—ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি রাজ্যের দু’টি পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দু’টি বিপরীত চিত্র চোখে পড়ল। প্রথমটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁর কাছে অবস্থিত বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য বা পারমাদন ফরেস্ট, যার প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০০ টাকা। বিনিময়ে কী পান পর্যটকরা? প্রায় গোল করে ঘিরে থাকা নিবিড় জালের বাইরে দিয়ে সাড়ে তিন কি চার কিলোমিটার ক্লান্তিকর পদচারণা! সম্পূর্ণ জঙ্গলটাই রয়ে গিয়েছে যার ভিতরে। যেটুকু চোখ যায়, গাছগুলির ছোট-বড় গুঁড়ি নজরে পড়ে। হরিণদের (বনকর্মী কর্তৃক খাবার দেওয়ার সময়টুকু বাদ দিলে) দেখা তো কার্যত অসম্ভব। প্রশ্ন হল, ঢেকে রাখা দ্রষ্টব্যের জন্য পর্যটকদের এত পয়সা খরচ করে টিকিট কাটতে হবে কেন? টিকিটের মূল্য একটু বাড়িয়ে ইলেকট্রিক বা ব্যাটারিচালিত চার চাকার গাড়িতে প্রশিক্ষিত বনকর্মীর নেতৃত্বে জালের ভিতরে জঙ্গল ভ্রমণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তবে যে কোনও স্থান পর্যটকদের জন্য একেবারে উন্মুক্ত করে দিলে বিপদও হতে পারে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল চুপির চর। পোশাকি নাম কাষ্ঠশালী পাখিরালয়। ঠিকানা পূর্বস্থলী, পূর্ব বর্ধমান। আজ থেকে দশ-বারো বছর আগে যখন যাই, নিশ্চুপ নিরিবিলি চুপিকে নিবিড় করে পাই। হাতেগোনা পনেরো-বিশটি নৌকা ও কেবলমাত্র পক্ষিপ্রেমিক পর্যটকদের আনাগোনায় চুপচাপই ছিল চুপি। গত বছরে দেখলাম আগের সেই চুপি-কে চেনাই দায়! বেশ কয়েকটি টুরিস্ট লজ, ছোটদের জন্য পার্ক, অসংখ্য ছোট-বড় দোকান, সন্নিহিত আমবাগানগুলোতে পিকনিক পার্টির সশব্দ উপস্থিতি, সর্বোপরি আশিটিরও বেশি নৌকার হ্রদের বুক চিরে ঘন ঘন যাতায়াতে এতটুকু চুপ নেই আজ চুপি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতি দিন আট-দশ হাজার পর্যটকের পা পড়ে এখানে।
বুঝে নেওয়ার সময় এসেছে (না হলে আর কবেই বা আসবে), পিকনিক করা বা পার্কে খেলাধুলা করার জায়গা এটা নয়। আমাদের শহরে-গ্রামে প্রচুর পার্ক আছে। তার পরেও পার্ক করার জন্য চুপির চর বা পারমাদনকে বেছে নেওয়ার কি বিশেষ কোনও কারণ থাকতে পারে? যে কারণে যাচ্ছি, তা আমরা সাময়িক ভাবে বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছি। এমতাবস্থায় বনবিভাগের সদিচ্ছার উপর ভরসা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই!
অনিন্দ্য মোদক, শান্তিপুর, নদিয়া
শান্ত হিংসা
ভারতে মোট কত জন মানুষ প্রয়োজনীয় আহার পান না, তা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংখ্যার সঙ্গে ভারত সরকারের সংখ্যার যে অসঙ্গতি রয়েছে, সে প্রসঙ্গে ‘কাপুরুষের নীরবতা’ (২৬-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্প বর্তমানে ৮১ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে শস্য দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জ দেখাচ্ছে, একশো কোটিরও বেশি নাগরিক প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছেন না। এ বিষয়ে সম্পাদকীয় সঠিক ভাবেই জনগণনা না হওয়ার দিকে আঙুল তুলেছে। মনে রাখতে হবে, ওই ৮১ কোটির হিসাব করা হয়েছে ২০১১-র জনগণনার ভিত্তিতে। পরবর্তী জনগণনা যে সময় করার কথা ছিল, তার থেকে আরও দু’বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, সঠিক সময়ে জনগণনা পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা এবং ব্যর্থতার ফলে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ বিনামূল্যে রেশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অমর্ত্য সেন ক্ষুধাকে বলেছেন ‘শান্ত হিংসা’। ২০২৩ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে প্রতি চার জনের মধ্যে তিন জন এই শান্ত হিংসার শিকার। সদ্য প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের এই প্রতিবেদন মাস দুয়েক আগে প্রকাশিত ২০২৩ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের প্রতিধ্বনি, যেখানে ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এক দিকে যেমন ভারতে বেড়েছে অনাহার এবং বেকারত্ব, ঠিক তেমনই তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অসাম্য। এক দিকে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছেন না, তেমনই অপর দিকে ১০০ কোটিরও বেশি অর্থের মালিকের সংখ্যায় বহু উন্নত ধনী দেশকে ভারত পিছনে ফেলেছে।
বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে বাস করছেন ১৬৯ জন বিলিয়নেয়ার। পেট ভরে না খেতে পাওয়া দেশে, ধনী একশো-কোটিপতিদের সংখ্যা জার্মানি, রাশিয়া, ইটালি, কানাডা, গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী দেশের থেকেও অনেক বেশি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, “ভারত এক ধনী দেশ, যেখানে অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ বাস করেন।” এখন সময় এসেছে বলার যে— ভারত এক অত্যন্ত দরিদ্র মানুষের দেশ, যেখানে বহু বিলিয়নেয়ার বাস করেন, যা ভারতের ভয়ঙ্কর অসাম্য তুলে ধরবে।
২০২২ সালের বিশ্ব অসাম্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে ভারতে যে বিলগ্নিকরণ এবং বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে, তার থেকে লাভবান হয়েছেন মূলত দেশের মাত্র এক শতাংশ মানুষ এবং যার ফলে ভারতে অসাম্য আজ সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারতে সম্পদ মূলত কিছু ধনী ব্যক্তির মধ্যে কেন্দ্রীভূত। এই কারণে কোটিপতিদের উপর সামান্য কর বাড়ানোর পরামর্শ ওই প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার এই পথনির্দেশের ঠিক উল্টো দিকে হাঁটছে। ধনী ব্যবসায়ীদের লক্ষ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ সরকার চোখ বুজে মকুব করে চলেছে। অথচ অন্য দিকে, গরিব মানুষের জন্য টাকা খরচ করাকে জুমলা, রেউড়ি রাজনীতির মতো শব্দ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে উপহাসের পাত্র করে তোলা হচ্ছে। এই ধরনের কথা ভারতের সংবিধানে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার অবমাননা।
সুজিত দে, কলকাতা-১১০
নাভিশ্বাস কেন
‘শিক্ষা ঋণ শোধে নাভিশ্বাস’ (২৫-১২) শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। ব্যক্তিমানুষের হঠকারিতার দায় তাঁরই, সমাজের নয়। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে কেউ যদি ঋণ নিয়ে থাকেন; এবং পরবর্তী কালে তা শোধ করতে হিমশিম খান, তা হলে তাঁর জন্য সহানুভূতি বোধ করা অর্থহীন। অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্লেসমেন্ট এজেন্সি-র পার্থক্য বোঝেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে প্লেসমেন্টের (পাশ করার পরে ক্যাম্পাস থেকে চাকরি) প্রতিশ্রুতি পেয়েই আহ্লাদিত হয়ে ওঠেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত হন না। আর ক্যাম্পাসিং-এর চাকরি মানেই তো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিনমজুরি। সেই কারণেই ঋণ শোধ করার ক্ষেত্রে এমন নাভিশ্বাস উঠছে।
তপন পাল, কলকাতা-১৪০
‘শ্রুতিমধুর’
‘মাথার উপরে বইছে গঙ্গা, জানাবে মেট্রো-সুড়ঙ্গের নীল এলইডি আলো’ (৩-১) পড়ে জানা গেল, গঙ্গার তলদেশ দিয়ে যখন মেট্রো ছুটবে, তখন বিশেষ বাদ্যসঙ্গীত আর লেসার প্রযুক্তির আলো ব্যবহার করার পরিকল্পনা হয়েছে। তা হলে কি মেট্রো সফরের সময়টুকু ট্রেনের যাত্রীরা পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে নিয়মিত জরুরি বিজ্ঞাপনগুলো শোনার সুযোগ হারাবেন? প্রতি দিন সকাল-রাত্রি মিলিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেকের মেট্রো সফর করতে হয় আমায়। আর সেই পুরোটা সময় জুড়ে ‘শ্রুতিমধুর’ সব বিজ্ঞাপন শুনে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে। কোন গয়নার দোকানে হিরের গয়নার মজুরিতে ১০০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে, কোন সর্ষের তেল খেলে পুষ্টিলাভ হয় ইত্যাদি তারস্বরে বেজে চলে। এমনকি এক সপ্তাহ চলে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বিদায় নিয়েছে যে বাংলা ছবি, সেই ছবিও দেখতে যাওয়ার আন্তরিক আমন্ত্রণ শোনার সুযোগ হয়েছে এখানেই। কর্তৃপক্ষের কাছে নিবেদন, আগামী দিনের মেট্রোর সব ক’টি রুট এমনই ‘মধুর’ বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দেওয়া হোক।
ভাস্কর রায়, কলকাতা-৭৭