Economy

সম্পাদক সমীপেষু: অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সত্যিই ফ্রিডম্যান, কেনস, বা তৎপরবর্তী যুগ পেরিয়ে নব্য উদারবাদ আজ কঠিন প্রতিস্পর্ধার সম্মুখীন। তাবড় পণ্ডিতরা অনেক নিদান দিচ্ছেন, তার কোনওটাই কাজে আসছে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৩১
Share:

সার্বিক ভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, হয়তো বা ভয়াবহও। প্রতীকী ছবি।

সুগত মারজিতের ‘উন্নত বিশ্বের উভয়সঙ্কট’ (১২-১২) শীর্ষক প্রবন্ধ পড়ে জানলাম, বুঝলাম এবং মুগ্ধ হলাম। কত জটিল অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও বিশ্লেষণকে কত সহজ ভাবে উপস্থাপন করা যায়, এটি তার একটি প্রকৃষ্ট নিদর্শন। চাহিদা ও জোগানের যে প্রচলিত ধারণা মূল্যমান নির্ধারণের ক্ষেত্রে, আজ তা সবই প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধ, তেলভিত্তিক ডলার অর্থনীতি, সব অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে। সমস্যার বীজ আসলে লুকিয়ে আছে নব্য উদারবাদী তত্ত্বের বিশ্বায়ন ও লাগামছাড়া উদারীকরণের মধ্যেই। এখন সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি বা সঙ্কোচন কোনওটাই আর কাজে আসছে না। আবার এই ফাঁকেই উন্নয়নশীল দেশগুলির অবস্থা উন্নত দেশগুলির চেয়ে বেশি স্থিতিশীল থাকায় তারা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

Advertisement

সত্যিই ফ্রিডম্যান, কেনস, বা তৎপরবর্তী যুগ পেরিয়ে নব্য উদারবাদ আজ কঠিন প্রতিস্পর্ধার সম্মুখীন। তাবড় পণ্ডিতরা অনেক নিদান দিচ্ছেন, তার কোনওটাই কাজে আসছে না। উন্নত দুনিয়াকেই এই উভয়সঙ্কট থেকে বার হওয়ার পথ খুঁজে পেতে হবে, কারণ বিপদটা দেখা যাচ্ছে তাদেরই বেশি। তবে পিছিয়ে থাকা দেশের মানুষ হিসাবে ভয়টা আমাদেরও যথেষ্ট বেশি। কারণ দেখা গিয়েছে, তথাকথিত উন্নত দেশগুলো নিজেদের পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য যে নতুন প্রযুক্তি বা তত্ত্বের প্রয়োগ করে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই। আমাদের রক্ত চুষেই ওরা সমৃদ্ধ হয়। কাজেই সার্বিক ভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, হয়তো বা ভয়াবহও।

আশিস সেনগুপ্ত, কলকাতা-৩৭

Advertisement

বিচারে ভরসা

‘আশঙ্কা ও প্রশ্ন’ (১২-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে এই চিঠি। আমরা তিন ভাই-বোনই স্নাতক। টেট পরীক্ষায় বসে আমাদের চাকরি হয়নি। প্রথমে খুব খারাপ লাগত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসায় এখন নিজেদের নিয়ে গর্ব বোধ করি। কারণ, আমরা কেউ-ই অর্থ দিয়ে চাকরি কিনিনি। ওই দিনের সম্পাদকীয়তে মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিয়োগ-দুর্নীতি বিষয়ে নানা উক্তি নিয়ে উঠে এসেছে এই প্রশ্ন— “বিচারপতির আসনে বসে কি আপন শব্দ, বাক্য এবং ভাষাভঙ্গিকে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত রাখাই কাম্য নয়?” ভারতীয় গণতন্ত্রের বড় ভরসা ভারতের বিচারব্যবস্থা। আমরাও তাতেই ভরসা রাখি।

কলকাতা হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নির্বাহে এলে আমাদের সামনে আশার আলো ফুটে উঠেছে। অনেকেই নিজের হকের চাকরিটি পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিচারপতিও এক জন রক্তমাংসের মানুষ। তিনি যদি এই ধরনের অভিযোগ এবং তার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করতে গিয়ে কঠোর কোনও বাক্য বলে থাকেন, তবে তাতে দোষ দেখি না। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বার বার জানিয়েছেন, তিনি এই দুর্নীতির শেষ দেখে ছাড়বেন, অন্যায়কারীরা কেউ পার পাবে না। এক জন বিচারপতির এমন কথা বলার একশো শতাংশ অধিকার রয়েছে বলে মনে করি।

২০১৬ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সম্পূর্ণ তালিকাই বাতিল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে মাননীয় বিচারপতি বলেছিলেন, “ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।” তাঁর আরও বক্তব্য ছিল, “পুরো প্যানেল যে-দিন বাতিল করব, সে-দিন ঢাকি শব্দের অর্থ বোঝাব।” সেই ঢাকি এক দিন সামনে আসবেই। কিন্তু সেখানেই যেন সব থেমে না যায়। এক জন মানুষও বঞ্চিত থেকে গেলে পুরো কাজটিই হবে পণ্ডশ্রমমাত্র। তা আটকাতে বিচারপতির ওই উক্তিগুলি নিঃসন্দেহে অপরাধীদের মনে ভীতির সঞ্চার করবে।

একটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য কেবলমাত্র সেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়াই যথেষ্ট। শিক্ষার হাল এ রাজ্যে যে ভাল নয়, তা তো ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কোনও আপস চলে না। দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষকদের হাত থেকে এই কঠিন সময়ে দেশকে বাঁচাতে একমাত্র আদালতই পারে। যাঁরা টাকার বিনিময়ে শিক্ষক হয়ে বসেছেন, তাঁদের দিয়ে আর যা-ই হোক, আদর্শ চরিত্রের মানুষ তৈরি হতে পারে না। তাই দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালকেই ভাল মনে করি।

প্রদ্যুৎ সিংহ , অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

যুদ্ধক্ষেত্র?

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যবাসীর বিস্ময়ের পর্ব শেষ না-হতেই আর এক নতুন বিস্ময় সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমাদের দুয়ারে হাজির। ‘শাঁখা-নোয়া খুলে পরীক্ষা, বিক্ষোভ’ (১২-১২) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। সত্যিই তো, গত ১২ ডিসেম্বর রাজ্য জুড়ে ১৪৬০টি টেট পরীক্ষা কেন্দ্রে যেন যুদ্ধেরই আবহ! নিকটবর্তী পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। যেন কার্ফু জারি হয়েছে। দুর্নীতি আটকাতে ও সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে পর্ষদের পক্ষ থেকে এ-হেন আয়োজনে সাধারণ ভাবে কোনও উষ্মা প্রকাশের কারণ থাকার কথা নয়। তবুও প্রশ্ন, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ক্ষোভের আবহ তৈরি হল কেন?

প্রথমত আমাদের জানা নেই, পরীক্ষা দিতে হলে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে হাতের শাঁখা-নোয়া, গয়না, নাকছাবি খুলে রাখতে হবে কেন? পরীক্ষার সময়ের অনেকটা আগেই ঢুকতে হবে পরীক্ষার্থীকে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও পরীক্ষার্থীরা এসেছেন। হয়তো না-খেয়ে সাতসকালেই বেরিয়েছেন তাঁরা। মোবাইল-ব্যাগপত্র নিয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধ যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু খাবার ও পানীয় জল নিয়েও ঢোকা চলবে না! হলের বাইরে খাবারটা খেয়ে নিতেও নিষেধ! দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন থেকেই গেল, ঠিক কী কারণে শাঁখা-নোয়া-নাকছাবি নিয়ে আপত্তি? এগুলো পরে ঢোকার ক্ষেত্রে যদি আপত্তির কারণ থাকেও, তা হলেও আগেভাগে পর্ষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা হয়নি কেন? অ্যাডমিট কার্ডেও তো লিখে দেওয়া যেত বিধিনিষেধগুলি। যে সব পরীক্ষা কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তন ঘটেছে, তা-ও তো অজানা থেকে গেছে পরীক্ষার্থীদের। যথাযথ ভাবে তা-ও জানানো হয়নি। ফলে শেষ মুহূর্তে হয়রানি এড়ানো যায়নি।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

দুর্নীতির পথ

‘চারতলা বাড়ি, তবু নাম আবাস যোজনা প্রকল্পে’ (১২-১২) শীর্ষক খবর দেখেই এই চিঠি। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের কেশপুরে প্রাসাদোপম চারতলা বাড়ির মালিক শাঁকারি ১ পঞ্চায়েত উপপ্রধান জাহাঙ্গির শেখের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে। তাঁর পরিবারের চার জনের নামও রয়েছে এই প্রকল্পে। পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানদের এ রকম কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হওয়ার ঘটনা একের পর এক শোনা গেছে।

এ ধরনের ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ রাজ্যের সমস্ত জেলায়, তার কতটুকু খবরই বা আমাদের গোচরে আসে? আমপানের পর গৃহহীন মানুষের জন্য প্রেরিত ত্রাণ ও ঘর তৈরির টাকা চলে গিয়েছিল তৃণমূল নেতাদের পকেটে। অসহায় মানুষগুলো থেকে গিয়েছিলেন সেই সর্বহারা হয়েই। বিরাট অট্টালিকা থাকার পরেও হতভাগ্য গরিব মানুষদের বঞ্চিত করে সরকারি প্রকল্পের এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা নিতে হবে, এতটাই লোভ শাসক দলের নেতাদের?

সততার প্রতীককে সম্বল করে ক্ষমতায় আসা দলের এই মর্মান্তিক পরিণতি কেন? আসলে দলের শীর্ষস্থানীয়দের একাংশ আজ দুর্নীতির পারাবারে ভেসে গেছে। তাই নিচু তলার কর্মীদের সংযত রাখার নৈতিক অধিকার তাঁরা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই যে যেমন পারো লুটে নাও— এই বার্তা যেন সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement