দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘আন্দোলনের চাওয়া-পাওয়া’ (২৪-৯) প্রসঙ্গে কিছু কথা। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও খুনের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে ‘চাওয়া’ ছিল নির্ভেজাল, নিষ্কলুষ, তাই ‘পাওয়া’ গিয়েছে অনেকটাই। বড় প্রাপ্তি বোধ হয় এই যে, শাসকের পরিবর্তন না ঘটিয়ে শাসনের রকমফের যে খানিকটা হলেও বদলানো যায়, তা হাতেকলমে দেখিয়ে দেওয়া গিয়েছে। যাকে বলে আত্মশুদ্ধির সুযোগ দেওয়া। তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্বের খেলার যে আবহ তৈরি করেছে দলীয় রাজনীতি, নাগরিক আন্দোলনের কাছে তা পরাভূত হয়েছে। ‘দফা এক, দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’— স্লোগানটি পরাজিত হয়েছে এক এবং অদ্বিতীয় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ দাবির কাছে। বরং এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ অনেক বেশি সংযত ও পরিণত ভূমিকার পরিচয় দিয়েছে। যারা আন্দোলনের ঝাঁঝকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা তুলবে ভেবেছিল, তাদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। এমনকি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বার বার আন্দোলন জবরদখল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
তাদের এই ব্যর্থতার কারণ, বাম আন্দোলনের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। পাশাপাশি গোটা বিশ্বের মানুষের মতো, বাঙালিও মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের উত্তরাধিকারী। নাগরিক সমাজের আন্দোলনে এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটেছে ঠিক অনুপাতে। প্রতিবাদের এই ভাষাটিই যেন খুঁজছিল নাগরিক সমাজ। এই জায়গাতেই পিছিয়ে পড়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। তা ছাড়া বিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক, হাথরস, উন্নাও-এর প্রসঙ্গ নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রশ্নে জেরবার হতে হয়েছে বিজেপিকে। উল্টো দিকে ধানতলা, বানতলা, আনন্দমার্গী হত্যা, সাঁইবাড়ির ঘটনার অভিযোগে বিদ্ধ বামেরা। তাই নাগরিক আন্দোলন কোনও দলকে সামনে আসতে দেয়নি। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, “দলনিরপেক্ষ হলেও এই নাগরিক আন্দোলন নির্গুণ নিরাকার নয়। বরং তাতে আধুনিক সমাজ ও গণতন্ত্রের উপযুক্ত নতুন চেতনা এবং রাজনীতির ভাষা গড়ার অনেক উপাদান ও সম্ভাবনা আছে।” তাই প্রশ্ন উঠে আসে, যে বিদ্যার সাহায্যে বিনীত গোয়েলের অপসারণ সম্ভব হল, সে কি কেবলই ‘অরাজনীতি’? অরাজনীতির গর্ভেও কি এমন নিঁখুত রাজনীতির বুদবুদ স্ফুরিত হতে পারে, যা শাসকের দম্ভ ভেঙে নিজের অভীষ্ট ছিনিয়ে আনতে পারে! তা-ই যদি হয়, তবে তথাকথিত এই অরাজনীতিই প্রকৃত রাজনীতি হয়ে উঠতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
বামের কর্তব্য
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু কথা। আর জি কর কাণ্ডে বিচারের দাবিতে যে ভাবে রাজ্যের মানুষ পথে নেমেছে এবং এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা বিরল দৃষ্টান্ত। মনে পড়ে সেই গান, ‘এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন...।’ বাংলার কোনও না কোনও জায়গায় প্রতি দিনই নারী-নির্যাতন, ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীর শাস্তি দূরে থাক, পুলিশ ধরতে পর্যন্ত পারে না। ঘটনাগুলো যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আর জি করের ঘটনার অভিঘাত এতটা তীব্র হয়েছে, কারণ এতে শাসক দল আশ্রিত কিছু চিকিৎসকের জড়িত থাকার ইঙ্গিত মিলেছে। দিনের পর দিন জুনিয়র ডাক্তাররা শ্বাসরোধকারী পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। তাঁরা সহকর্মীর এই মর্মান্তিক পরিণতিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মানুষও আন্দোলনে শামিল হন, ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির অপসারণ চেয়ে। এই আন্দোলন সরকারকে যথেষ্ট চাপে ফেলেছে এবং শাসকের ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে।
এই আন্দোলনের বহিরঙ্গ অরাজনৈতিক চরিত্রের দেখালেও এর মধ্যে রাজনৈতিক উপাদান আছে। মানুষ আগামী দিনে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বুঝে নেবে রাজ্যের মঙ্গল, কল্যাণের জন্য কি করণীয়। এই সন্ধিক্ষণে মানুষ তৃণমূল-বিজেপি অক্ষের থেকে বেরিয়ে এসে যাতে বিশ্বাস করার মতো বিকল্প পায়, তা নিশ্চিত করা প্রগতিশীল, উদার, বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির কর্তব্য।
দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া, হুগলি
বিরলতম
‘আন্দোলনের চাওয়া-পাওয়া’ প্রসঙ্গে কিছু কথা। আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে যে আন্দোলন, তার পিছনে কোনও ‘উস্কানি’ নেই, এটা প্রমাণিত। তাই যাদের এই ঘটনায় কোনও ব্যক্তিগত ক্ষতি ছিল না, নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি যাদের আনুগত্য নেই, তারাও রাত দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। বিশেষ করে মানুষ যখন জানতে পারল এই ঘটনার পিছনে রয়েছে বিভিন্ন দুর্নীতি, তখন তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আন্দোলনের জন্য রাজনৈতিক দলের কোনও প্রয়োজন হল না। সরকারি হাসপাতালে এত অব্যবস্থা, এত দুর্নীতি, সেই তথ্য অসহায় মানুষকে আর এক দফা অসহায় করে দেয়। টাকা দিয়ে দালাল ধরে বেড কিনতে হয়, এ কথা সাধারণ মানুষ জানে, স্বাস্থ্য দফতর বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানেন না? পড়ুয়া-ডাক্তারদের পাশ করার জন্য টাকা লাগে, এ কথা কর্তৃপক্ষ কেন জানেন না? এ শুধু লজ্জার কথা নয়, সর্বনাশেরও!
তরুণী চিকিৎসকের হত্যার পরে যে ভাবে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে, ময়না তদন্তে সীমাহীন গাফিলতি হয়েছে, তা থেকে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। এই হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে আড়াল করতে ধর্ষণ-খুন বলে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। যদি তা-ই হয়, তবে এটি বিরল ঘটনাগুলোর মধ্যে বিরলতম। সুতরাং এর সুবিচার এবং শাস্তি জরুরি। বিচারের দাবিতে আন্দোলন জারি রাখা জরুরি, এবং তার জন্য দলমত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সতর্ক থাকা দরকার। পাশাপাশি, এই আন্দোলনে যেন মৌলবাদী শক্তির প্রবেশ না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
দুর্গেশ কুমার পান্ডা, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
পড়ার বোঝা
‘মনের সুরক্ষা’ (৩০-৯) সম্পাদকীয়টি উচ্চ শিক্ষায়তনগুলিতে ছাত্রছাত্রীর আত্মহত্যার বিবরণ একটি ভয়াবহ, মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে। এ কেমন উচ্চশিক্ষা, যা আয়ত্ত করতে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়! এর অন্যতম কারণ হল অবাস্তব, কাণ্ডজ্ঞানহীন পাঠ্যসূচির বোঝা। ছাত্রছাত্রীদের খাবার সময় নেই, ঘুমোনোর সময় হয় না। সারা ক্ষণ পড়া আর পড়া! কেবল উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, প্রাথমিক স্তর থেকেই বইয়ের বোঝার চাপ শিশুদের পিঠ বাঁকিয়ে দেয়। এর উপরে আছে অভিভাবকদের অদম্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তাঁদের নয়নের মণির উপর মাত্রাতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা কী ভয়ানক পরিণাম ডেকে আনতে পারে, সে কথা মনে রাখা প্রয়োজন।
সঞ্জিত ঘটক, কলকাতা-১০৩
আর অন্যরা?
সংবাদে প্রকাশ, শুধুমাত্র চুক্তিভিত্তিক কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের কর্মীদের বেতন এক ধাক্কায় ৬০০০ টাকা বৃদ্ধি হল। আনন্দের কথা। কিন্তু আমাদের রাজ্যে কি আর কোনও দফতরে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নেই? এ ভাবে কারও ইচ্ছামতো কোনও বিশেষ দফতরের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করা যায়? এ ব্যাপারে অর্থ দফতরের কি কোনও নিয়মনীতি নেই? স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন ইত্যাদি দফতরে যেখানে প্রচুর চুক্তি-কর্মী কাজ করে চলেছেন, তাঁদের কথা ভেবে দেখবেন।
রথীন চক্রবর্তী, কেন্দুয়াদিহি, বাঁকুড়া