Visva-Bharati University

সম্পাদক সমীপেষু: কালীতে আপত্তি

আপত্তিকারীদের যুক্তি, যে হেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর পরিবার ব্রহ্ম-উপাসক ছিলেন, তাই বিশ্বভারতীতে পৌত্তলিকতার স্থান নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২২ ০৪:৫৪
Share:

বিশ্বভারতীতে ‘কালীপুজোর ধারণা’ নিয়ে আলোচনা সভা ডেকেছিলেন উপাচার্য। এই নিয়ে উঠেছে আপত্তি (‘বিশ্বভারতীতে কালীপূজা-বিতর্ক’, ২৩-৭)। আপত্তিকারীদের যুক্তি, যে হেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর পরিবার ব্রহ্ম-উপাসক ছিলেন, তাই বিশ্বভারতীতে পৌত্তলিকতার স্থান নেই। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ট্রাস্ট ডিড-এ উল্লেখ করে গিয়েছেন যে, শান্তিনিকেতন আশ্রম এলাকায় ব্রহ্ম উপাসনা ছাড়া কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা, বা মূর্তিপূজা করা যাবে না। প্রশ্ন জাগে, বিশ্বভারতী কি একটি উপাসনার স্থল, যেখানে কেবলমাত্র ব্রহ্ম উপাসনা করা যাবে? না কি শিক্ষার কেন্দ্র, যেখানে সাহিত্য, সঙ্গীত, কাব্য, শিল্প, বিজ্ঞানের সব রকম বিদ্যার চর্চা করা যাবে? আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ধর্ম বিষয়ক জ্ঞানচর্চায় আপত্তি কিসের? আমন্ত্রিত বক্তা নিশ্চয়ই রাজনীতি বা মূর্তিপূজা, কোনওটাই করতেন না। ধর্মীয় অনুষ্ঠান আর ধর্মের আলোচনা সভা নিশ্চয়ই এক নয়।

Advertisement

হিন্দু‌ধর্মে ঈশ্বর আরাধনায় সাকার ও নিরাকার, দু’টি পথ আছে। নিরাকার ব্রহ্মের উপাসকরা সাকার দেবদেবী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলে ক্ষতি কী? জ্ঞানার্জনের উপর কোনও বাধানিষেধ আরোপ করা কি যুক্তিসঙ্গত? স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মের উপাসক হয়েও অনেক শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন। যাঁরা বিশ্বভারতীতে কালীপুজো নিয়ে আলোচনা সভার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা চূড়ান্ত যুক্তিহীনতায় ভুগছেন।

পরিশেষে লিখি, এ দেশে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং সরকার মার্ক্সীয় অর্থনীতিতে বিশ্বাসী নয়, তাই বলে তো মার্ক্সীয় অর্থনীতি পড়ার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। অনুরূপ ভাবে বিশ্বভারতীতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মূর্তিপূজায় বারণ থাকলেও, ধর্মবিষয়ক জ্ঞানচর্চায় বাধা থাকবে কেন? রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে জ্ঞানার্জনে মুক্ত ও উদার পরিবেশ নেই, এমনকি ধর্মীয় আলোচনা সভায় রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজও গ্রহণযোগ্য নয়, ভাবলে কষ্ট হয়। শান্তিনিকেতনের উদার আকাশে সঙ্কীর্ণতার মুক্তি জ্ঞানের আলোয় আলোয়, তেমনটাই তো জানি।

Advertisement

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

অনিয়ম

বিশ্বভারতীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে সম্পাদকীয় (‘উদ্বেগ ও হতাশা’, ২৩-৭) সম্পর্কে দু’চার কথা বিশ্বভারতীর তরফ থেকে বলতে চাই। অনেক অনিয়ম এবং দুর্নীতির শিকার বিশ্বভারতী। এক প্রাক্তন উপাচার্য দুর্নীতির জন্য জেলে গিয়েছেন, বরখাস্ত হয়েছেন। অর্থনৈতিক দুর্নীতি তো পদে পদে ঘটেছে, যার প্রমাণ আছে ভূরি ভূরি। গত তিন বছরে এমন কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বভারতীকে নিজের পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টামাত্র। তার জন্য কিছু শক্ত পদক্ষেপ করা হয়েছে, যা আগের কোনও কর্তৃপক্ষ করার সাহস করেননি, বিভিন্ন কারণের জন্য।

বিশ্বভারতীতে অনুশাসন এবং নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য শো-কজ় ইত্যাদি করা হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে হবে। এটা সর্বজনবিদিত যে, পঠনপাঠন বিঘ্নিত হত এখানে, কারণ এখানে বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার গাফিলতি ছিল। ২০১৯ সালের পূর্ববর্তী সময়ে ক্লাসের টাইম টেবিল দেখলে বোঝা যাবে। কর্মিসভা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করত। শুধু তা-ই নয়, কলকাতায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথিগৃহ থেকে রোজগার কর্মিসভার পকেটে যেত, যদিও ওই অতিথিগৃহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ করত বিশ্বভারতী। কিন্তু যা রোজগার হত, তাতে বিশ্বভারতীর কোনও অধিকার থাকত না। সেটা বন্ধ করায় স্বার্থান্বেষী লোকজন যে ক্ষুব্ধ হবেন, তা কি অভাবনীয়? কোনও একটি বিভাগ থেকে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র চুরি হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ যদি এই ঘটনার পর চুপ থাকতেন, তা হলে কি বিশ্বভারতীর মান আরও উঠত? কর্তৃপক্ষের শক্ত পদক্ষেপের ফলে আজ ক্লাস হচ্ছে নিয়মিত। প্রশাসনিক অফিসগুলোয় নিয়মনীতি ফিরে এসেছে।

এ বার আসি এনআইআরএফ এবং নাক-এ বিশ্বভারতীর অবনমন নিয়ে। অবনমন হয়েছে, সেটা দুঃখের। তবে আমরা কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছি যে, এর জন্য আমাদের অ্যাকাডেমিক অবনমন সর্বতো ভাবে দায়ী। আমাদের শিক্ষকদের গবেষণা যতটা উচ্চমানের হওয়া দরকার ছিল, ততটা হয়নি। আত্মসমালোচনা করলে বোঝা যাবে যে, গবেষণার ব্যাপারে আমাদের শিক্ষকদের এবং ছাত্রছাত্রীদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। গবেষণার গুণমান দিয়ে ৮০ শতাংশ বিচার হয় র‌্যাঙ্ক দেওয়ার ব্যাপারে। এখানে উপাচার্য এবং কর্তৃপক্ষ অনুপ্রেরণা দিতে পারেন, কিন্তু গবেষণা তো করতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের।

এ বারে আসি সার্ন প্রজেক্ট নিয়ে। প্রথমেই বলি রাখি, এই প্রজেক্টটা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবং এখনও চালু হয়নি। তাই কেউ যদি দাবি করেন যে, এই প্রজেক্ট চলছে, তা মিথ্যা দাবি হবে। এ ছাড়া কোনও বড় প্রজেক্টে যুক্ত থাকলে কি কেউ উপাচার্য, আধিকারিক এবং সহকর্মীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে পারেন?

উপাচার্য দিল্লির সরকারের দ্বারা নিযুক্ত হন একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সাধারণত তিনি নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তিনি সাধারণত বহিরাগতও। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহল এবং বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে তাঁকে নানা অপশব্দ শুনতে হয় প্রতিনিয়ত। সমালোচনা গঠনমূলক হলে তা নিশ্চয়ই প্রণিধানযোগ্য। ‘মা কী ছিলেন আর মা কী হয়েছেন’, এই প্রশ্নের সঙ্গে যদি আমরা যোগ করি ‘কেন হয়েছেন’, তবে একটা সঠিক রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে।

মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, জনসংযোগ অফিসার, বিশ্বভারতী

বিপদসীমা পার

জলবায়ু পরিবর্তনের এক ভয়াবহ চিত্র ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সারা বিশ্বের আবহাওয়া দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। লন্ডনের তাপমাত্রা এ বছর গ্রীষ্মে উঠেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা রেকর্ড। ভারতের উত্তর ভাগে প্রবল বৃষ্টি, উত্তর-পূর্বে অসম-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভয়ঙ্কর বন্যা, অথচ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তেমন বৃষ্টি নেই। শ্রাবণ মাস পড়ে গেল, এখনও চাষের জমি শুকনো। লাঙল করাই যাচ্ছে না। ধানের চারা বৃষ্টির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান চাষ করা যাবে না। চাষিরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তবুও আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে খুব যে চিন্তিত, তা মনে হয় না। কিছু দিন আগেই সংবাদে জানা গেল, আমাজ়ন বনভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে। এই জঙ্গলকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলা হয়। তার এমন ধ্বংসসাধন, ভাবা যায় না। এ ছাড়াও বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে চারিদিকে দাবানল তো লেগেই আছে। এতে বন সম্পদ ও বন্যপ্রাণীদের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। অথচ, আমরা নগরায়ন, শিল্পায়নের নাম করে যথেচ্ছ বনভূমি ধ্বংস করছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যাচ্ছি? সমস্ত রকম দূষণের মাত্রা এত বেড়ে যাচ্ছে যে, আমাদের সন্তানরা হয়তো মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাসটুকুও নিতে পারবে না।

উদ্দীপন মাইতি, দেউলপোতা, পূর্ব মেদিনীপুর

খুনি মাঞ্জা

কেটে-যাওয়া ঘুড়ির সুতো গাছের ডালে ঝুলতে থাকে, এবং পাখির দলের কোনও একটির গলায় মরণফাঁসে পরিণত হয়— এমন দৃশ্য বর্তমানে সমাজমাধ্যম, টিভি এবং সংবাদপত্রে প্রায়শই দেখা যায়। কাচের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি মাঞ্জা-মাখানো সুতোয় শুধুই ঘুড়ি কাটা পড়ে না, ধারালো সুতোর শিকারে পরিণত হয় পায়রা, চিল, শালিক ও আরও বেশ কিছু প্রজাতির পাখিও। তবে কি ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ করে দিতে হবে? না, এমন দাবি করা যায় না। তবে অনেক দেশেই এমন কাচগুঁড়ো মাখানো সুতো দিয়ে ঘুড়ির প্যাঁচ খেলা হয় না। অতএব মাঞ্জা বন্ধ হোক।

দীপেন্দু দাস, রানাঘাট, নদিয়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement