বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে থাকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু-সহ হরেক রকম ফলমূলের আয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হল, ফল খেয়ে ফলের বীজ যত্রতত্র ফেলতে আমরা অভ্যস্ত, যা অত্যন্ত খারাপ একটি অভ্যাস। অথচ, ফলের বীজের সঠিক ব্যবহার আমাদের বহুবিধ উপকার সাধন করতে সক্ষম।
বর্তমান সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বৃক্ষনিধন। আর গ্রীষ্মকালের তাপদাহ হ্রাস করতে বড় গাছের কোনও বিকল্প নেই। সালোকসংশ্লেষের সময় গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে আমাদের বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহ করে। এ ছাড়া বন্যা প্রতিরোধ, নদীভাঙন রোধ এবং জলবায়ুর আকস্মিক পরিবর্তন ঠেকাতেও গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের ত্বকের যে মারাত্মক ক্ষতি করে, তা থেকে রেহাই পেতেও গাছপালাই প্রধান হাতিয়ার।
সেই কারণেই পৃথিবীতে গাছের পরিমাণ অধিক হারে বাড়াতে হলে ফলের একটি বীজও এখন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত্রতত্র বীজ ফেলে নষ্ট না করে সঠিক স্থান নির্বাচন করে, যেমন— নদীর পাড়, রাস্তার ধার, কিংবা বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা-সহ অন্য যে সব জায়গায় গাছ বড় হওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে, এমন উপযুক্ত স্থানে ফলের বীজ ফেলতে হবে। এক নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
আবু মো. ফজলে রোহান
কুমিল্লা, বাংলাদেশ
অশ্বডিম্ব
সম্পাদকীয় নিবন্ধ ‘শুধুই নির্দেশ’ (২৪-৫) পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের নিস্পৃহতার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রসঙ্গ উত্থাপিত করেছে। গত এক বছরের ঘটনা সরকারের স্মৃতিতে যে কতটা অস্পষ্ট হয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের সর্বত্র পরিচয়পত্র ছাড়া বিনামূল্যে রেশন, ঘরে ফেরার ব্যবস্থার জন্য সুপ্রিম কোর্টের পুনরায় নির্দেশ সেটাই প্রমাণ করে। গত বছর লকডাউন চলাকালীন কিছুটা নাগরিক সমাজের চাপে এবং একের পর এক জনস্বার্থ মামলায় শীর্ষ আদালতের জরুরি নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকার কিছু প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। তার অধিকাংশই এখনও অপূর্ণ। অবশ্য আত্মনির্ভর হওয়ার জ্ঞান বিতরণ করতে কার্পণ্য করেনি কেন্দ্রীয়
শাসক দল।
তবে একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সমাধান খোঁজার দায়িত্ব থেকে পিছু হটেনি কেন্দ্রীয় সরকার। নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী পদে বসেই পরিকল্পনা কমিশনের ধ্বংসস্তূপের উপর যে নীতি আয়োগ গঠন করেন, তার উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে একটি জাতীয় নীতির খসড়া তৈরির। এই সাত বছরে যে ক’টি আগ্রাসী জনবিরোধী নীতি, যেমন— লেবার কোড, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রের বিক্রয়, বিলগ্নিকরণ, তিনটি কৃষি আইন— সব কিছুর কৃতিত্ব এই নীতি আয়োগের। ইতিমধ্যেই আর কিছু না হোক সাত মন তেল পুড়িয়ে নীতি আয়োগ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এক জাতীয় নীতির খসড়া তৈরি করেছে।
অজস্র বড় বড় কথা, অর্থাৎ কেন্দ্র, রাজ্য-সহ স্বশাসিত তৃণমূল স্তরের শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। দলিত ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী যাতে নিজেদের গ্রামে-শহরে কাজ পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার— এমন কথাও বলেছে। বলা হয়েছে, পরিযায়ী হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রাজ্য যেন শ্রমিকের পরিবারের খাদ্য ও শিক্ষার অধিকারকে গুরুত্ব দেয়, সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এত কথা বলার পর কার্যত কোনও নির্দিষ্ট অধিকার সুরক্ষিত করার ধার-কাছ দিয়েও যায়নি এই নীতি আয়োগের খসড়া। অর্থাৎ, আর একটি অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে সরকার। আগ্রাসী নয়া উদারবাদ এবং ফ্যাসিবাদী দর্শনের সঙ্গে অমানবিক মিথ্যাপ্রচারের ত্র্যহস্পর্শে আজ ভারতের জনজীবন ওষ্ঠাগত। তাই কখনও কখনও বিচারের বাণীর জন্য অধীর আগ্রহ নয়, প্রতিটি নাগরিক-সহ খেটে-খাওয়া মানুষকে পথে নেমে এই দুঃসহ ব্যবস্থার উচ্ছেদের পদক্ষেপ করতে হবে। সাংবিধানিক কাঠামোর স্তম্ভগুলিকে শাসক দল ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছে। প্রয়োজনে আরও সুদৃঢ় স্তম্ভ নির্মাণের পথ বেছে নিতে হবে।
পার্থসারথি দাশগুপ্ত
রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
বিবেকহীন
কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে গত ২৩ মে আমার মা মূলত বার্ধক্যজনিত অসুখ, সঙ্গে জ্বর ও কিছুটা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। পরের দিন মারা যান সকাল সাড়ে আটটায়। ফোন নম্বর দেওয়া সত্ত্বেও ডাকা হয়নি। পৌনে ন’টা নাগাদ গেলে বলা হয়, এই মাত্র...! দেহ দোতলা থেকে নীচে নামানোর জন্য দাবি করা হল ৭০০ টাকা। কাগজপত্র নিয়ে দু’বার এ ঘর-ও ঘর করেছে, বকশিশ চাই। ভর্তির দিন সন্ধ্যায় আয়ামাসিকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর দেখা নেই। রাতের আয়ার জন্য রাত ৮টা অবধি অপেক্ষা করে এক জনকে ঠিক করি। সেই ১৫০ টাকা দিতে হয়। সঙ্গে স্যানিটাইজ়ারও কিনে দিতে হয়। এঁরা শুধু টাকা চেনেন। আগে টাকা দিতে হবে, পরে সব। বিবেক, মনুষ্যত্ব, দায়িত্ব বিদায় নিয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে সিসিটিভি লাগানো প্রয়োজন। রোগীর দেখভাল ঠিকমতো হয় কি না, দরকারে দেখা যাবে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে কাউকে টাকা না দেওয়ার পরামর্শ টাঙানো। এ দিকে ইসিজি করতে ১৫০ টাকা লাগে। রোগী নিয়ে এই কারবার বন্ধ হোক।
শিবপদ চক্রবর্তী
কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
ভাঙন
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি ব্লকের কাবিলপুর, তেঘরিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাগীরথী নদীর ভাঙন রাক্ষুসে রূপ ধারণ করেছে। দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না করলে ২০০০ সালে তৈরি বোল্ডার পিচিং-এর বাঁধন এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। এর আগে বহু বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ, দ্রুত গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজ শুরু হোক।
রহমতুল্লাহ
কাবিলপুর, মুর্শিদাবাদ
রামদেব
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার বিরুদ্ধে ‘বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্যের জন্য যোগগুরু রামদেবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (২৩-৫)। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে তিনি নিজের ওষুধ প্রোমোশনের মঞ্চে অ্যালোপ্যাথি সম্পর্কে শুধু তির্যক মন্তব্যই করেননি, বলেছেন ‘লাখো লাখো কি মওত অ্যালোপ্যাথি দাওয়াই খানে সে হুয়ি হ্যায়’। এ দেশের জলবায়ু অলৌকিকতা, তন্ত্র-মন্ত্র-মাদুলি-কবচের প্রতি চিরকাল নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে এসেছে। আয়ুর্বেদ আর যোগের মোড়কে বাবা রামদেবের কমপ্লিট প্যাকেজ সেই পালের হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে তরতর করে এগিয়েছে। ইউপিএ-টু সরকারের নীতি পঙ্গুত্ব অবস্থায় সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরূপে এক দিকে গাঁধীটুপি পরিহিত অণ্ণা হজারে, অপর দিকে বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ফেরানোর দাবিতে গেরুয়া বসনধারী বাবা রামদেবের আন্দোলন মনমোহন সরকারের রাতের ঘুম ছুটিয়েছিল। পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও তাদের আত্মিক অভিভাবক স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ।
সমকামিতা যাঁর চোখে অসুস্থতা, যিনি ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতে অনিচ্ছুক ব্যক্তির গর্দান নেওয়ার পক্ষে, যাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি-সহ ৮১টি মামলা রয়েছে, দিব্য ফার্মাসির ওষুধে পশুর হাড়-গুঁড়ো মেশানোর অভিযোগ— সবই ঠিক চলছিল। কিন্তু ‘করোনিল’-কে করোনা প্রতিরোধক বলে হাস্যকর দাবি ও ‘অ্যালোপ্যাথি’-কে ভ্রান্ত বিজ্ঞান ঘোষণা করে বাবা রামদেব বড্ড কাঁচা কাজ করে বসেছেন।
সরিৎশেখর দাস
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা