Workers

সম্পাদক সমীপেষু: বিচারে বঞ্চনা

দূরদূরান্ত থেকে বহু বিচারপ্রার্থী নবমহাকরণে এসে ফিরে যাচ্ছেন। কার্যত এক হয়রানির শিকার হয়ে তার বিচার পেতে অন্য হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। ন্যায়বিচারে বিলম্ব মানে যে কার্যত বিচারবঞ্চনা, তা সকলেই জানেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২২ ০৪:১২
Share:

শ্রম আদালতগুলি পূর্ণশক্তিতে কাজ করছে না।

কলকাতার নবমহাকরণ ভবনে বর্তমানে সাতটি শিল্প ট্রাইবুনাল ও দু’টি শ্রম আদালত আছে। হাজার হাজার শ্রমিকের বেআইনি বরখাস্ত-সহ অন্যান্য বিষয়ের বিচার ‘শিল্প বিরোধ আইন’ মোতাবেক এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে হয়ে থাকে। শ্রম ট্রাইবুনাল ও শ্রম আদালত গঠন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, শ্রম বিষয়ক মামলার আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। অন্যান্য মামলার ভিড়ে জীবিকাহানি, ভুক্তভোগীদের বিচারপ্রাপ্তি যাতে হারিয়ে না যায়,তা নিশ্চিত করা ও ন্যায্য বিচার ত্বরান্বিত করা।

Advertisement

নিয়ম হল, কোনও বিশেষ ট্রাইবুনাল তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনও আদালতে সে বিষয়ে বিস্তারিত শুনানির কোনও সুযোগ থাকে না। অথচ, শ্রম আদালতগুলি পূর্ণশক্তিতে কাজ করছে না। নব মহাকরণের শিল্প ন্যায়পীঠ নম্বর ৩, ৭, ৮-এ কোনও বিচারপতি নেই। অন্যায়-অবিচারের শিকার হাজার হাজার দুঃস্থ, প্রান্তিক শ্রমিক-কর্মচারী বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

দূরদূরান্ত থেকে বহু বিচারপ্রার্থী নবমহাকরণে এসে ফিরে যাচ্ছেন। কার্যত এক হয়রানির শিকার হয়ে তার বিচার পেতে অন্য হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। ন্যায়বিচারে বিলম্ব মানে যে কার্যত বিচারবঞ্চনা, তা সকলেই জানেন। এমতাবস্থায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব, শ্রম ও আইন মন্ত্রকের কাছে আমি আবেদন করছি যে, বিচারকহীন শিল্প ন্যায়পীঠসমূহে অবিলম্বে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক এবং অবিচারের শিকার হওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের দ্রুত বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

Advertisement

সুবীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯

নতুন সুন্দরবন

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঘোষিত হল সুন্দরবন জেলা। গত ২ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবন জেলা গঠনের ঘোষণা করেন। সুন্দরবনের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হল। তাঁদের কাছে এটি অত্যন্ত খুশির খবর।

নবগঠিত সুন্দরবন জেলার প্রশাসনিক রূপ ঠিক কেমন হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সম্ভবত দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত সুন্দরবন অঞ্চলের ১৩টি ব্লক নিয়ে গঠিত হবে সুন্দরবন জেলা— গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং-১, ক্যানিং-২, জয়নগর-১, জয়নগর-২, কুলতলি, মথুরাপুর-১, মথুরাপুর-২, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগর ও কাকদ্বীপ। ব্লকগুলি উপকূল বরাবর পুঁতির মালার মতো সাজানো, যার এক প্রান্তে গোসাবা ও অন্য প্রান্তে সাগর ব্লক। গোসাবা থেকে সাগরের ভৌগোলিক দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এখন যে প্রশ্নটি সর্বাধিক আলোচিত, সেটি হল সুন্দরবন জেলার প্রধান কার্যালয় কোথায় হবে? সম্ভবত রাজ্য সরকারের কাছেও বিষয়টি আলোচনার স্তরে। সুন্দরবনের মানুষের এ বিষয়ে ভিন্ন মত। ব্লকগুলির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এত খারাপ, যে ব্লকেই প্রধান কার্যালয় হোক তাতে দূরবর্তী ব্লকের মানুষের সমস্যা হবে।

সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিবেচনার জন্য সুন্দরবন জেলার প্রধান কার্যালয় কোথায় হবে, সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করছি। ‘সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ’-এর কার্যালয় সল্ট লেক থেকে সুন্দরবনে স্থানান্তরিত করতে হবে। সুন্দরবন জেলার প্রধান কার্যালয় গোসাবা ও সাগর ব্লকের মধ্যবর্তী কোনও এক ব্লকে হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, কোনও এক প্রান্তে হলে দূরবর্তী প্রান্তের মানুষের পক্ষে যোগাযোগের অধিক সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে জয়নগর-২ ব্লক সর্বাধিক সুবিধাজনক স্থান। জয়নগর-২ ব্লক থেকে গোসাবা বা সাগরের দূরত্ব প্রায় সমান (৮০ কিলোমিটার)। তা ছাড়া গোসাবা, সাগর ও পাথরপ্রতিমা ছাড়া অন্য ব্লকের সঙ্গে এই ব্লকের সড়কপথে যোগাযোগ আছে। জেলার প্রধান কার্যালয়ের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে এক লপ্তে যে বিশাল পরিমাণ জমির প্রয়োজন, তা এই ব্লকে পাওয়া সম্ভব। বর্তমান রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় জয়নগর-২ ব্লকে সহজে পৌঁছনো যায়।

পরবর্তী কালে প্রত্যেকটি ব্লকের সঙ্গে জেলার প্রধান কার্যালয়ের সহজ যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত সড়ক নির্মাণ অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখতে হবে। তা ছাড়া কুলতলি ব্লকের কৈখালিকে কেন্দ্র করে সহজেই জলপথে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। কৈখালি থেকে জয়নগর-২ ব্লকের দূরত্ব অতি সামান্য (মাত্র ১৫ কিমি)। জলপথ পরিবহণ উন্নত করার লক্ষে দ্রুতগামী লঞ্চ এবং যাত্রী ওঠানোর জন্য উপযুক্ত জেটির ব্যবস্থা করতে হবে। জেলার বিভিন্ন দ্বীপের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘চক্ররেল’-এর মতো রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

প্রশাসনিক পরিকাঠামো গঠনের পর এখানকার মূল সমস্যাগুলি সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সুন্দরবন একটি অন্যতম পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। তাই এখানকার মানুষের দারিদ্র দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত। প্রয়োজন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতিও। গোসাবা, পাথরপ্রতিমা ও সাগরদ্বীপকে ব্রিজের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বিদ্যুৎ পৌঁছতে হবে সুন্দরবন জেলার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। স্থায়ীকরণ করতে হবে ৩৫০০ কিমি নদীবাঁধের।

দারিদ্রের কারণে বনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে ও খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই যাতে তাঁরা নিজের বাগানে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মধু উৎপাদন করতে পারেন, বা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিজেদের পুকুর, ভেড়িতে সামুদ্রিক কাঁকড়া চাষ করতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সংস্থান করতে হবে। সেচের মাধ্যমে এক-ফসলি জমিগুলিকে দ্বি-ফসলি বা বহু-ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করতে হবে। এখানকার উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প হল— নৌকা তৈরি, বাঁশ, খেজুর, তালগাছের পাতা থেকে নানা দ্রব্য, শোলার দ্রব্য তৈরি ইত্যাদি। আর্থিক সহায়তা দানের মাধ্যমে সুন্দরবনের মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলা সম্ভব। তা ছাড়া গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি পালনের পরিকাঠামো গড়ে তুললে বিকল্প কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

সুন্দরবনের মধু, মোম, চিংড়ি, কাঁকড়ার দেশ ও বিদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা আছে। উপযুক্ত বিপণনের ব্যবস্থা করলে যথেষ্ট আয় বৃদ্ধি সম্ভব। বর্ধিত আয়ের একটা অংশ জেলার উন্নয়নে ব্যবহার করলে এখানকার আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। তা ছাড়া ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতে, এবং বাঘ, হরিণ প্রভৃতি প্রাণীর যথাযথ সংরক্ষণ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা জরুরি।

নবগঠিত সুন্দরবন জেলা প্রশাসন উল্লিখিত বিষয়গুলির দিকে নজর দিলে সুন্দরবনবাসীর বহু দিনের বঞ্চনার নিরসন হবে।

অমলেন্দু চক্রবর্তী, সুন্দরবন

ভুল বার্তা

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয়তার বিরুদ্ধে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস (‘বিশ্বাস করি না মোদী করাচ্ছেন’, ২০-৯)। কী বার্তা যাচ্ছে এতে? তৃণমূল নেতৃত্ব বলেই চলেছে, যাঁরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছেন, তাঁদের পাশে দল নেই। অথচ, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সক্রিয়তা কমানোর চেষ্টা করছেন। এ কি দ্বিচারিতা নয়? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে ওঠার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে! কিন্তু তদন্তের ফলে যে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে, তৃণমূল দলের বা বিভিন্ন আমলারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, তার দায় দল কেন নেবে না? দুর্নীতি যদি না হয়ে থাকে, তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘অতি সক্রিয়’ হয়েও ব্যর্থ হবে। তাদের কাছে সততার পরীক্ষা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, ‘তৃণমূল দলের সবাই চোর’। সৎ সাহস থাকলে গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে আইনানুগ আচরণ করা উচিত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে ‘সততার প্রতীক’ বলে দাবি করেন। সেই বিশ্বাসে ও প্রত্যয়ে রাজ্যের ২৯৪টি আসনে তিনিই ‘প্রার্থী’ ধরে নিয়ে তৃণমূলকে বিশাল জয় এনে দিয়েছে বঙ্গবাসী। ‘কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা’-নামক কষ্টিপাথরে যত ঘষামাজা হবে, ততই তাঁর সৎ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা পাবে।

বরুণ মণ্ডল, তিলডাঙা, নদিয়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement