Corona virus

সম্পাদক সমীপেষু: টিকা নিয়ে ধন্দ

সাধারণ মানুষ ক’জনই বা এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণার ফলাফল ও প্রোটোকলে পরিবর্তনের হদিস রাখেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২১ ০৪:২৭
Share:

‘নয়া নীতি, সুস্থ হয়ে তিন মাস পরে টিকা’ (২০-৫) সংবাদটি পড়লাম। ঠিক তার আগের দিনই জানা গিয়েছিল ‘কোভিড হলে ন’মাস পরে টিকা’ (১৯-৫)। আবার তার দিনকয়েক আগে সরকারি অধিকর্তারা বলেছিলেন, যাঁরা এক বার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের টিকা নেওয়ার সময়ের ব্যবধান রাখতে হবে ছ’মাস। কেবল তা-ই নয়, প্রথমে কোভিশিল্ড টিকাটি প্রথম ডোজ় নেওয়ার এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছিল। পরে সেটিকে বাড়িয়ে ৬-৮ সপ্তাহ, এবং সর্বশেষ নির্দেশ অনুসারে ১২-১৬ সপ্তাহ সময়ের ব্যবধান রাখতে বলা হয়েছে (‘ব্যবধান কমাল ব্রিটেন, ফের প্রশ্নে কোভিশিল্ড’, ১৬-৫)। সবটাই নাকি করোনাভাইরাস নিয়ে উন্নত গবেষণার ফল।

Advertisement

সাধারণ মানুষ ক’জনই বা এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণার ফলাফল ও প্রোটোকলে পরিবর্তনের হদিস রাখেন? প্রচারমাধ্যমে যখন তাঁরা জানতে পারেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুসারে কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের সর্বাধিক ব্যবধান ১২ সপ্তাহ, তখন চিন্তায় পড়েন মানুষ। প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তার আবহ সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় কত মানুষ অসহায়ের মতো মারা যাচ্ছেন, তার ঠিকঠাক হিসেবও রাখা যাচ্ছে না। দেশের স্বাস্থ্যনীতি চিন্তক ও তাঁদের কর্মধারা বিষয়ে গভীর অনাস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। কে বলতে পারে, দেশের মানুষের প্রাণরক্ষার কর্মসূচিতে বার বার সময়সীমা বাড়িয়ে সরকারি সীমাবদ্ধতাকে বিজ্ঞানের মোড়কে চালানো হচ্ছে কি না। পাশ নম্বর কমিয়ে পরীক্ষার ফল ভাল দেখানোর প্রচেষ্টা হলে আরও অনেক প্রাণের মূল্য দিতে হবে জাতিকে।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

Advertisement

প্রতিবন্ধীর দাবি

কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি করতে গিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল। কর্তৃপক্ষ জানালেন, রোগীর যে হেতু ‘ডাউন সিনড্রোম’ আছে, তাই স্বাস্থ্য ভবন থেকে বিশেষ কাগজপত্র লাগবে। ফলে আরও দু’দিন শ্বাসকষ্ট সহ্য করতে হল প্রতিবন্ধী রোগীকে। দিল্লি থেকে খবর এল, বছর পঁচিশের সেরিব্রাল পলসি-আক্রান্ত এক তরুণের মা-বাবা দু’জনেই কোভিডে মারা গিয়েছেন, তাঁকে দেখাশোনা করার কেউ নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে এমন হলে কারা দেখবে, তা নিয়ে সরকারের বিজ্ঞপ্তি আছে। কিন্তু বয়সে সাবালক হয়ে গেলেও যে সকল প্রতিবন্ধীর বিশেষ দেখভাল লাগে, তাঁদের জন্য কোনও নির্দেশ নেই। ফলে এগিয়ে আসতে হল অসরকারি সংস্থাগুলিকে। সারা দেশ থেকে দৃষ্টিহীন মানুষরা জানাচ্ছেন টিকা পেতে তাঁদের অসুবিধার কথাগুলি। ভারত সরকার কোভিড সংক্রান্ত যে সকল ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরি করেছে, কোনওটাই দৃষ্টিহীন মানুষরা তাঁদের বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্যে ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে অন্যের সহায়তা ছাড়া তাঁদের পক্ষে টিকা নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

কেরল ছাড়া আর কোনও রাজ্যের সরকার শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ-এর কোভিড হেল্পলাইন চালু করেনি। বধির মানুষদের জন্য তাই কোভিড-সংক্রান্ত সব তথ্য এখনও অধরা। তা ছাড়া লকডাউন ওঠার পর যে ট্রেনগুলি চালু হল, প্রত্যেকটিতেই ‘স্পেশাল’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাড়ার ছাড় তুলে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সব প্রতিষ্ঠান অতিমারি চলাকালীন প্রতিবন্ধীদের সহায়তার প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দিলেও, ভারত সরকার কোনও রকম পদক্ষেপ করেনি।

শম্পা সেনগুপ্ত, শ্রুতি ডিসেবিলিটি রাইটস সেন্টার

প্রাণীদের যত্ন

অতিমারির আবহে আমরা নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত যে, অন্য প্রাণীদের নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ নেই। এই গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে পশুপাখিদের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে লকডাউন। মানুষ আর সে ভাবে বাইরে বার হচ্ছেন না। এর ফলে পশুপাখিদের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষত শহরের পশুপাখি তাদের দৈনন্দিন খাবারের জন্য মানুষের উপরেই নির্ভরশীল। গত বছর লকডাউনের সময়েও তাদের দুর্দশার দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। সবার কাছে অনুরোধ, আমরা প্রত্যেকে বাড়ির সামনে কিছু খাবার ও জলের পাত্র বসিয়ে মানবিকতার নিদর্শন রাখি। বিষয়টি প্রশাসনের সামনেও তুলে ধরছি।

সৌরভ মালিক, বিষ্ণুপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

স্কুলেই ভাল

স্কুলগুলিকে সেফ হোম করার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক (‘বন্ধ স্কুলেও সেফ হোম’, ১৯-৫)। বিভিন্ন জেলাতে কোভিড সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে বেড নেই। তাই স্কুলগুলিকে সেফ হোম করা হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকার হয়। বর্তমানে স্কুল বিল্ডিংগুলিতে বিদ্যুৎ এবং জলের সুব্যবস্থা আছে। তাই সেফ হোম করার জন্য যেটুকু ব্যবস্থা করা দরকার, তা করে দেওয়া হোক দ্রুত। এতে এক দিকে যেমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা সচল থাকবে, অন্য দিকে সংক্রমণ-জনিত প্রাণহানি আটকানো যাবে।

সৌগত কাঞ্জিলাল, রামপুর, বাঁকুড়া

মানবিক

করোনায় মৃত্যু হলে মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিরাচরিত প্রথামাফিক মৃতদেহের সৎকার করাও যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি তত্ত্বাবধানে সৎকার সম্পন্ন করা হচ্ছে। যেখানে মৃতের পরিবারের লোকজন উপস্থিত থেকে শেষ শ্রদ্ধাটুকুও জানাতে পারছেন না। আমরা গণচিতা, গণকবরের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। দেখছি নদীর জলে দেহ ভেসে যাওয়ার দৃশ্যও। এই ঘোরতর অন্ধকারে সামান্য স্বস্তির সন্ধান পাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা পুরসভা পরিচালিত মহাশ্মশানে দাহ হওয়া করোনায় মৃতদের আত্মীয়-স্বজনরা। সেখানে কর্মরত চার জন মরদেহ সৎকার কর্মী (ডোম) রমেশ মল্লিক, রাজা মল্লিক, সঞ্জিত মল্লিক এবং নন্দ মল্লিক কোভিড-মৃতদের দেহ দাহ করার জন্য চুল্লিতে তুলে দেওয়ার আগে দেহগুলির উপর ফুল এবং মালা রেখে পরম যত্নে তাঁদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন (‘মৃতদের ফুল দিচ্ছেন ওঁরাই’, ১৭-৫)। দাহকর্ম শেষ না-হওয়া পর্যন্ত দঁাড়িয়ে থাকছেন চুল্লির পাশে। ফুল-মালা কেনার জন্য যে খরচ পড়ছে, তার পুরোটাই বহন করছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে দু’জন আবার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত ঠিকা কর্মী। সকলেই যখন স্বার্থচিন্তায় মগ্ন, তখন তাঁরা যে মহত্ত্বের পরিচয় দিচ্ছেন, তা অনুসরণের যোগ্য।

হারান ভৌমিক , বীরনগর, নদিয়া

পল্লি চিকিৎসক

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাজে লাগাতে চেয়েছে জেনে ভাল লাগল। একেবারে গ্রামীণ স্তরে তাঁদের কাছেই প্রথম রোগীরা আসেন। তার পর তেমন বুঝলে তাঁরা হাসপাতালে রেফার করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রশিক্ষণ তো থাকতেই হবে। এখন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে দেখে সরকার তাঁদের প্রশিক্ষিত করে করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর নজরদারি করার কাজে নিযুক্ত করতে চাইছে। কিন্তু এই কাজ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই মুহূর্তে গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে না আছে পিপিই কিট, না আছে করোনা মোকাবিলার আধুনিক যন্ত্রপাতি। তাই আগে তাঁদের সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁদের অনেককে ইতিমধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে ঠিক‌ই, কিন্তু প্রায় সব জায়গায় তাঁদের বাড়ি এবং চেম্বার একেবারে লাগোয়া। তাই টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কথাও ভাবা উচিত ছিল।

শঙ্খ অধিকারী, সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement