‘সাম্যের স্বাধীনতা’ (২৬-৮) সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে— নারী, দলিত, আদিবাসী, প্রান্তিক মানুষ, সংখ্যালঘু ভিন্ন ধর্মের মানুষদের সমান অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজ আজও তৈরি হয়নি। ঠিকই। কিন্তু, বহুত্ববাদী, সাম্যবাদী সমাজ গঠনে একটি রাষ্ট্র তার ভূমিকা এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। বিশেষ করে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কি এই সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতা বজায় রাখতে সচেষ্ট? সে রকম দৃষ্টান্ত তো নেই, বরং উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচার, অবজ্ঞা, অবহেলা, ধর্ষণ, খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গো-রক্ষার নামে সংখ্যালঘু মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। নেতা, মন্ত্রীরা মুখে সাম্যের কথা বললেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। সম্প্রতি ৮৪ বছর বয়সে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হলেন ফাদার স্ট্যান স্বামী, যিনি তিন দশক ধরে ঝাড়খণ্ডের দলিত, আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ফাদারকে জেল-বন্দি করা হয়। অথচ, গাঁধীবাদী মানুষটি চেয়েছিলেন, এই দেশটা প্রকৃত অর্থেই সাম্যের দেশ হয়ে উঠুক। সংবিধানের ১৪ থেকে ১৮ নং ধারায় সাম্যের অধিকারে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, জন্মস্থান, ধনী-নির্ধন, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের আত্মবিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক সুযোগ-সুবিধা এবং দাবির স্বীকৃতিকে বোঝানো হয়েছে। এ-ও বলা আছে, সাম্যের অধিকার ব্যতীত স্বাধীনতার অধিকার পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। আইনের চোখেও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিক সমান অধিকার ও সমমর্যাদার অধিকারী এবং আইন সকলকে সমান ভাবে রক্ষা করবে। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকলাপ দেখে মনে হয়— ‘শিব ঠাকুরের আপনদেশে/ আইন কানুন সর্বনেশে!’
সংবিধানে সমাজের অনগ্রসর এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতির জন্য বিশেষ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, তা সত্ত্বেও এর মাধ্যমে চাকরি পাওয়াদের (সম্পূর্ণ যোগ্যতা থাকলেও) কপালে এই যুগেও তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা জুটছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের দেশে, রাজ্যে সংবিধান-স্বীকৃত সাম্যের অধিকার কী ভাবে পদে পদে প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। আসলে, সাম্য কোথাও নেই। ট্রেনে, বাসে, চায়ের দোকানের মুখরোচক আড্ডায় শোনা যায়, ‘আরে, ওরা তো কোটায় চাকরি পেয়েছে’। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করলেও, জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণের বেড়াজালে আমরা আটকেই রইলাম।
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
সমানাধিকার
‘সাম্যের স্বাধীনতা’ সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে যে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও এ দেশে নারীদের সমানাধিকার নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুমাত্র উন্নত হয়নি। নারীদের প্রকৃত স্বাধীনতা যেন অশ্বডিম্ব, নইলে বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও চোরাগোপ্তা এত কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়! অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী লাভলিনা বরগোহাঁইকে স্বাধীনতার মানে জিজ্ঞাসা করাতে বলেছিলেন, এই পদক মায়ের হাতে তুলে দিয়ে তাঁর মুখের হাসি দেখাটাই তাঁর কাছে স্বাধীনতা। এ কথার মধ্যে কতখানি মর্মবেদনা লুকিয়ে আছে, সব মেয়েরাই তা অনুভব করতে পারেন। তিন কন্যার মা হওয়ার জন্য লাভলিনার মা’কে কম অপমান সহ্য করতে হয়নি। কঠিন পরিশ্রমে আপন অধিকার অর্জন করে যখন বড় দুই মেয়ে সামরিক বিভাগ ও পুলিশে চাকরি পান, ছোট মেয়ে অলিম্পিক্স থেকে দেশের জন্য পদক আনেন, তখন তিনি সসম্মানে মাথা উঁচু করতে পারেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অপর দুই কন্যা অলিম্পিক্সে রুপোজয়ী মীরাবাই চানু ও গত অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী মেরি কমও দারিদ্র সয়ে কঠোর পরিশ্রম করে দেশের জন্য পদক এনেছেন। পি টি উষাকেও সোনার মেয়ে বলা হত। দেশবাসী এঁদের মাথায় তুলে রেখেছেন। কিন্তু সবই সাফল্য লাভের পর। তার আগে তাঁদের বঞ্চনা, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা অজানাই থেকে যায়। অলিম্পিক্সে মেয়েদের হকিতে দলগত ব্যর্থতা সত্ত্বেও বন্দনা কাটারিয়ার পরিবারকে দলিত এবং মহিলা হওয়ার ‘অপরাধে’ অপমান, অত্যাচার সইতে হয়!
আমাদের রাজ্যের অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের লেখাপড়া না শিখিয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রথাই যেন স্বাভাবিক। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সাফল্য অবস্থার কিছুটা উন্নতিতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু অতিমারি, লকডাউনে আবার আগের অবস্থা। আগে মফস্সলে বিভিন্ন ক্লাবের সহায়তায় মেয়েদের খেলাধুলোর অনুশীলন হত। অ্যাথলেটিক্সে সোনার মেয়ে জ্যোতির্ময়ী শিকদারের উত্থানও গ্রাম থেকেই। আজকের অলিম্পিয়ান প্রণতি নায়েকও নিজের ও তাঁর কোচ মিনারা বেগমের আর্থিক সহায়তায় এত দূর যেতে পেরেছিলেন। রাজকোষ ফাঁকা করে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এ মেয়েদের লক্ষ্মীর ঘটের মতো নেতাদের মুখাপেক্ষী করে বসিয়ে না রেখে, তাঁদের স্বনির্ভর করে তুলতে সাহায্য করলে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতেন।
শিখা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
৭ দিনের ধাক্কা
ডব্লিউবিসিএস মেনস পরীক্ষা কেন প্রতি বার কলকাতার কেন্দ্রগুলিতেই আয়োজিত হবে? রাঢ়বঙ্গ, সুন্দরবন ও উত্তরবঙ্গের পরীক্ষার্থীরা কেন ৫ দিন পরীক্ষা ও ২ দিন যাতায়াত-সহ মোট সাতটি দিন বিড়ম্বনার শিকার হবেন, এর স্পষ্ট জবাব কি পিএসসি দিতে পারে? সংবাদপত্রে পড়লাম, মেনস ২০২০ পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি প্রসঙ্গে পিএসসি-র চেয়ারম্যান বলেছেন যে, পরীক্ষা আর পিছোলে সরকারি কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁর কাছে একান্ত নিবেদন, এই একই কথা উনি সরকারকে বলতে পারেন যে, যথাযথ রেল যোগাযোগ ব্যতীত বিভিন্ন জেলার বহু পরীক্ষার্থীর কলকাতার কেন্দ্রগুলিতে পৌঁছনো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাজ্যের প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগে পর্যাপ্ত কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন। ‘সরকারি কাজকর্ম’ কি শুধু কলকাতা-কেন্দ্রিক?
শ্রেয়সী সরকার
সিউড়ি, বীরভূম
পোস্তবিলাস
আমবাঙালির পরমপ্ৰিয় খাদ্য পোস্তের দাম প্রায় প্রতি দিনই যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজারে এখন একটু ভাল মানের প্যাকেটজাত ৫০ গ্রাম পোস্তের দাম পড়বে ১২০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কেজি পোস্তের দাম ২৪৪০ টাকা। এক কথায়, আকাশছোঁয়া। এত দাম শুনলেই গায়ে যেন মুহূর্তে ছ্যাঁকা লাগে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে রসনা তৃপ্তিকারী পোস্ত।
অথচ, এই বর্ষাকালে একটু ঝিঙে পোস্ত, আলু পোস্ত, ঢেঁড়শ পোস্ত, পটল পোস্ত, পেঁয়াজ দিয়ে পোস্তের বড়া, পোস্তমাখা, রুই-কাতলা পোস্ত, ইলিশ পোস্ত, চিংড়ি পোস্ত প্রভৃতি আমিষ, নিরামিষ পদ খেতে কোন বাঙালির ভাল লাগে না? কিন্তু, এই আকাশছোঁয়া দামের জন্যই সাধারণ মানুষ পোস্ত খেতে প্রায় ভুলতে বসেছেন। এর মূল কারণটি হল, পোস্ত যে হেতু আমাদের দেশে চাষ করা নিষিদ্ধ, তাই বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। পোস্তের অসম্ভব দাম বৃদ্ধির এটাই অন্যতম কারণ। সেই কারণেই সরকারি নিয়ন্ত্রণে যদি পশ্চিমবঙ্গে খানিকটা পোস্ত চাষ করা হয়, তা হলে অনায়াসে পোস্তের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসতে পারে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ২১২টি সরকারি কৃষি খামার রয়েছে। এই সরকারি খামারগুলির সব ক’টিতেই প্রচুর জমি বিনা চাষে পড়ে থাকে। এই পতিত জমিগুলিতে সরকারি তত্ত্বাবধানে পোস্ত চাষ শুরু হলে লোকসানে চলা সরকারি খামারগুলি এক দিকে যেমন লাভজনক হবে, তেমনই অন্য দিকে এই রাজ্যে পোস্তের দামও অনেকটাই কমে যাবে। এবং সরকারি পর্যায়ে এই উদ্যোগ করা হলে পোস্তপ্রেমী বাঙালিরাও যারপরনাই খুশি হবেন বলেই মনে হয়।
তুষার ভট্টাচাৰ্য
কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ