আমি এক দৃষ্টিহীন শিক্ষক। সম্প্রতি দুর্গাপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় চেক নিয়ে গিয়েছিলাম টাকা তুলতে। এর আগেও টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ বার চেকে টাকা তুলতে গেলে আপত্তি জানান এক ব্যাঙ্ককর্মী। আমাকে নানা কথা বলতে থাকেন। পরিচিত গ্রাহক হওয়া সত্ত্বেও পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়, আগে যদিও দেখতে চাওয়া হত না। সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বলা হয়, ‘‘আপনাকে টাকা দেওয়া হবে না।’’ ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন— আপনি তো টিপসই করেন, ‘ইললিটারেট পার্সন’। দৃষ্টিহীনরা টিপসই দেয় বলে ‘নিরক্ষর গ্রাহক’ হয়ে গেল! প্রতিবন্ধীদের আইনকে তাঁরা মান্যতা না দিয়ে অগ্রাহ্য করে চলেছেন। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে আমাদের বিবাদে জড়াতে হয়। নিজেদের অধিকার চাইতে গিয়ে বার বার অপমান সহ্য করতে হয়।
বর্তমানে দৃষ্টিহীনরা স্বাবলম্বী। নিজেদের কাজ তাঁরা নিজে করতে পারেন। কিন্তু অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাস, ট্রেন, এমনকি বৈবাহিক ক্ষেত্রেও তাঁদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সমস্ত প্রতিকূলতা নিয়ে জীবনে লড়াই করেও অপমানিত হতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই অসহযোগী মনোভাব একেবারে কাম্য নয়। ভাল ব্যবহার ও সহযোগিতা পেলে আমরা ভাবতে পারি, আমাদের পাশে আপনারা আছেন।
রবীন্দ্রনাথ সাহা, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
সুরক্ষার প্রশ্ন
রাজ্যের প্রাথমিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলিতেও ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ গ্রামের মানুষ রাজ্য সরকারের অনুদান থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের আর্থিক লেনদেন অনায়াসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে পারছেন, দূরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ছুটতে হচ্ছে না। সমবায় সমিতি আজ ব্যাঙ্কিং পরিষেবার বিকল্প।
কিন্তু সমবায় কর্মী হিসেবে একটা প্রশ্ন না করে পারছি না। প্রশ্নটি আমানতের সুরক্ষা নিয়ে। সংবাদে বার বার প্রকাশিত হয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি ঘটেছে বহু সমবায় সমিতিতে। সমবায়গুলি পরিচালিত হয় নির্বাচিত বোর্ডের মাধ্যমে, সেখানে দক্ষ ও পেশাদার লোকের বড়ই অভাব। তদারকির অভাব, সমবায় দফতর ও ব্যাঙ্কের গা-ছাড়া মনোভাব, এগুলির জন্যই দুর্নীতি ঘটতে পারে। গ্রামবাসীর বহু কষ্টে সঞ্চিত অর্থের সুরক্ষার প্রশ্নে কেন এই ঢিলেমি? যে সব সমিতিতে আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটে গিয়েছে, সেখানে আজ অবধি কোনও সুরাহা হয়নি। সঞ্চিত টাকা ফেরত না পাওয়ার ফলে সঙ্কটে বহু মানুষ। সুতরাং সমবায়গুলির উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই ব্যাঙ্কে গচ্ছিত আমানতের সুরক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া সময়মতো বোর্ড নির্বাচন না হওয়ায় শুধুমাত্র কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বহু সমবায় সমিতির কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার, রাজ্য সমবায় দফতর কি আদৌ কোনও পরিকল্পনা করেছে?
দেবব্রত কর্মকার, হাওড়া
ব্যাঙ্কের ভাষা
বেশ কিছু দিন হল আমাদের গ্রামের স্টেট ব্যাঙ্ক নিজ হাতে পাসবুক আপডেট করার জন্য একখানা মেশিন বসিয়েছে। সেখানে গেলেই দেখা যায়, কেউ না কেউ অন্য কাউকে ধরাধরি করছে পাসবুক আপডেট করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আসল সমস্যাটা হল, ভাষা নিয়ে। গ্রাহকরা অধিকাংশই বাংলা (মাতৃভাষা) পড়তে পারেন। অথচ সেই মেশিনে যে লিখিত বা রেকর্ড-করা নির্দেশিকাগুলি দেওয়া হয়, তার প্রতিটাই হয় হিন্দি, না হলে ইংরেজিতে। মানুষকে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে অবিলম্বে পাসবুক আপডেট মেশিনে বাংলা ভাষা সংযুক্তিকরণের দাবি জানাচ্ছি।
রুবেল মণ্ডল, নওদা, মুর্শিদাবাদ
আবর্জনা
পানিহাটি পুর এলাকা এক বিশাল ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। বড় রাস্তা, ছোট রাস্তা, অলি-গলি, সর্বত্র জঞ্জাল-স্তূপ। তার ‘সুবাস’-এ আমোদিত চার পাশ। পুরসভার বর্জ্য ফেলার জায়গা কোথাও নেই। মাসে এক বার বা দু’বার পুরকর্মীরা আসেন সাফাই করতে। পুর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে বহুতল আবাসন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায় নেই নির্মাতাদের, দায় নেই আবাসিকদেরও। অতএব তাঁদের বর্জ্য ফেলার একমাত্র জায়গা খোলা রাস্তা।
বি টি রোড বা বারাসত রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে দেখা যায় জঞ্জালের বিশাল স্তূপ। খোলা নর্দমাগুলোর জমা জল মশার আদর্শ প্রজননক্ষেত্র। কদাচিৎ সেগুলোর দিকে নজর পড়ে পুরসভার। যখন পড়ে, তখন জঞ্জাল তুলে দীর্ঘকাল রেখে দেওয়া হয় সেই নর্দমার পাশেই। তা আবার নর্দমাতেই ফেরে, অথবা সারা রাস্তা ছড়ায়। এই ছবি করোনা যুগেও অপরিবর্তিত।
মালিনী বসু, কলকাতা-১১৪
নামেই ‘নির্মল’
গ্রামে ভোরের আকাশ-বাতাস এখন যতটা সুন্দর, পথের আশপাশ ততটাই অসুন্দর, দুর্গন্ধময়। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে হয়েছে শৌচাগার। বাড়ির দরজায় জ্বলজ্বল করছে সরকারি স্টিকার ‘নির্মল বাড়ি’। সংবাদপত্রে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন, বেতার, দূরদর্শনে লাগাতার তারকা-প্রচার বোঝাতে বাকি রাখেনি শৌচাগার ব্যবহারের উপযোগিতা। অথচ, বাস্তবে এক শ্রেণির মানুষ মুক্ত পরিবেশে মলত্যাগের বিলাসিতা ত্যাগ করতে পারেননি। বর্ষায় জলভরা, সর্পসঙ্কুল মাঠ তাঁদের বাধ্য করেছে পথের পাশকে বেছে নিতে। নারী-পুরুষ দলে দলে, সময় ভাগ করে, সুশৃঙ্খল ভাবে উন্মুক্ত এলাকায় মলত্যাগে এগিয়ে আসছেন। কাঁচকলা দেখাচ্ছেন ‘নির্মল গ্রাম’ তকমাকে।
পার্থ পাল, মৌবেশিয়া, হুগলি
রাস্তার দুর্ভোগ
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই ছোট-বড় রাস্তার দুর্দশার ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত। দীর্ঘ দিন খারাপ হয়ে থাকা বেহাল রাস্তায় মানুষ যাতায়াত করতে পারছিলেন না, রাস্তা সংস্কারের দাবিতে পথ অবরোধ থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কাজ হচ্ছিল না। এত কিছুর পর রাস্তা এক বার তৈরি বা সংস্কার হয়ে গেলে তার গুণগত মান নিয়ে অধিকাংশেরই কোনও প্রশ্ন তোলার ইচ্ছে বা মানসিকতা থাকে না। রাস্তা তৈরি বা সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদাররা এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়। রাস্তার কাজের মান যেমনই হোক, তা নিয়ে এদের কোনও দায়বদ্ধতা বা মাথাব্যথা নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরাও কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।
জনগণকেই প্রশ্ন তুলতে হবে সংস্কারের গুণগত মান নিয়ে। মানুষকে বুঝতে হবে, তাঁদেরই করের টাকায় সংস্কার হওয়া রাস্তা এত ঘন ঘন কেন খারাপ হয়? এই সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিভূতি ভূষণ রায়, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
মৃত্যুফাঁদ
এক দিন যে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়িচালকরা মনের সুখে দূরে পাড়ি দিতেন, সেই রাস্তা এখন আতঙ্কের মৃত্যুফাঁদ। জায়গায় জায়গায় পিচের প্রলেপ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়িচালকরা এই সড়কে টোল ট্যাক্স দেন। তার পরেও পদে-পদে ব্রেক কষতে বাধ্য হচ্ছেন, দুর্ঘটনাও ঘটছে। গাড়ির অবস্থাও সঙ্গিন হয়ে পড়ছে। বৃষ্টি পড়লে তো দুর্ভোগের চূড়ান্ত। ডানকুনি, পালসিট, দুর্গাপুরের বাঁশকোপা— এই তিন জায়গায় টোল ট্যাক্স দিয়ে কি একটি নিরাপদ পথ আশা করা যায় না?
জয়শ্রী কুণ্ডু পাল, কলকাতা-৭৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।