জাতীয়তাবাদীদের বিচ্যুতি উল্লেখ করেছেন আবাহন দত্ত (‘রাখবে নীচে, টানবে পিছে’, ১০-২)। তবে একটি অসম্পূর্ণতা চোখে পড়ল। জাতীয়তাবাদীদের পাশাপাশি বামপন্থীদের বৃহত্তর অংশ সে দিন উপস্থিত ছিলেন, আদর্শগত সংগ্রাম পরিচালনাও করেন। জাতি, ধর্ম, ভাষার ভিত্তিতে সঙ্কীর্ণ যে রাজনীতির প্রচলন ছিল, বামেদের রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার অপসারণ হয়েছে কি? বর্তমান অবস্থা দেখে কি বিশ্বাস করা যায় যে, ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় থেকেও বামেরা তা করেছেন? বরং জনসাধারণকে প্রশাসনিক বন্ধন দিয়ে নিজেদের মতামতে ধরে রেখেছিলেন।
বামেরা জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধতা করেছেন ঠিকই, কিন্তু জনমানসে প্রাচীন ধ্যানধারণা, বিশ্বাস দূর করতে সচেতন ভাবে উদ্যোগী হননি। তদুপরি, এ দেশের ঐতিহ্যকে প্রায় উপেক্ষাই করেছেন, মতাদর্শ উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যে যুক্তিহীন সংস্কার ও বিশ্বাস মানুষের মনে গেঁথে আছে, তা এ-দেশীয় চিন্তা দিয়েই দূর করা যেত। ভাবুন তো, বিদ্যাসাগর কেন এখনও সকলের সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছেন? তিনি প্রাচ্যের নির্যাসের উপর পাশ্চাত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অথচ, বামপন্থীরা এ-দেশীয় বহুত্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের বীজগুলি খুঁজে বার করে, মানুষের যুক্তিহীন বিশ্বাস অপসারণ করে নিজেদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করলেন না। এ-ও জাতীয়তাবাদীদের মতো সমান দোষে দুষ্ট। আজও তাঁদের প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার দিকে ঝোঁক, নির্বাচনী শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ। বিশেষ কোনও মতাদর্শের মূল্য সেখানে ঠাঁই পেয়েছে কি? ভারতের ভাগ্যাকাশে নতুন কোনও অশনি সঙ্কেত তৈরি হলে, দায় বামপন্থীদেরও।
মহীদাস ভট্টাচার্য, কলকাতা-৮৪
শতবর্ষে
যদুনাথ সরকার স্বর্ণপদক, রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত ইতিহাসবেত্তা অমলেশ ত্রিপাঠীর জন্মশতবর্ষে তাঁর ইতিহাসচর্চার ধারাটি আরও এক বার স্মরণ করা দরকার। তিনি স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে, দূর অতীত ও অনতি-অতীতের বিশ্লেষণে নতুন ধারার প্রবর্তন করেছেন। তাঁর ধ্রুপদী, রুচিশীল, তথ্যভিত্তিক বিচার, এবং ব্যাখ্যার মৌলিকতা ইতিহাসকে বিশেষ আঙ্গিকে উপস্থাপিত করেছে। তিনি ঔপনিবেশিক বাংলার বাণিজ্য নিয়ে, স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনই ইতিহাসবিদের দৃষ্টিতে কলম ধরেছেন ঈশ্বরচন্দ্র, শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দকে নিয়ে। ইতিহাসবিশারদ অমলেশ ত্রিপাঠী সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তা সত্ত্বেও তাঁর জন্মশতবর্ষ (১৯২১-২০২১) উদ্যাপনের তেমন কোনও প্রয়াস দেখা যাচ্ছে না। এর জন্য দায়ী হয়তো আমাদের আত্মবিস্মৃতির প্রবণতা। অতীতের পুনরুদ্বোধনের তাগিদ যাঁদের নেই, সেই বাঙালির মনন-বৈভব আদপেই বাঁচবে কি?
সুমন ভৌমিক, কলকাতা-৩
আগুনের দিন
‘ডায়েরির পাতায় আগুনঝরা দিন’ (কলকাতার কড়চা, ৮-২) বিনয়কুমার নন্দীর কলমে নেতাজি এবং আইএনএ-র স্মৃতি তুলে ধরেছে। সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী সূচনার উদ্যাপন-আবহে আইএনএ যোদ্ধাদের কীর্তি স্মরণ প্রাসঙ্গিক। এঁদেরই এক জন ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল বিনয়কুমার নন্দী। সম্পর্কে তিনি আমার মামা। ট্রাঙ্কের মধ্যে রেখে যাওয়া ডায়েরিতে লেখা তাঁর স্মৃতিকথা উদ্ধারের সুবাদে জানতে পেরেছি অনেক অজানা ইতিহাস। এমন কত স্বাধীনতার বীর সেনানী এখনও আছেন, বা রয়ে গিয়েছে তাঁদের স্মৃতি।
আইএনএ: সংগ্রামের স্মৃতিকথা বইটি প্রকাশের সময় আমাদের মনে হয়েছে, এঁদের কথা তুলে ধরা কর্তব্য। আইএনএ-র সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের যুদ্ধকালীন ও স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের অভিজ্ঞতা আমাদের জাতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে। তাঁদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু-পরিজন ও উত্তরপ্রজন্মও যদি এ ভাবে পূর্বসূরিদের জীবনকৃতি ও স্মৃতিকথা প্রকাশে বা প্রচারে এগিয়ে আসেন, ভাল হয়। উল্লিখিত বইটিতে আইএনএ-সংগ্রামীদের এক তালিকা আছে, যেখানে হুগলি, ঢাকা, রংপুর, পঞ্জাব, লাহৌর, রাওয়ালপিন্ডি, লখনউ, বিহার, দিল্লি, ত্রিবাঙ্কুর, গঢ়বাল, গুয়াহাটি, রাজপুতানা, বম্বে ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, ওড়িশার ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
শেখর কুমার শেঠ, কলকাতা-১১৫
বিরোধ নেই
ধার্মিক হতে হলে যুক্তিবর্জিত হতে হবে, এই ধারণার গোড়ায় গলদ আছে (‘আমরা তর্কনিষ্ঠ না অন্ধ ভক্ত’, ২৪-২)। রূপেন্দ্র নারায়ণ রায়ের নিবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার জগতেও যুক্তি-তর্ক ও বিচারের যথাযোগ্য স্থান রয়েছে। জ্ঞান বহির্জগতের হোক বা অন্তর্জগতের, অবিরাম অন্বেষণই তা অর্জন করার একমাত্র পথ। ধর্ম বা অধ্যাত্মজগতেও বিশ্বাস সর্বেসর্বা নয়। হিন্দুশাস্ত্রগুলিতে যুক্তিতর্কের চর্চা রয়েছে। ধর্ম হল আত্মস্বরূপের সন্ধান। অধ্যাত্মজগতের পরম সত্যগুলি মন-বুদ্ধির অগম্য হলেও, মন-বুদ্ধি দিয়েই সেই সত্য সন্ধানের পথ চলা শুরু হয়। স্বামী বিবেকানন্দের অধ্যাত্মবাদ যুক্তিবাদের বিরোধী নয়।
মনের সংশয় ও জিজ্ঞাসাকে দূর করার জন্য উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া বিশ্বাসের মধ্যে আত্মবিসর্জনের কথা আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়নি। অবিরাম জিজ্ঞাসা ও নিবিড় অনুসন্ধানই সত্য উপলব্ধির পথ। সত্যকে জানার জন্য চাই নমনীয় মন, গোঁড়ামি ও একদেশদর্শিতা থেকে যা মুক্ত। যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাস প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হলেও, প্রকৃত ধার্মিককে যুক্তি-বিচারের পথ পেরিয়ে আসতে হয়। ধর্ম যখন ব্যক্তি-মানুষের অন্তর্জগতের বীক্ষণ ও উপলব্ধি, তখন তার সঙ্গে যুক্তি-চর্চার কোনও অনিবার্য বিরোধ নেই।
অপূর্ব সৎপতি, সারেঙ্গা, বাঁকুড়া
তার্কিক
‘আমরা একনিষ্ঠ না অন্ধ ভক্ত’ নিবন্ধে লেখক একটি বিতর্কিত বিষয়ের অবতারণা করেছেন। প্রাচীন ভারতে বৈশালীর লিচ্ছবি সম্প্রদায় তার্কিক বলে চিহ্নিত। চার্বাক, কারও মতে নির্দিষ্ট কোনও ঋষি বা ব্যক্তি নন। ‘চার্বাক’ মানে চারুবাক, যাঁরা খুব সুচারু ভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। এটা গোষ্ঠীপরম্পরায় বাহিত এক বিশেষ শিক্ষা। বারাণসী, নবদ্বীপে তার প্রভাব ছিল। তর্কশাস্ত্রের প্রতিযোগিতার আসর বসত সেখানে। রূপ, সনাতন, শ্রীজীব গোস্বামীর নাম সুবিদিত। তর্কচঞ্চু, ন্যায়রত্ন, তর্কবাগীশ, বাচস্পতি তাঁদের খেতাব।
নিবন্ধকার মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছেন, চিরায়ত সত্য বলে কি কিছু আছে? সত্যিই, আমরা মাত্র কয়েক বছর ব্যবধানেই কি অনেক পরিবর্তন দেখছি না? সাধারণ মানুষ স্থিতাবস্থার মধ্যে স্বস্তিবোধ করে। বৃহৎ শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে নিশ্চিন্ত থাকতে ভালবাসে। সমর্থনের হেতু হিসেবে নানা যুক্তি দেয়, যেগুলিকে অনেক সময় নিজেরাই কুযুক্তি বলে মানে। তবু সেই স্থির পূর্বনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে ফিরে যায়। হাতড়ে চলে সমর্থনের সপক্ষে অকাট্য যুক্তি। অনেক সময়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আবেগকে হাতিয়ার করে।
রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া
অমর্যাদা
আমার ভাগ্নির পাকা দেখা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। পাত্রপক্ষের দশ জন এসেছিলেন। ভাগ্নি এমএসসি থার্ড সিমেস্টারের ছাত্রী। পাত্র ও পাত্রপক্ষ তাকে নানা প্রশ্ন করেছিলেন। ভাগ্নি উত্তর দেয়। ওঁরা খুশি হয়ে ভাগ্নিকে বধূরূপে বরণ করার কথা দেন। ঠিক হল, ৮ মার্চ নারী দিবসে বিয়ে হবে। সবাই খুশি। কথা ছিল, পর দিন পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে লোক এসে ভাগ্নির রক্ত নেবেন পরীক্ষার জন্য। কেউ এলেন না। ভগ্নিপতি পাত্রের বাবাকে ফোন করতে তিনি জানালেন, “পাত্রী পছন্দ নয়।” এ ভাবেই কি নারীর মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হবে?
তপন কুমার দলুই, আমদানি, পূর্ব মেদিনীপুর