—ফাইল চিত্র।
‘বারণাবত’ (১৪-২) সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহ নতুন কিছু নয়। যদিও ভূমি সংস্কার প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে সাফল্য লাভ করেছে, জমিদারি প্রথার বিলোপ হয়েছে, কিন্তু পাট্টাদার বা বর্গাদারদের বেশির ভাগই মহাজনদের দাদনের উপর নির্ভরশীল। ভারতীয় সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪ সংশোধনের পরে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা চালু হল এবং ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্টের আমলে অনেক আশা নিয়ে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পরিকাঠামো স্থাপিত হল। প্রথম দিকে যখন সরাসরি পঞ্চায়েত স্তরে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ পৌঁছনোর প্রক্রিয়া শুরু হল, তখন পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মতামত নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের রূপায়ণে ব্রতী হয়েছিলেন। ১৯৮৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচন অবধি বেশ চলছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস তাদের গ্রাস করল। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরোক্ষ প্ররোচনা একে ত্বরান্বিত করেছিল। শাহজাহানের মতো নেতাদের আবির্ভাব তথা এলাকার দখলদারি, সাধারণ মানুষকে পদতলে রাখার সংস্কৃতি শুরু হল। শাহজাহান একটি উদাহরণ মাত্র।
ধীরে ধীরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার দখল নিল এই ধরনের লোকেরা। রাজনৈতিক নেতারা এলাকার দায়িত্ব এই সব প্রভাবশালীর উপর ন্যস্ত করে নিশ্চিন্ত হলেন। আর প্রশাসন তথা পুলিশের ওই সমস্ত এলাকার ক্ষমতাশালীদের কেশাগ্র স্পর্শ করার দুঃসাহস দেখানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ল। যাঁরাই ব্যতিক্রমী হতে চেয়েছেন, তাঁদের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। শাসক দলের মদতে পুষ্ট না হলে শাহজাহানের মতো দুর্বৃত্তদের পক্ষে এলাকার দখল নেওয়া, এবং বেপরোয়া ক্ষমতার আস্ফালন প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে একটি আপ্তবাক্য মনে রাখতে হবে— বেশির ভাগ সাপুড়ে সাপের কামড়ে মারা যান।
এ ভাবে একটা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলতে পারে না। এখনও সুবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু রাজনৈতিক নেতা সব দলেই আছেন। তাঁরা এগিয়ে এসে হাল না ধরলে মাফিয়ারাজকে প্রতিহত করা অসম্ভব।
সুবীর ভদ্র, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
জতুগৃহে বাস
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকে রাজনৈতিক ‘বারণাবত’ করে তোলার দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহন করতেই হবে, সম্পাদকীয়ের শেষে উল্লিখিত এই অভিমত যথার্থ। জতুগৃহ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে মানুষদের নির্বাক হয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে, কারণ তাঁদের কথা তাঁদেরই নির্বাচিত সরকার শুনতে পায়নি। ক্ষমতার রং বদলে গেলেও শাহজাহানদের জতুগৃহ নির্মাণের ক্ষমতায় বাধা পড়ে না। ভোটে জেতার জন্য তাঁদেরকে দলও সহজে গ্রহণ করে। তাই যাঁকে প্রশাসন খুঁজে পায় না, তাঁর উকিল আদালতে তাঁর হয়ে আবেদন করেন। তা হলে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা না থাকলেও, শাহজাহানের মতো দুর্বৃত্তেরা নিরাপদে থাকেন। বা বলা উচিত, তাঁদের নিরাপদে রাখা হয়। ঘটমান এই সব পর্ব থেকে পরিষ্কার যে, সন্দেশখালির মানুষ নিরাপদে নেই। তবু সন্দেশখালির মানুষজন রুখে দাঁড়ানোর সাহস অর্জন করেছেন। তাঁদের এই সাহস যদি রাজ্যের প্রত্যন্ত নানা গ্রামাঞ্চলে শাহজাহানদের বাড়বাড়ন্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহায্য করে সাধারণ নাগরিককে, তা হলে তা রাজ্যের মানুষের পক্ষে একটি যথার্থ মঙ্গল বার্তা বহন করবে। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তা স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে।
পাঠক মিত্র, কলকাতা-৩৪
গোপন শর্ত
নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত। নির্বাচনী বন্ড অনেকটা ফিক্সড ডিপোজ়িটের মতো। যাঁরা চাঁদা দেন, তাঁরা জানেন কয়েক বছরের মধ্যেই বিনিয়োগ করা টাকা কয়েকশো গুণ বেশি ফেরত পাওয়া যাবে। অলিখিত শর্ত এটাই থাকে, তা না হলে খামোকা কেন ব্যবসায়ী বা অন্যান্যরা রাজনৈতিক দলের তহবিল ভারী করতে যাবেন?
যাঁরা চাঁদা দেন, তাঁরা পরিচয় গোপন রাখেন। কেননা, তাঁরা তো কোনও আদর্শকে চাঁদা দেন না, চাঁদা দেন নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। পরিচয় প্রকাশ পেলে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, তখন তো লেজেগোবরে হয়ে যেতে হবে। গোপনে সাহায্য অবশ্য এতে বন্ধ হবে না। কেননা, কৌটো নাড়িয়ে আর কুপন কেটে এই বিশাল ভোটযজ্ঞ যে উতরে দেওয়া যায় না, নেতাদের থেকে সেটা আর কে বেশি ভাল বোঝে?
অরূপরতন আইচ, কোন্নগর, হুগলি
দেবস্থান
‘দেবতা নাই ঘরে’ (১৫-২) সম্পাদকীয় সময়োপযোগী। শুভবোধসম্পন্ন নাগরিকেরা ধর্মসাধনা বা ধর্মবেদনার ঊর্ধ্বে উঠে, নির্বাচন-পূর্ববর্তী ভোটব্যাঙ্ক-সেবার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবেন, পথে নামবেন, এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে। দেবতার স্থান মন্দিরে মসজিদে গির্জায় হয় না। দেবতা আছেন মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, যেখানে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে চাষি ফসল ফলাচ্ছেন। গৃহহীন শ্রমিক শ্রেণি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের বাসস্থানের সংস্থান করছেন, অথচ তাঁদের মাথার উপর ছাদ নেই। অপর দিকে, ভোটবাজারের বেসাতিরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মন্দির-মসজিদ বানাচ্ছেন। দৃষ্টিনন্দন দেবতার ঘর তৈরি হচ্ছে। রামমন্দির নির্মাণে কেন্দ্রের শাসক দল খরচ করেছে ১৮০০ কোটি টাকার বেশি। এই টাকায় দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শৌচাগার বানানো যেত। উন্নত মানের মিড-ডে মিল ছোটদের দেওয়া যেত। আসলে, ছোটদের স্বাস্থ্য, পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ভোটব্যাঙ্ক ভরাতে বেশি আগ্রহী সব দল। প্রবন্ধে উল্লিখিত হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নয়নাভিরাম জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে, এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই সমুদ্রশহরে একটি মসজিদও তৈরি হওয়ার কথা চলছে। পুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিঘাকে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের ভাবনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখে আসছি দিঘার সৌন্দর্যের টানে সমুদ্রশহর সর্বদাই কল্লোলিনী। পর্যটকদের খামতি এখানে দেখা যায় না। আসলে, ভোট বড় বালাই। জেলার জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দের দাবিতে মসজিদের জন্য নাকি জমি প্রদান করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই বিপুল কার্যক্রমের জন্য সরকারি কোষাগারের কতটা ক্ষতি হবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
প্রবীর কুমার সরখেল, পশ্চিম মেদিনীপুর
ক্ষতচিহ্ন
স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘বোকার মতো প্রশ্ন’ (৫-২) প্রবন্ধ পড়লাম। বয়স ষাট পেরিয়েছে, তাই অনেক কষ্টে উত্তেজনাটা কমালাম। পড়তে পড়তে বার বার যেন নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। বাংলাতেও কি রাম রহিমের ডেরা চালু হয়ে গিয়েছে? তা হবে না-ই বা কেন? চার পাশে দেখছি, ক্লাব-সংগঠনগুলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাট্টার মালিক, নয়তো প্রমোটার, যারা প্রতি দিন পুকুর বুজিয়ে ফ্ল্যাট বানাচ্ছে, তাদেরই মঞ্চে তুলে, সমাজসেবী সাজিয়ে, অঢেল প্রশংসা করছে। বিনিময়ে তারা মোটা টাকা বকশিশ পাচ্ছে। পরিবেশ গোল্লায় যাক। আর এ কথা কাগজে ছাপলে, সাংবাদিককে হুমকি শুনতে হবে। রিপোর্টার তো তাঁর পেশার কাজ করছেন। সমাজের ক্ষতচিহ্ন তুলে ধরা যদি অন্যায় হয়, তবে এই ক্ষত এক দিন ঘা হয়ে ক্যানসারের আকার নেবে। কেটে বাদ দিয়েও বাঁচানো যাবে না। একটা ক্ষতের জন্য সারা শরীরটাই বরবাদ হয়ে যাবে।
হামলাকারীদের উদ্দেশে বলতে চাই, অস্ত্রের চেয়ে কলমের শক্তি অনেক বেশি।
স্বপন কুমার ঘোষ, মধ্য ঝোড়হাট, হাওড়া