প্রফুল্লচন্দ্র রায়। —ফাইল চিত্র।
‘বিশ্বাসে মিলায় বিজ্ঞান?’ (২০-৭) প্রবন্ধে তাপস কুমার দাস সঠিক ভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চা আদৌ বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার প্রক্রিয়াকে নিশ্চিত করে কি না। বাস্তবিক আমাদের দেশে স্কুলে-কলেজে যে ভাবে বিজ্ঞান পড়ানো হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর পাঁচটি বিষয়ের মতো করে, যা পড়লে, মুখস্থ করলে নম্বর পাওয়া যায়, কিন্তু তাতে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠে না। বিজ্ঞান, যা বিশ্বের সমস্ত ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ককে স্পষ্ট করে, অজ্ঞানতার উপর আলো ফেলে, তাকে কখনও অন্য বিষয়গুলির থেকে সে ভাবে আলাদা করে দেখা হয় না। বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরাও সে ভাবে বিষয়টিকে ছাত্রদের সামনে উপস্থিত করার কথা ভাবেন না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনকি যাঁরা বিজ্ঞান শিক্ষা দেন, তাঁরা নিজেরাও বিজ্ঞানমনস্ক নন। বিজ্ঞান পড়ানো এবং অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস একই সঙ্গে চলতে থাকে। ছাত্ররাও তাই বিজ্ঞানের নামে কতকগুলো তত্ত্ব জানে, তথ্য জানে আর কিছু সূত্র মুখস্থ করে। এরই ফল হিসাবে দক্ষ চিকিৎসকও রোগীর সঙ্কটজনক অবস্থায় পরিজনদের ঈশ্বরকে ডাকার কথা বলেন।
বিজ্ঞান সব বিষয়ে প্রশ্ন করতে শেখায়, সব কিছুর পিছনে যুক্তি খুঁজতে শেখায়। বিজ্ঞানের সাধনা সত্যের সাধনা। প্রতিটি বিষয়ে সত্য উদ্ঘাটনই বিজ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান এবং অন্ধতা সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর বিষয়। আমাদের দেশে শিক্ষার পাঠ্যসূচি ও পঠনপদ্ধতিতে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার যে প্রক্রিয়াটির সূচনা বিদ্যাসাগরের হাত দিয়ে হয়েছিল এবং যা প্রফুল্লচন্দ্র রায় (ছবিতে), অক্ষয়কুমার দত্তদের হাত ধরে আরও প্রসারিত হয়েছিল, পরবর্তী কালে স্বাধীন দেশের শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই ধারাটি ক্রমশ শুকিয়ে যায়। আর কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদের সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্কতার তো সরাসরি শত্রুতা।
এক জন যথার্থ বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ শাসকের রক্তচক্ষুর সামনেও সত্যভ্রষ্ট হন না। এই বিজ্ঞানমনস্কতার যথেষ্ট অভাবের জন্যই উচ্চশিক্ষিত নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ কিংবা বিজ্ঞানীদের সিংহভাগই শাসকের অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকেন, প্রতিবাদ করতে পারেন না। শাসকরাও তাই বিজ্ঞানের প্রযুক্তির দিকটির যতখানি অনুরাগী, বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার দিকটিকে ঠিক ততটাই পরিহার করতে চায়।
সমুদ্র গুপ্ত, কলকাতা-৬
চিনকে টপকে
দীর্ঘ দিন বিশ্বের জনবহুল দেশের খেতাব নিজের দখলে রেখেছিল চিন। কিন্তু এখন সে দেশে জন্মের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘পপুলেশন ফান্ড’-এর প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি ভারতের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪২.৮৬ কোটিতে, যেখানে চিনের জনসংখ্যা হবে ১৪২.৫৭ কোটি। ১৯৫০ সাল থেকে জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই প্রথম চিনকে ‘প্রথম স্থান’ থেকে সরিয়ে শীর্ষে পৌঁছবে ভারত।
চিনে জনসংখ্যার ক্রমহ্রাসমানতার অন্যতম কারণ তাদের এক সন্তান নীতি। কিন্তু ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল এখনও পাশ হয়নি। প্রশ্ন হল, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে ওঠা কি যথেষ্ট উদ্বেগের নয়? এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার চাপ কি অর্থনীতির উপর প্রভাব সৃষ্টি করবে না, বা করছে না? যে ভাবে দিনের পর দিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, নেই সেই তুলনায় কাজের সুযোগ, নেই কোনও বৃহৎ শিল্প। ফলে কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে বিপুল পরিমাণে। বন্ধ হয়েছে অনেক কলকারখানা। বেড়েছে দারিদ্র। রুজিরুটির টানে বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষিত মানুষকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে কাজ হারানোর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। দেশের বাইরে যাঁরা কাজে গিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই কাজ হারিয়ে বিপন্ন। ঊর্ধ্বমুখী জিনিসের দাম, ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে গরিব মানুষ। এত কিছুর পরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি যথেষ্ট চিন্তা ও উদ্বেগের। যদিও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভারত অনেক কিছুই করেছে, তথাপি এখনও বন্ধ হয়নি নাবালিকা বিবাহ, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, যা জন্মনিয়ন্ত্রণের পথে বাধার সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশক ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির রেখচিত্র এ ভাবেই চড়বে এবং এর পর এই রেখচিত্র নিম্নমুখী হতে পারে। তবে এই রিপোর্ট পুরোটাই রাষ্ট্রপুঞ্জের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে, কারণ ২০১১ সালের পর থেকে জনশুমারি আর করেনি ভারত। ২০২১ সালের পর থেকে সে উদ্যোগ করা হলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। ফলে জনসংখ্যা নিয়ে ভারতের কোনও সরকারি পরিসংখ্যান নেই এই মুহূর্তে।
উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি
গতির শিকার
‘বেপরোয়া বাইকে ধাক্কা মিনিবাসের, মৃত্যু দম্পতির’ (৩১-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়লাম। ১৯ ও ২০ বছরের দুই সদ্য যুবক-যুবতীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। কিন্তু অন্য দিকটিও ভেবে দেখা প্রয়োজন। এখনকার দিনে অল্পবয়সি বাইক আরোহীদের দুরন্ত গতিতে গাড়ি চালানো একটা ফ্যাশন। গলি থেকে রাজপথ শুধু গতি আর গতি। রাজপথে এই বাইকচালকদের লক্ষ্য থাকে সামনের গাড়ির নাগাল পাওয়া ও দুরন্ত গতিতে তাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া। গতিশীল দুই গাড়ির রেষারেষি, কে কাকে কী ভাবে ওভারটেক করবে, ওটাই তখন পাখির চোখ। ফলে কখন বাইকের নিয়ন্ত্রণ চালকের হাত ছাড়া হচ্ছে, চালক জানতেই পারছেন না। শেষ পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে ছিটকে পড়ে তাঁরা আহত বা নিহত হচ্ছেন, অথবা গাড়ি বা ডাম্পারের সঙ্গে সংঘর্ষ করে অকালমৃত হচ্ছেন। এই বেপরোয়া বাহিনীকে রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। বড় রাস্তার মোড়ে পুলিশ আর সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে বটে, কিন্তু এর বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল থাকে বেআব্রু। ফলে অহরহ এমন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
অঞ্জন কুমার শেঠ, কলকাতা-১৩৬
ট্রেনের দেরি
ট্রেনের টিকিটের মূল্য কম হওয়ায় নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সকলেরই একমাত্র ভরসার মাধ্যম ট্রেন। তবে বর্তমানে সময়ের কোনও ঠিক থাকে না দক্ষিণ-পূর্ব রেল শাখার। লোকাল, এক্সপ্রেস বা সুপারফাস্ট দূরপাল্লার যে কোনও ট্রেন প্রতি দিন প্রায় এক ঘণ্টা বা তারও অধিক সময় দেরিতে চলছে। অনেক সময় আবার বেশ কিছু ট্রেন বাতিল বলেও শোনা যায়। কখনও আবার নতুন করে ঠিক করা হয় সময়সূচি। সাঁতরাগাছি থেকে হাওড়া পৌঁছতেই সময় লেগে যাচ্ছে এক ঘণ্টারও বেশি। প্রতি দিন এতটা সময়ের হেরফের হওয়ার কারণে ভুগতে হচ্ছে নিত্যযাত্রী থেকে দূরপাল্লার যাত্রীদের। ফলস্বরূপ গন্তব্যে পৌঁছনো যাচ্ছে না সময়মতো। চাকরিজীবী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া থেকে লক্ষাধিক মানুষকে এই হয়রানির মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল বিভাগ। শুধু দিনেরবেলায় নয়, রাতেরবেলাও এই একই ভোগান্তি অব্যাহত। ফলে বাড়ি ফেরারও নেই কোনও নির্দিষ্ট সময়।
এ ভাবে এত দেরি করা হলে বহু মানুষের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে কর্মক্ষেত্রে সময়মতো না পৌঁছনোর কারণে। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হলে, সর্বোপরি সমাজমাধ্যমে এই শাখার কর্তৃপক্ষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তাঁরা কোনও রকম পদক্ষেপ করছেন না। কত দিন আর এ ভাবে চলবে? অবিলম্বে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দক্ষিণ-পূর্ব শাখার বিবেচনা করা উচিত। সাধারণ মানুষকে যেন এই রেল পরিষেবার বিকল্প খুঁজতে না হয়।
সঙ্গীতা কর্মকার, শ্রীরামপুর, হুগলি