Pure Drinking Water

সম্পাদক সমীপেষু: জেনেশুনে বিষপান

প্রত্যন্ত গ্রামেও পাইপলাইনে পানীয় জল সরবরাহ হচ্ছে। ড্রামে করে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি হচ্ছে। আর্সেনিক মুক্ত জল পান করছি বলে আমরা নিশ্চিন্ত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৪:৪৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পানীয় জলে আর্সেনিকের বিষ বাড়ছে, এবং সে বিষ যে সামগ্রিক জনজীবনে মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে— এ কথা নতুন কিছু নয়, আবার কিছুটা নতুনও বটে। আশি-নব্বইয়ের দশকে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক নিয়ে অনেক হইচই হত, মাতামাতি হত। এখন এ সব নিয়ে আর তেমন শোরগোল হয় না। তার কারণ এই নয় যে, জলে আর্সেনিকের মাত্রা কমেছে। এটা হচ্ছে একপ্রকার গা-সওয়া পরিস্থিতি। জলে তো আর্সেনিক থাকবেই, কিছু করার নেই— আমরা বিশুদ্ধ পানীয় জল কিনে খাব। কিন্তু তাতে যে মুক্তি নেই তা খুব স্পষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক ভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘বিষের বিপদ’ (৩১-৫) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে।

Advertisement

প্রত্যন্ত গ্রামেও পাইপলাইনে পানীয় জল সরবরাহ হচ্ছে। ড্রামে করে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি হচ্ছে। আর্সেনিক মুক্ত জল পান করছি বলে আমরা নিশ্চিন্ত। কিন্তু চাষের জমিতে নলকূপের জলের মাধ্যমে আর্সেনিক ঢুকে পড়ছে ধান, আনাজ, মাছ মাংস দুধের মধ্যে— আমরা যাব কোথায়? এই অবস্থায় সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে “চাষে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার বহুলাংশে কমিয়ে বাড়াতে হবে সেচের জলের ব্যবহার।” কিন্তু এখানে ‘সেচের জল’ বলতে কোন জলের কথা বলা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। অনুমান করি, সেচের জল বলতে এখানে খাল-বিল নদী-নালার জলের কথা বোঝানো হচ্ছে। যদি তা-ই হয়, তা হলে সেও এক ভয়াবহ নিদান। সবুজ বিপ্লবের পরে উচ্চ ফলনশীল ধান-গম সব কিছুর জন্যই ব্যাপক হারে জমিতে জলসেচের ব্যবহার বাড়াতে হয়েছে। আশির দশক শেষ হওয়ার আগেই নদীমাতৃক বাংলার খাল-বিল নয়ানজুলি একপ্রকার হারিয়েই গিয়েছে। জলঙ্গি, ভৈরব, অজয়, আত্রেয়ীর মতো বহু নদী ক্রমশ স্রোতহীন মজা খালে পরিণত হয়েছে। অঞ্জনা, গোবরা ইত্যাদি অজস্র ছোট স্রোতস্বিনী এখন জীর্ণ কঙ্কালমাত্র। এদের মৃতপ্রায় খাত থেকে শেষ প্রাণরসটুকুও টেনে নিতে হবে? এ কেমন নিদান?

এই রকম অবস্থায় প্রকৃত নিদান হওয়া উচিত— কম সেচের জল দিয়ে, কম রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার করে কী করে উচ্চ ফলনশীল ধান-গম চাষ করা যায়, দ্রুত তার ব্যবস্থা করা। একুশ শতকে বিজ্ঞান গবেষণা প্রভূত উন্নতি করেছে, অথচ গত ৪০ বছর ধরে আমরা আবিষ্কার করতে পারলাম না অল্প রাসায়নিক দিয়ে কী ভাবে উচ্চ ফলনশীল চাষ করা যায়। যার ফলে প্রকৃতি বিরূপ হবে না, মানুষের শরীরে আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত যৌগের অনুপ্রবেশ কম ঘটবে। এ সব কথা বললে কৃষিবিজ্ঞানী-সহ এক দল মানুষ রে-রে করে ওঠেন— ১৪০ কোটি মানুষকে তো তা হলে আবার দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দিতে হয়! আগে কোনটা? পেটের ভাত, না কি পরিবেশ?

Advertisement

জানি না, এ রকম তর্কের আদৌ কোনও যুক্তি আছে কি না। সবাই জানি যে, জলই জীবন। কিন্তু সেই জল যদি মরণ ডেকে আনে? পেটের ভাত তো সবার আগে দরকার, কিন্তু অভাব আছে বলে সেই ভাতে বিষ মিশিয়ে দিতে হবে?

ইনাস উদ্দীন, কলকাতা-৩৭

বিপজ্জনক

বর্ষার শুরুতে চুঁচুড়া শহরে ঠিকমতো নিকাশি না হওয়ায় নর্দমার জল রাস্তায় জমছে। সম্প্রতি তালডাঙা থেকে কামারপাড়ার রাস্তায় পিচ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দু’-তিন দিন যেতে না যেতেই সব পাথর উঠে যাচ্ছে। জনগণের আয়করের অর্থের এ এক বিরাট অপচয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অঞ্চলটির পর্যবেক্ষণ করুন এবং রাস্তাটি যে ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করুন।

রামদাস রায়, চুঁচুড়া, হুগলি

রেলের অব্যবস্থা

গত মে মাসে কাজের সূত্রে মুম্বই যেতে হয়েছিল। যাওয়ার সময় গিয়েছিলাম হাওড়া-পুণে দুরন্ত ট্রেনের এসি কোচে, আর ফিরি সিএসএমটি-হাওড়া সাপ্তাহিক এক্সপ্রেসের স্লিপার কোচে। যাওয়ার সময় এসি কোচে মোটামুটি সুষ্ঠু পরিষেবা পাই। কিন্তু ফেরার সময় এক্সপ্রেস ট্রেনে স্লিপার কোচে দুর্বিষহ অবস্থার সম্মুখীন হই। ট্রেন যাত্রা শুরুর দু’ঘণ্টা পর থেকেই শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। রেলের অ্যাপে বা হেল্পলাইন নম্বরে অভিযোগ করে এক বারও শৌচাগার পরিষ্কার করানো গেল না। ট্রেনের প্যান্ট্রি বয়দের জানাতে, তাঁরা ‘দেখছি’ বলে দায় ঝেড়ে ফেললেন। ৪০ ঘণ্টার যাত্রায় শৌচাগারগুলি ওই রকম অবস্থাতেই রইল। একই ট্রেনে এসি কোচে যাত্রীদের এমন অসুবিধার মুখে পড়তে হয়নি। টিকেটের মূল্য আলাদা হলেও, শৌচাগার প্রতি কোচে রাখার ফলে তার পরিচ্ছন্নতার দাবি সব কোচের যাত্রীদেরই আছে। দরিদ্র মানুষ, যাঁরা স্লিপার বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভ্রমণ করেন, তাঁদের পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এমন ভেদাভেদ কেন?

তবে ট্রেন দুরন্ত হোক বা এক্সপ্রেস, এক জায়গায় সবাই এক— নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারা। আমার এই যাত্রায় ট্রেনটি প্রায় ছ’ঘণ্টা লেট ছিল। টিকিটে যে ‘সুপারফাস্ট চার্জ’ ধরা হয়, ট্রেন দেরি করার জন্য সেই বাবদ অর্থ দাবি করলে কি রেল তা ফেরত দেবে? অন্য দিকে, প্যান্ট্রি-র অনিয়ম তো রয়েছেই। রেলের নিজস্ব ব্র্যান্ডের ১ লিটার জল বিক্রি করা হচ্ছে ২০ টাকায়। যদিও বোতলের গায়ে এমআরপি লেখা ১৫ টাকা। দেশের যে কোনও দূরবর্তী প্রান্তেও কোনও জিনিসের মূল্য এমআরপি-র থেকে বেশি নেওয়া যাবে না বলেই নিয়ম। আমি এই দামের বিষয় নিয়ে তর্ক করায়, প্যান্ট্রির লোকটি বললেন, নেওয়ার হলেন নিন, না হলে নয়। প্রত্যেক ‘প্যান্ট্রি বয়’ আইআরসিটিসি-র জামা পরেছিলেন, যাতে লেখা ছিল ‘নো বিল, নো পেমেন্ট’। খাবারের দাম গুণমান অনুযায়ী যথেষ্ট চড়া আর বিল চাওয়াতে জলের মতোই একই বক্তব্য ছিল তাঁদের। দূরপাল্লার ট্রেনে বিকল্প না থাকায় অন্য যাত্রীদেরও এই অন্যায্য দাম মুখ বুজে মেনে নিতে হল। আইআরসিটিসি অনুমোদিত এই প্যান্ট্রি ভেন্ডরদের জুলুম সম্পর্কে রেল কি অবগত নয়? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, অনিয়ম বন্ধ হোক। টিকিটের মূল্যের সাপেক্ষে যেটুকু পরিষেবা প্রাপ্য, তা আন্তরিকতার সঙ্গে প্রদান করা হোক।

সুজিত সাহা, চাকদহ, নদিয়া

ভবিষ্যৎ কী

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে চলতি শিক্ষাবর্ষ‌ থেকেই চালু হয়ে গেল চার বছরের স্নাতক এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স। সেই মতো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের ভর্তি প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এই চার বছরের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রক্রিয়ার ছত্রে-ছত্রে রয়েছে বেশ কিছু প্রশ্ন। এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী, স্নাতক স্তরে এ বার থেকে শুরু হচ্ছে ‘মাল্টিপল এন্ট্রি-এগজ়িট’। অর্থাৎ, চার বছরের পাঠক্রমের যে কোনও বছরেই এক জন ছাত্র এন্ট্রি-এগজ়িট নিতে পারবে। তা ছাড়াও এক বছর কেউ স্নাতক স্তরে পড়লে সে পাবে সার্টিফিকেট। দু'বছর পড়লে ডিপ্লোমা। তিন বছরের ক্ষেত্রে শুধু ডিগ্রি। আর চার বছরে অনার্স গ্র্যাজুয়েট। এখানেই প্রশ্ন, বর্তমানে গোটা দেশে, বিশেষত রাজ্যে কর্মসংস্থানের যা হাল তাতে প্রথম বর্ষের ‘সার্টিফিকেট’ বা দ্বিতীয় বর্ষের ‘ডিপ্লোমা’ এক জন ছাত্রকে কর্মক্ষেত্রে কতটা নিশ্চয়তা দিতে পারবে? আদৌও এই ‘সার্টিফিকেট’ বা ‘ডিপ্লোমা’র কর্মক্ষেত্রে কোনও গুরুত্ব থাকবে? স্পষ্টতই, গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, উচ্চ মাধ্যমিকের পর সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীই অনার্স বা পাস কোর্সের মতো জেনারেল কোর্সগুলির তুলনায় এঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজমেন্টের মতো সরাসরি চাকরিমুখী কোর্সগুলির দিকে ঝুঁকছে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা ছাড়া শুধুমাত্র কোর্সের ধাপে ধাপে ‘সার্টিফিকেট’ বা ‘ডিপ্লোমা’ প্রদান ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা নেবে, তা নিয়ে রীতিমতো সন্দেহের অবকাশ আছে।

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement