বর্তমানে এ রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়া এবং দূরদর্শনের প্রভাবে যাত্রাশিল্পের অবস্থা যখন সঙ্গিন, ঠিক সেই মুহূর্তে লকডাউনের ফলে যাত্রাশিল্প আজ ‘কোমা’য় চলে গিয়েছে। রাজ্যের গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন উৎসব ও পুজো-পার্বণের মরশুমে লকডাউনের প্রভাবে সমস্ত যাত্রাঅনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যাওয়ায়, যাত্রাশিল্পে বহু কোটি টাকার লোকসান হয়ে গেল। চিৎপুরের ছোট, বড়, মাঝারি প্রায় ৪৫টি অপেরার কলাকুশলী, এবং যাত্রার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য কর্মকুশলীদের দৈনন্দিন রুজি-রোজগার বন্ধ।
কিছু দিন পর লকডাউন উঠে গেলে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এলে, মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলি হয়তো পুনরুজ্জীবিত হবে, কিন্তু যাত্রা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? গ্রামের ক্লাব ও যাত্রা-উদ্যোক্তারা আগামী মরশুমে টাকা খরচ করে অক্ষয় তৃতীয়া ও রথযাত্রায় চিৎপুরের যাত্রা গদিতে বুকিং-এর জন্য ভিড় জমাবে? যাত্রাপ্রেমী হিসাবে, রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ, এই দুঃসময়ে যাত্রার কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়ান।
তপনকুমার বিদ
বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
শাঁখের করাত
করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যখন সমগ্র দেশবাসী গৃহবন্দি, তখন দেশের ব্যাঙ্কগুলো খোলা। ২৩ মার্চ বিকেল থেকে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরের দিন থেকে, কী ভাবে অফিস করবেন, কী ভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন ভেবে কূলকিনারা পাননি ব্যাঙ্ককর্মীরা।
বিশেষ করে যাঁরা গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙ্কের শাখায় কাজ করেন, তাঁদের অবস্থা করুণ। বাস সহ সমস্ত ধরনের যানবাহন বন্ধ। নিজের বাইকে সহকর্মীকে নিয়ে, অথবা কয়েকটি শাখার সহকর্মীরা একসঙ্গে প্রতি দিন দুই থেকে তিন হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে অফিস করতে শুরু করলেন। রাস্তায় পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হল।
ব্যাঙ্কের প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে চেষ্টা করলেন, কী ভাবে ব্যাঙ্ক-কর্মীদের এই ভাইরাস থেকে কিছুটা দূরে রাখা যায়। ব্যাঙ্কের কাজের সময় কমিয়ে, ন্যূনতম পরিষেবা চালু রেখে, এক দিন অন্তর এক দিন ব্যাঙ্ক খোলা রেখে, কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে ব্যাঙ্কে যাওয়ার ব্যবস্থা করে, বাড়ি থেকে ব্যাঙ্কের কাজের ব্যবস্থা করে, নির্দিষ্ট একটা এলাকার একাধিক শাখাগুলোকে দু’একটি শাখায় রূপান্তরিত করে পরিষেবা দিয়ে, লকডাউনে দূরের বাড়িতে আটকে পড়া কর্মীদের কাছাকাছি অফিসে কাজ করার সুযোগ দিয়ে— সব ব্যাঙ্ক প্রশাসন চেষ্টা করেছিলেন কর্মচারীদের কিছুটা হলেও সুরাহা দেওয়ার।
তখনই এল ব্যাঙ্ক-কর্মীদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা। আর তার পরেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্স করে জানিয়ে দিলেন, ব্যাঙ্কগুলো আগের মতোই, যেমন চলছিল চলবে। কোনও ছাড় দেওয়া যাবে না।
সঙ্গে সঙ্গে চলে এল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় মহিলাদের জন-ধন-যোজনা অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে জমা করার ঘোষণা, সঙ্গে উজালা খাতে গ্যাসের টাকা ফেরত।
গ্রামে গ্রামে গুজব ছড়াল, এই টাকা এখনই তুলে নিতে হবে, নচেৎ পরের কিস্তির টাকা মিলবে না। গ্রামের ব্যাঙ্কগুলোর সামনে মেলার মতো ভিড় জমতে শুরু করল। পুলিশের সাহায্য চেয়েও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পেলেন না ব্যাঙ্কের কর্মীরা। কিন্তু প্রচারের আলোয় এ সব ছবি দেখে বোধহয় টনক নড়ল রাজ্যের প্রশাসনের।
নির্দেশ জারি করা হল, ব্যাঙ্কের সামনে এই ভাবে মানুষের জমায়েত করা যাবে না। স্থানীয় থানা থেকে ব্যাঙ্কগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। না হলে, তার জন্য ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দায়ী হবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ক্রমশ বদলে যেতে শুরু করল ব্যাঙ্কের সঙ্গে বিডিও সহ স্থানীয় প্রশাসনের স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো। অফিস যাতায়াতের পথে রাস্তা আটকে ব্যাঙ্ক-কর্মীদের গাড়িগুলো আটকানো শুরু করল পুলিশ। বলতে শুরু করল, একটা বাইকে এক জন যাবেন, চার চাকার গাড়িতে দু’জন যাবেন ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের অবস্থা হল একেবারে শাঁখের করাতে পড়ার মতো।
ব্যাঙ্ক যে হেতু কেন্দ্রের অধীনে, সুতরাং তার উপর খবরদারি করার অধিকার তাদের! আবার এই রাজ্যে যে হেতু অন্য সরকার, সুতরাং তার প্রতিক্রিয়া অন্য রকম। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে অসহায় ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা।
দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
প্রতি বছর
লকডাউনে আমাদের প্রচুর দুর্দশা হলেও, আমাদের পরিবেশ ব্যাপক ভাবে লাভবান হয়েছে। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এলেও, পৃথিবীকে বাঁচাতে, পৃথিবীর স্বাস্থ্য মেরামতের জন্য, প্রতি বছর নির্দিষ্ট সাত দিন বা দশ দিন পৃথিবী জুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এতে অর্থনীতির তাৎক্ষণিক ক্ষতি হলেও, আখেরে আমাদের পৃথিবী লাভবানই হবে। শুধু লকডাউনের সময় সকলের খাদ্য ও চিকিৎসার ভার নিজ নিজ দেশের সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
ব্যবসায়ীরা
স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা সারা মাস হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও ব্যবসা, সংসার ঠিকমতো চালাতে পারেন না। তাঁরা নানা খাতের খরচ ও পরিবারের সব দায়ভার বহন করার পর যখন পুনরায় ব্যবসা চালু করতে যাবেন, প্রয়োজনীয় পুঁজিতে টান পড়বেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে, বৃহৎ পুঁজির সঙ্গে লড়াইয়ে এঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। এঁদের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, যে সব ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কর্মচারী-নির্ভর ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে, কর্মচারীদের মাইনে দিয়ে দিতে। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ী কী অবস্থায় আছেন,তার খোঁজ কেউ রেখেছে? এফডিআই, শপিং মল ও অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় এঁরা কোনও রকম ভাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
লকডাউনের আবহে কর্মচারীরা মালিকপক্ষের কাছ থেকে উপযুক্ত মাইনে না পেয়ে যখন সরকারি পদাধিকারীদের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন, তাঁদের লেবার কমিশনে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লকডাউনের আগে তো কর্মচারীরা মাইনে পাচ্ছিলেন। তা হলে লকডাউনের কারণে ব্যবসা বন্ধ থাকায় এখন ঠিকঠাক পাচ্ছেন না, বা নিয়মিত পাচ্ছেন না। অন্য দিকে ব্যবসায়ীদের স্বল্প পুঁজিতেও ভাটা পড়েছে, পরিবার-পরিজনদের নিয়ে চলতে নাভিশ্বাস উঠেছে। তা হলে এই শ্রেণির ব্যবসায়ীরা কোথায় অভিযোগ জানাবেন? এই পরিস্থিতির দায় কার?
কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁদের কোনও বিদ্বেষ নেই। কর্মচারীদের জন্য এবং ব্যবসায়ীদের জন্যও সরকারকে আর্থিক প্যাকেজ দিতে হবে।
আর যে সব ব্যবসায়ী জীবন বাজি রেখে পরিবারের সদস্যদের চরম আতঙ্কের মধ্যে ফেলে অত্যাবশ্যক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের দশ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে হবে।
রঞ্জন সিংহ রায়
যুগ্ম সম্পাদক, সাউথ ২৪-পরগনা’স জিলা ব্যবসায়ী সমন্বয় সমিতি
ডাকঘর বন্ধ
খবরে বলা হচ্ছে, লকডাউনের কারণে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে না পারলে, প্রয়োজনে ডাকঘর থেকে আধার নম্বরের ভিত্তিতে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যেতে পারে। কিন্তু বেশ কিছু ডাকঘর লকডাউনের সময় থেকেই বন্ধ। তা হলে কী করব?
সুশান্ত ঘোষ
কলকাতা-৬৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।