রাজধানী দিল্লিতে দূষণমাত্রা অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় বেশি। ফাইল চিত্র।
ফি বছর অক্টোবর মাস থেকেই দিল্লির আকাশের দখল নিতে শুরু করে কালো ধোঁয়া। কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া তো আছেই, আছে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের প্রচুর ধুলোকণা। তার উপর পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের কৃষকদের নাড়া বা ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়া। এই সব কারণে দিল্লি, নয়ডা, গাজ়িয়াবাদ, গুরুগ্ৰাম-সহ নানা শহরে ভয়ঙ্কর দূষণ ছড়ায়। মিশে যায় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস। মানুষ শ্বাসকষ্টে ভোগেন। কমে যায় লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ু। পরিসংখ্যান বলছে, এমনিতেই রাজধানী দিল্লিতে দূষণমাত্রা অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় বেশি। তার উপর নানা ধোঁয়ার আক্রমণে দিল্লি শহর জর্জরিত। দিল্লি ও নয়ডার সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় দিল্লির সরকার। কিছু ক্ষেত্রে ঘর থেকে অফিস করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে একদম নয়। এর সঙ্গে যে সব কারখানা থেকে বেশি দূষণ ছড়ায়, সেগুলো আপাতত বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়েছে। ডিজ়েলচালিত ট্রাক ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে।
দিল্লির বিপদে দোষারোপ করলেই হবে না। চলবে না রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি। যে ভাবে কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া বেড়ে চলেছে, যে ভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে চলছে, ফসলের গোড়া পোড়ানো বেড়ে চলেছে, সেখানে দিল্লির মতো অবস্থা পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য রাজ্যের হতে বেশি দেরি নেই। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। লোভ কমাতে হবে। যানবাহনে বৈদ্যুতিক ও সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। ফসলের নাড়া বা গোড়া পোড়ানোর বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে। দূষণে রাজনীতি নয়। এক হতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে। আমরা চাই না দিল্লির মতো বিপদ অন্য রাজ্যে আসুক। আমরা চাই দূষণমুক্ত ভারত।
দীপংকর মান্না, আমতা, হাওড়া
অলীক সমাধান
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অতনু বিশ্বাসের প্রবন্ধ (‘ধ্বংসের দিকে ধাবমান’, ৫-১১) প্রসঙ্গে এই চিঠি। এখন খুব স্পষ্ট করে বলার সময় এসেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পুঁজিবাদই প্রধানত দায়ী। সাংবাদিক ও লেখক নাওমি ক্লেন তাঁর দিস চেঞ্জেস এভরিথিং: ক্যাপিটালিজ়ম ভার্সেস দ্য ক্লাইমেট (২০১৪) বইতে তার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, নব্য উদারনীতিবাদ ও বাজার অর্থনীতি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এই ব্যবস্থাই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকে অবারিত করেছে, অবারিত করেছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, সম্পদের পুনর্বণ্টনে সৃষ্টি করেছে বাধা। জলবায়ু পরিবর্তন যত প্রকট হচ্ছে, ততই পুঁজিবাদীরা তাকে অলীক ও আজগুবি বলে প্রচার করছে, বিপথে পরিচালিত করছে পরিবেশ আন্দোলনকে। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, জলবায়ু আন্দোলনের কর্মীদের মুখ বন্ধ করার জন্য আমেরিকান ধনকুবেরদের একটি সংগঠন ১০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে।
পুঁজিবাদীরা জলবায়ু পরিবর্তনের অলীক সমাধানও হাজির করছে মানুষের সামনে। সূর্যদেবকে ঢেকে দিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রয়োগ করা হবে সালফার ইনজেকশন, ভাবা হয়েছে সোলার রেডিয়েশন ম্যানেজমেন্টের কথা। কিন্তু এ সবে মূল সমস্যার সমাধান কিছু হবে না। বরং বিপদ আছে। এক বার সালফার ইনজেকশন দিলে তা বন্ধ করা যাবে না। বন্ধ করলে দ্বিগুণ তাপ আছড়ে পড়বে পৃথিবীতে। পৃথিবীর অন্যান্য স্থান ভুগবে বৃষ্টিহীনতায়, সমুদ্রে অম্লত্ব বাড়ার ফলে মৃত্যুর প্রহর গুনবে সামুদ্রিক প্রাণীরা। তাই ক্লেন এ সব ভাবনাকে ‘ম্যাজিক্যাল থিঙ্কিং’ আখ্যা দিয়েছেন।
দিলীপ মজুমদার, কলকাতা-৬০
দিল্লির বাতাস
দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কার্যত পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, দিল্লিতে সমস্ত প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, দিল্লির বায়ুর গুণমান স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সব বাইরের কার্যক্রম (আউটডোর অ্যাক্টিভিটি) সীমাবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল।
পরিবেশ দূষণের সমস্যা একা দিল্লির নয়, পুরো উত্তর ভারতের সমস্যা। প্রসঙ্গত, হরিয়ানা এবং পঞ্জাবে ফসলের গোড়া পোড়ানোর জন্যই দিল্লির দূষণ এতটা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য প্রত্যেক বছরই এই একই ঘটনা ঘটে। দীপাবলির পর থেকেই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ক্রমশ বেড়েছে বায়ুদূষণ। কেউ ভুগছেন শ্বাসকষ্টে, কারও চোখে সর্বক্ষণ এক জ্বালা জ্বালা ভাব। দূষণের পরিস্থিতি মারাত্মক জেনেও নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে, অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ নির্দ্বিধায় আতশবাজি পুড়িয়েছেন। প্রশাসনও গা ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছে।
দিল্লিবাসীর পক্ষে এই বাতাস শ্বাস নেওয়ার উপযোগী নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমত পরিস্থিতিতে, পৃথিবীর দ্বিতীয় দূষিততম শহরে সরকার কিছু নিয়ম চালু করেছে অবশ্য। শহরের ভিতর আপাতত বাড়ি তৈরি এবং ভাঙার কাজ বন্ধ। শহর সংলগ্ন কারখানায় কাজ বন্ধ। গ্যাসে চলে, কেবলমাত্র এমন কারখানার চুল্লিই চালানো যাবে। শহরে ঢুকতে পারবে না ডিজ়েল গাড়ি। সরকারি-বেসরকারি অফিসবাবুরা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করলে ভাল। দিল্লিতে আপাতত স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে হাইওয়ে, ওভারব্রিজ, পাইপলাইন নির্মাণ ও ধ্বংসের কাজও।
এখন প্রশ্ন হল এত ব্যবস্থা করেও কি দূষণের মাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে? যে ভাবে গাছপালা, জঙ্গল ধ্বংস করে, জলাশয় বুজিয়ে দিয়ে একের পর এক কংক্রিটের নির্মাণ হয়েছে বা এখনও হয়ে চলেছে তাতে শহরের আয়তন হয়তো ভবিষ্যতে আরও বাড়বে, কিন্তু সেই শহর কি সাধারণ মানুষের বসবাসের, নিশ্চিন্তে শ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত থাকবে? বর্তমানে শহরমুখী এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে কি এই ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে বাঁচানো আদৌ সম্ভব?
অন্য দিকে, এই দূষণের ব্যাপারে কলকাতাও কিছু কম যায় না। পরিস্থিতি এখনও দিল্লির মতো দুর্বিষহ না হলেও বাতাসের গুণমান সময় সময় এখানেও সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। শীতের ভোরে ঘন ধোঁয়াশায় এই শহরও ঢাকা পড়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, দিল্লির থেকে আমরা কি কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারব? বিভিন্ন অছিলায় নির্বিচারে আতশবাজির ব্যবহার, রাজপথে কালো ধোঁয়া বার করা গাড়ির অনায়াস যাতায়াত, সর্বোপরি, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন এবং জলাশয় বুজিয়ে শহর এবং শহরের আশপাশে কংক্রিটের বিপুল নির্মাণ— এর কি শেষ কোনও দিন হবে?
সাধারণ মানুষ যত দিন নিজে থেকে উদ্যোগী না হবে, তত দিন এই দূষণকে আমরা রোধ করতে পারব না। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতার বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে। এবং প্রশাসনকেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। তবেই হয়তো আমরা একটু নিশ্চিন্তে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারব।
সুশীলা মালাকার সরদার, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা
জঞ্জালের পথ
আমি চাঁপদানি পুরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ঘটনাক্রমে এটা এই পুরসভার চেয়ারম্যানের ওয়ার্ড। এখানে ভদ্রেশ্বর স্টেশন থেকে স্কুল আর একমাত্র কলেজে যাওয়ার রাস্তাটিকে কলেজ রোড বলে। হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তাটি স্টেশন আর বাজারে যেতে ব্যবহার করেন। অথচ, পুরো ওয়ার্ডের জঞ্জাল এই রাস্তায় জড়ো করা হয়। এত ডেঙ্গি হচ্ছে চার দিকে, পুর প্রশাসন নির্বিকার। যখন কলকাতার মেয়র রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সব কিছু তদারকি করছেন, এখানে দেখার কেউ নেই।
মানিক সেন, চাঁপদানি, হুগলি