি মনে করেন।

কিন্তু কেরল হাই কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায় মেয়েদের স্বস্তি দিয়েছে। তাঁরা এই বর্বর আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবেন। বিবাহ বিচ্ছেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে বৈবাহিক ধর্ষণ। যদিও বহু মেয়েই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ার জন্য পরিবারের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেন। তাই আরও পরিবর্তন দরকার। বৈবাহিক ধর্ষণকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। যাঁরা আইনি পেশায় নিযুক্ত, তাঁরা অনেক দিন ধরে বৈবাহিক ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ হিসেবেই যাতে ধরা হয়, সে জন্য সরব হয়েছেন। এটা হলে গার্হস্থ হিংসার পরিমাণ কমবে। মেয়েদের শরীর, আত্মপরিচয়ের উপর স্বামীদের কর্তৃত্ব করার দিন শেষ হবে।

সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া

বইয়ের মূল্য

সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, গ্রন্থাগারগুলি বন্ধ থাকার কারণে লকডাউন কালে প্রচুর বই নষ্ট হয়েছে উই ও ইঁদুরে কেটে। এটা সরকারি অপদার্থতার চূড়ান্ত নিদর্শন। কথা হচ্ছে, বইগুলি মাঝে মাঝে দেখাশোনা করার ইচ্ছা গ্রন্থাগারগুলির কর্মচারীদের কেন হয়নি? না পারলে তাঁরা কি লিখিত ভাবে কোনও আলোচনা করেছেন? মন্ত্রিমশাই গত দেড় বছরে এই বিষয়ে ক’টি মিটিং করেছেন? কতগুলি গ্রন্থাগার ভিজ়িট করেছেন? সচিবই বা কী করছিলেন? জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের জন্য যিনি এবং যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তি হওয়াটাও যথেষ্ট নয়, পরে কেউ যাতে এ কাজ না করে, তার জন্য নজরদারির ব্যবস্থাও দরকার। মহামান্য আদালতকে অনুরোধ করব, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গ্রন্থাগারের রক্ষণাবেক্ষণে রাজ্য সরকারের ভূমিকা, এবং গ্রন্থাগারগুলির মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। দুষ্প্রাপ্য বইয়ের কোনও মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবু মূল্যায়ন দরকার।

তুষারকান্তি চৌধুরী, উত্তরপাড়া, হুগলি

ট্যাব কবে?

রাজ্য সরকারের ঘোষণা যে, আগামী বছরের মতোই এ বছরও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু কবে? অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারছে না স্মার্টফোনের অভাবে। স্কুল কবে খুলবে, তার এখনও কোনও ঠিক নেই। যদি রাজ্য সরকার শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য এই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প ঘোষণা করে থাকে, তবে অবিলম্বে পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হোক।

সাহিনা খাতুন, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা

মনীষীর নামে

শহরাঞ্চলে, বিশেষত কলকাতায় বেশির ভাগ রাস্তাই স্বাধীনতা সংগ্রামী, ইংরেজ ভাইসরয়, বিজ্ঞানী এবং মনীষীদের নামে করা হয়েছে। আধা শহর, অথবা গ্রামাঞ্চলে প্রধান রাস্তার মধ্যে যেগুলির দৈর্ঘ্য ১৫ কিমি, ২০ কিমি, এমনকি ৩০ কিমি, সেগুলি জাতীয় সড়ক অথবা মূল শহরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছে। সেই রাস্তাগুলির নামকরণও স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মনীষীদের নামে করা হলে গর্বের বিষয় হবে। যেমন— আমরা যেখানে বাস করি, সেখানে আমতা মূল শহর থেকে বেশ কিছু রাস্তা প্রধান সড়কের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করছে— আমতা-বালিচক, আমতা-মুনশিরহাট, আমতা-বাগনান, আমতা-রানিহাটি, প্রভৃতি। এখানে বিপ্লবী শ্রীশ চন্দ্র মিত্র (হাবু), রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র, রায়বাঘিনি রানি ভবশঙ্করী, ডা. বিধানচন্দ্র রায়, উদয়শঙ্কর, শিশু সাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত সঙ্কলন গ্রন্থ আগমনী এবং শিশুদের রামায়ণ-এর রচয়িতা নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, সংস্কৃত কলেজের এক সময়ের অধ্যক্ষ বিদগ্ধ সংস্কৃত পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন ভট্টাচার্য প্রমুখের নামে রাস্তাগুলি উৎসর্গ করা হলে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ধন্য
মনে করবেন।

মুস্তাক আলি মণ্ডল, আমতা, হাওড়া

আত্মপ্রচার

হাওড়ার উলুবেড়িয়া-আমতা সড়কের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণ দফতরের আর্থিক সহায়তায় যাত্রী প্রতীক্ষালয় নির্মিত হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মনীষীর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ছবি শোভা পাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজি-সহ প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কয়েক জন বিধায়ক ও মন্ত্রীও আছেন। এটা কি শোভা পায়?

তা ছাড়া পরিবহণ দফতরের আর্থিক সহায়তায় হয়ে থাকলেও সে তো মানুষের করের টাকা। সেই টাকায় এ ভাবে জনপ্রতিনিধিদের আত্মপ্রচার কি আইনসম্মত?

অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement